ইসলামের প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৩:৫৬:৪৪ অপরাহ্ন
আতিকুর রহমান নগরী
আদিকাল থেকেই বাংলাদেশের মাটি সুফি-দরবেশ, পীর-মাশায়েখ এবং ওলি-আউলিয়াদের ঘাটি। এদেশে আল্লাহু আকবারের সুরে সূর্য ওঠে। দিনের বিদায়লগ্নে আবারও আল্লাহু আকবারের সূরে সূর্য অস্তমিত হয়। এই দেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদান কী? এই প্রশ্নের উত্তরে সর্বাগ্রে যে উত্তর প্রদান করা হয় তা হল, তিনি ইসলামের খেদমতের জন্যই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’। ইসলামের প্রচার প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মকা- ও অসামান্য অবদান এখনো জ্বলন্ত সাক্ষী হয়ে আছে।
তিনি যেমন একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, তেমনি বাংলাদেশে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি। এ দুটি অনন্য সাধারণ অনুষঙ্গ বঙ্গবন্ধুর জীবনকে দান করেছে প্রোজ্জ্বল মহিমা।
দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং ভৌত অবকাঠামোগত পদক্ষেপ যেমন নিয়েছিলেন ঠিক তেমনি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধের কথা মনে রেখে তিনি প্রকৃত ইসলামের প্রচার-প্রসারে বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার শাসনামলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জনমানসে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে যে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন সমকালীন মুসলিম বিশ্বে এর দৃষ্টান্ত বিরল।
ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, প্রচার-প্রসার এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সামগ্রিক জীবনকে মহান ইসলামের কল্যাণময় স্রোতধারায় সঞ্জীবিত করতে ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ জারি করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বায়তুল মোকাররম সোসাইটি’ এবং ‘ইসলামিক একাডেমি’ নামক তৎকালীন দুটি সংস্থার বিলোপ সাধন করে এই ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন এখন সরকারি অর্থে পরিচালিত অন্যতম একটি বৃহৎ সংস্থা হিসেবে নন্দিত। এ প্রতিষ্ঠান থেকে এ যাবত পবিত্র কোরআনের বাংলা তরজমা, তাফসির, হাদিস গ্রন্থের অনুবাদ, রাসূল (সা.)-এর জীবন ও কর্মের উপর রচিত ও অনূদিত গ্রন্থ, ইসলামের ইতিহাস, ইসলামী আইন ও দর্শন, ইসলামী অর্থনীতি, সমাজনীতি, সাহাবি ও মনীষীগণের জীবনী ইত্যাদি নানা বিষয়ে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠান ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়সহ সারা দেশে ৬৪টি জেলা কার্যালয়, আর্তমানবতার সেবায় ২৮টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির মাধ্যমে নানামুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। বৃহত্তর কলেবরে ২৮ খ-ে ইসলামী বিশ্বকোষ, ১২ খ-ে সীরাত বিশ্বকোষ প্রকাশ করে প্রকৃত ইসলামের জ্ঞান বিতরণে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে।
ইসলামের প্রকৃত খেদমতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেকটি অসামান্য অবদান হলো সীরাত মজলিশ প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালে পবিত্র মাহে রবিউল আউয়ালে এ স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বৃহত্তর আঙ্গিকে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) মাহফিল উদযাপনের কর্মসূচী গ্রহণ করে। সরকারপ্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধু বায়তুল মোকাররম মসজিদ চত্বরে মাহফিলের শুভ উদ্বোধন করেন। সেই থেকে এখনো বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপিত হয়ে আসছে।
বঙ্গবন্ধু ইসলামের খেদমতে আজীবন নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। রাষ্ট্রপরিচালনার অল্পসময়ে তিনি ইসলামের প্রচার প্রসারে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর গৃহিত পদক্ষেপসমুহের মধ্যে ছিল মদ জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধকরণ এবং শাস্তির বিধান ছিল অন্যতম।
বঙ্গবন্ধু তাঁর শাসনামলে হজ পালনের জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করেন। পুনর্গঠন করেন বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (পূর্বে স্বায়ত্তশাসিত মাদ্রাসা বোর্ড ছিল না), ঈদে মিলাদুন্নবী (সা), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন এবং উল্লিখিত দিনগুলোতে সিনেমা হলে সিনেমা প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। আরব-ইসলাঈল যুদ্ধে আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন ও সাহায্য প্রেরণ করেন। বিশ্ব এজতেমার জন্য টঙ্গিতে সরকারি জায়গা বরাদ্দ দেন এবং কাকরাইলের মারকাজ মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য জমি বরাদ্দ দেন। রেসকোর্স ময়দানের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন। রাশিয়াতে প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন।
ইসলামের প্রকৃত পরিচর্যাকারী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁরই যোগ্য উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবারও উদার মুসলমান। প্রকৃত ইসলাম ধর্মের প্রচার প্রসারে কাজ করে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে ইসলামের নামে ইসলামের লেবাসধারী জঙ্গি গোষ্ঠীর অপকর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
লেখক: আলেম, সাংবাদিক