কৃষিজমির মাটি ইটভাটায়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২৩, ৩:১৬:৩৪ অপরাহ্ন
জগতে অধিকাংশ অশান্তির মূল ধনলিপ্সা। -মুনির চৌধুরী
ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়।সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির মাটি। অনেক স্থাণে চলাচলের রাস্তা কেটে নেয়া হচ্ছে মাটি। এতে গহীন গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ে গেছে। দেখা গেছে, নদীর তীরে প্রায় ৩০ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে মাটি ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। খবরটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয় এই পত্রিকায়।
শুধু গোলাপগঞ্জ নয়, বলা যায় সর্বত্রই কৃষিজমির মাটি পুড়িয়ে ইট কৈরি করা হচ্ছে। অথচ ইটভাটার কবল থেকে জমি রক্ষার জন্য সরকার মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরিকে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু সরকারি পর্য়ায়েই মাটি কেটে পোড়ানো ইটের চাহিদা কমে নি। চাষের জমি রক্ষার জন্য ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে সারা দেশে শতভাগ সরকারি নির্মাণ, মেরামত ও সংস্কার কাজে ভবনের দেয়াল ও সীমানা প্রাচীর তৈরি, হেরিং বোন বন্ড রাস্তা ও গ্রাম্য সড়ক তৈরিতে ইটের বিকল্প কংক্রিটের ব্লক ব্যবহার করতে হবে। সরকারের বক্তব্য হচ্ছে, সনাতন পদ্ধতিতে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি করায় একদিকে কৃষিজমি ধংস হচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশের সর্বনাশ হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে,ইট ভাটার পরিবেশ দূষণ থামছে না। পরিবেশ সম্মত পদ্ধতিতে ইট পেড়ানোর সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করছে ইটভাটার মালিকেরা। কোন ধরণের অনুমতি ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসা । একটি জরিপের তথ্য হচ্ছে, দেশের ইটভাটাগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশেরই বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই। আর বৈধ ও অবৈধ ইটভাটার ৯০ শতাংশেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর অবৈধ ইটভাটার প্রায় ৯০ শতাংশ তিন ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। ৬০ শতাংশ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাগোয়া। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ অনুযায়ি সংরক্ষিত ও রক্ষিত বন, সিটি করপোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি, আবাসিক এলাকা, ফলের বাগান ও উপজেলা সদরের সীমানার তিন কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না। আইন অনুযায়ী তিন ফসলি জমি এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেও ইটভাটা করা যাবে না। ইটভাটার জন্য ফসলি জমির মাটি কাটা যাবে না। ইটভাটায় কোনোভাবেই কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো যাবে না। এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদ- বা তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি হওয়ার বিধান রয়েছে।
ইটভাটায় ইট তৈরির পূর্ণ মওসুম চলছে এখন। দেশের সর্বত্র পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে ইটভাটা ব্যবসা। এগুলোর বেশিরভাগই কোন ধরণের আইন কানুনের ধার ধারে না। তারা কাঠ পুড়িয়ে ফসলি জমির মাটি দিয়ে তৈরি করছে ইট। আর সেই ইট ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারি নির্মাণকাজেও। এই অবস্থায় প্রথমে সরকারি কাজে ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া, ইটভাটাগুলো যাতে ধীরে ধীরে মাটি পুড়িয়ে ইট তৈরি বন্ধ করে কংক্রিট ব্লক তৈরির দিকে ঝুঁকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।