মুজিব জন্মবার্ষিকী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৩:৫৪:১২ অপরাহ্ন
যাদের একটা গভীর অন্তর্দৃষ্টি আছে, তাদের কাছে কোনো কিছুই অদৃশ্য বা অজেয় থাকে না। -আল হাদিস
আজ ১৭ই মার্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। দিনটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হচ্ছে। যার জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হতো না, তৈরী হতোনা সবুজের বুকে লাল রক্ত খচিত পতাকা। ১৯২০ সালের আজকের এই দিনে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার নিভৃত পল্লী টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আকুতোভয় এই বাঙালির নেতৃত্বে আমাদের গৌরবের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়। তাঁরই নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারও গঠিত হয় তাঁরই নেতৃত্বে। আর এই স্বাধীন বাংলাদেশেই স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে খুন করে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী চক্র। যারা চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক, যারা চায়নি বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন বিশ্বমানের নেতার উত্থান ঘটুক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশব থেকেই অসাধারণ মেধার পরিচয় দিতে থাকেন। সততা, বলিষ্ঠতা, সাহস, ন্যায়-অন্যায়বোধ এবং গভীর দেশপ্রেম, অসাম্প্রদায়িকতা, মানুষের জন্য ভালোবাসা, ঝুঁকিগ্রহণ, নেতৃত্ব ইত্যাদি গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন তিনি শৈশব থেকেই। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পূর্বে কলকাতায়। এর আগে ১৯৪৬ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করার জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারিদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ার প্রতি কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি নেতৃত্বদানে এগিয়ে আসেন। ফলে ১৯৪৯ সালের প্রথম দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। সেসময় তিনি মুচলেকা ও জরিমানা দিয়ে ছাত্রত্ব ফিরে পেতে পারতেন। কিন্তু তিনি অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। বন্ধবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই একজন প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ হিসেবে আবির্ভূত হন। ১৯৪৯ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙ্গালীদের কার্যকর বিরোধী দল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। অথচ তখন তিনি কারাগারে বন্দী। এর আগে ১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক মাতৃভাষা আন্দোলনেও নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। এজন্য তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দী। তিনি ঐতিহাসিক ছয়দফা কর্মসূচী দিয়ে বাঙ্গালী জাতীয় চেতনায় বিস্ফোরণ ঘটান এবং সমগ্র জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৬৮ সালে ছয়দফার সঙ্গে ছাত্র সমাজের ১১ দফা কর্মসূচী যুক্ত হলে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ ঢাকার তৎকালীন ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের সেই ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। বঙ্গবন্ধুর সেই উদাত্ত আহ্বানে চূড়ান্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙ্গালীরা যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে পশ্চিমা হানাদারদের ওপর। এভাবেই নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অযুত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় হাজার বছরের কাক্সিক্ষত বিজয়।
বঙ্গবন্ধু আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন বাঙ্গালীর মুক্তির জন্য। বাঙ্গালী যাতে মাথা উঁচু করে বিশ্বের বুকে স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারে, সেই সংগ্রামেই কেটে যায় তার জীবনের স্বর্ণালী সময়। আর এজন্যই বঙ্গবন্ধু আর দশজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে পৃথক অবস্থানে রয়েছেন। আজ আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে, মহান জাতির মহান নেতা বন্ধবন্ধুর আদর্শকে অনুসরণ করে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়া। আজ জাতির পিতার জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবেও পালিত হচ্ছে। তাই প্রত্যাশা থাকবে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে। সুস্থ রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার সুবাতাস বইয়ে দিতে জাতির জনককে অগ্রপথিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়াই হবে অগ্রসর চিন্তার পরিচায়ক। কারণ সময়ের ধারাবাহিকতায় দিন দিন এই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথ ধরেই এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।