নৈতিক অবক্ষয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২৩, ২:৩০:২২ অপরাহ্ন

রঞ্জিত কুমার দে
শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদ-, আর শিক্ষারূপ মেরুদ- নিজের মহিমা প্রকাশের মাধ্যমে যুব সমাজকে আলোকিত পথে পরিচালনা করে। আলোকিত যুবসমাজ জাতিকে উন্নতকরণের মাধ্যমে উৎকৃষ্ট জাতির রূপ দান করে। অর্থাৎ যুবসমাজ জাতির ভবিষ্যত। সুতরাং কোনো জাতির যুবসমাজ যদি নৈতিকতা ও মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে বিপথে ধাবিত হয়, তবে সে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত অন্ধকারাচ্ছন্ন। বিভিন্ন কারণে যুবসমাজে নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটে। বর্তমান যুবসমাজের বিপথগামিতার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে প্রযুক্তি। প্রযুক্তির আশীর্বাদ টেলিভিশন, ডিশ এন্টেনা, মোবাইল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক ইত্যাদি সমাজে যতটুকু আশীর্বাদ বয়ে এনেছে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি অভিশাপ বয়ে এনেছে তরুণদের জন্য। অশালীন ও উদ্ভট প্রকৃতির সিনেমা তরুণদের মানসিকতায় প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে উদ্ভট চিন্তাধারা, যা জীবন গঠনের ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায়।
শিক্ষাঙ্গণে রাজনৈতিক অস্থিরতাও যুবসমাজকে বিপথে পরিচালনা করে। দলের প্রভাব ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছাত্রদের মনে ক্রোধ ও লোভের জন্ম দেয়। ফলে তারা মূল লক্ষ্যকে পাশ কাটিয়ে অনর্থক কাজে উৎসাহী হয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বেকারত্ব যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের আরেকটি নিয়ামক। সমাজের অর্থলোভী কর্ণধারদের প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে তারা নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ফলে আলোকিত পথের বদলে তাদেরকে হাতছানি দেয় অন্ধকারাচ্ছন্ন মাদকের পথ। এর পরিণতিতে সমাজে সন্ত্রাস, ডাকাতি ও চাঁদাবাজির সূত্রপাত ঘটে। এছাড়াও পারিবারিক কলহ, অসৎ সঙ্গ, মিথ্যাচার ইত্যাদি যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করে।
দেশে শান্তি শৃঙ্খলার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে উন্নতির পথে পরিচালিত করতে হলে সর্বপ্রথম যুবসমাজের নৈতিক অবক্ষয় প্রতিরোধ করতে হবে। প্রযুক্তির যে অভিশাপ তরুণদের চরিত্রে প্রভাব বিস্তার করেছে, তা থেকে তাদের ফেরানোর জন্য প্রয়োজন সুস্থ বিনোদন মাধ্যম। শিক্ষাঙ্গণকে হতে হবে রাজনীতিমুক্ত। আর শিক্ষাব্যবস্থাও হতে হবে স্বচ্ছ বাস্তব জীবনসম্মত। শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বিক্রির যে মহড়া সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে, তার মোহ থেকে যুবসমাজকে মুক্ত করতে হবে এবং মেধার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে। সমাজে মাদকের অবাধ ছড়াছড়ি রয়েছে। এসব মাদকের মূলোৎপাটনের মাধ্যমে যুবসমাজকে রক্ষা করতে হবে। কারণ মাদকের অর্থের জোগান দিতেই যুবসমাজকে খুন, ডাকাতি, রাহাজানির মতো বিষয়ে জড়িয়ে পড়ে। যুবসমাজের নৈতিকতা রক্ষায় মা-বাবাকে সচেষ্ট হতে হবে, সাধ্যানুযায়ী তাদের মৌলিক চাহিদাপূরণ করতে হবে এবং শিষ্ঠাচার শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষকদেরও সঠিক শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে যুবসমাজের উন্নয়নে ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া সমাজ ও রাষ্ট্রকেও যুবসমাজের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই একটা জাতির বুকে একটি উন্নত যুবসমাজ গড়ে উঠবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।