‘মাত্র ১ কিলোমিটার নদী খনন হলে লাগবে না ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ’
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৪:২৮:০২ অপরাহ্ন
জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা :
মাত্র এক কিলোমিটার নদী খনন করা হলে ৮ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধ সংস্কার কিংবা নির্মাণ প্রয়োজন হবে না। এতে করে শতকোটি টাকার বোরো ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
বুধবার বিকেলে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের নলুয়ার হাওরের ভুরাখালি গ্রামে বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করতে গেলে স্থানীয় কৃষক ও হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির লোকজন এমন দাবি জানান।
কৃষকরা জানান, নলুয়ার হাওরের ভূরাখালি থেকে হান্দুয়াবিল পর্যন্ত এক কিলোমিটার নদী খনন করা হলে প্রতি বছর ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে না। ফলে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হবে এবং পাশাপাশি অকাল বন্যার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে। এসময় প্রতিমন্ত্রী তার সঙ্গে থাকা পাউবোর কর্মকর্তাদের নদী খননের বিষয়টি নোট করার জন্য নির্দেশ দিয়ে এটি বাস্তবায়নে আশ্বাস দেন স্থানীয়দের।
পরিদর্শনকালে মন্ত্রী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, আগামী বছরের আগে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার ১৯টি নদী খনন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে হাওরবাসীর ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার হাওরের বাঁধের কাজ ভালো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
হাওরপারের লোকজন জানান, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া-হলদিপুর, কলকলিয়া, রানীগঞ্জ, জগন্নাথপুর পৌরসভা ও দিরাই উপজেলার একাংশের মানুষ নলুয়ার হাওরে প্রতিবছর এক ফসলা বোরো ফসল চাষাবাদ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। এই ফসলের ওপরই সারা বছরের খাবারের যোগান দেয়। ফসলডুবির ঘটনা ঘটলে বছর জুড়ে অভাব অনটন আর দুঃখ কষ্টে কাটে হাওরের মানুষের।
ভুরাখালি গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, নলুয়া হাওরের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া কামারখালি নদীর ভুরাখালি গ্রামের দক্ষিণ অংশ থেকে দিরাইয়ের হান্দুয়ার বিল পর্যন্ত এই এক কিলোমিটার নদী খনন করা হলে নলুয়া হাওরে ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রয়োজন হবে না। কারণ, নদীতে পানি ধারণ ক্ষমতা থাকবে। এতে করে নলুয়া হাওরের শতকোটি টাকার বোরো ফসল অকাল বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
স্থানীয় ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য রনধীর কান্ত দাস নান্টু বলেন, জগন্নাথপুর ও দিরাই এই দুই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে কামারখালী নদী বয়ে গেছে। নদীটি নাব্যতা হারানোর ফলে পানির ধারণ ক্ষমতা কমেছে। এ নদীতে এক কিলোমিটার খনন করা হলে দুই উপজেলার লাখো কৃষক উপকৃত হবেন। নদীর দুই পাশেই দুইটি বড় হাওর রয়েছে।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব অমিত দেব বলেন, জেলার অন্যতম হাওর হচ্ছে নলুয়ার হাওর। অকাল বন্যার কবল থেকে ফসলরক্ষা দীর্ঘদিন ধরেই কৃষকরা নদী খনেন জন্য দাবি উঠেছে। প্রতিমন্ত্রী হাওর পরিদর্শন এলে আমরা বিষয়টি তার নজরে এনেছি। দাবি জানিয়েছি, ভুরাখালি থেকে হান্দুয়া পর্যন্ত খননকাজের জন্য। এই এক কিলোমিটার খনন হলেও প্রতিবছর হাওরের আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ আর প্রয়োজন হবে না। সাশ্রয় হবে সরকারি অর্থ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের জগন্নাথপুর উপজেলা মাঠ কর্মকর্তা হাসান গাজী জানান, মন্ত্রীমহোদয়ের নিকট স্থানীয় কৃষকরা নদী খননের দাবি জানিয়েছেন। এটি খনন হলে হাওরপারের মানুষ উপকৃত হবেন।