ত্রিশ জুটি পেলো নতুন জীবনের ঠিকানা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৫:১৯:১০ অপরাহ্ন
আহমাদ সেলিম :
বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেন। বয়স বিরাশি ছুঁই ছুঁই। জীবন সায়াহ্নে উপনীত এই মুক্তিযোদ্ধা আট সন্তানের পিতা। তার মধ্যে ছয়জন মেয়ে সন্তান। যে মাটির ঘর থেকে একদিন যুদ্ধে গিয়েছিলেন; এখনো তিনি সেই মাটির ঘরে বাস করছেন। দিয়েছেন পাঁচ মেয়েকে বিয়ে। সেই বিয়েগুলোর খরচ যোগানোর উৎস ছিলো মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। প্রতিটি মেয়ের বিয়ের সময় তিনি ভাতার অনুকূলে ঋণ তুলেছেন। আর সেই ঋণের টাকা দিয়ে তিনি মেয়েদের পাটিয়েছেন তাদের স্বামীর বাড়ি।
পরিবারের সব ছোট মেয়ের বিয়ে নিয়েও বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলেন কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুল গ্রামের এই বাবা। প্রভুর কাছে প্রার্থনা ছিলো, মৃত্যুর আগে মেয়েটির বিয়ে দেখে যাবার। তবে আর্থিক দৈন্যতা এবং মাটির ঘরের জন্য, অনেক ভালো পরিবার থেকে প্রস্তাব এলেও আবার ফিরে যায়। সেই দু:সময়ে আল খায়ের ফাউন্ডেশন নামে একটি উন্নয়ন সংস্থাকে কাছে পায় পরিবারটি। সেই ফাউন্ডেশনের যাবতীয় খরচে ছোট মেয়েটিরও বিয়ে হয়ে গেলো। মহৎ এই উদ্যোগে আল খায়ের ফাউন্ডেশনের সাথে ছিলো দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিলেট নগরীর আমানউল্লাহ হলে যৌতুকবিহীন এই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা হয়। তবে শুধু মুক্তিযোদ্ধা আহমদ হোসেনের মেয়ে নয়, একসাথে ত্রিশ জুটির বিয়ের আয়োজন করা হয় সেখানে। আর সেই ত্রিশ জুটির ৬০টি পরিবারের কারো বাবা নেই, কারো নেই মা, কেউ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কারো মা বাবা-দুজনই নেই। এতিম অসহায় প্রতিটি পরিবারের সদস্যরাও বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। আর অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলো আবেগঘণ পরিবেশ।
সেই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন দেশের গণ্যমান্য অনেকেই। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি। ছিলেন পত্রিকার ফিচার সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম আবেদ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন আমান উল্লাহ কনভেনশন হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ কুদরত উল্লাহ ফাহের, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা ফয়েজ আহমদ ও বড়চতুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসাইন।
ত্রিশ জুটিকে বিয়ের পাশাপাশি সংসারে স্বচ্ছলতার জন্য বেশ কিছু প্রয়োজনীয় উপহার সামগ্রীও তুলে দেয়া হয়। তার মধ্যে ছিলো ত্রিশটি রিকসা, ত্রিশটি সেলাই মেশিন, বিছানা, হাড়ি-পাতিল, সংসার সাজানোর আসবাবপত্র। সাথে দেয়া হয় নগদ অর্থ এবং এক মাসের খাদ্যসামগ্রী।
যাদের বিয়ে দেয়া হয় তারা সিলেটের কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জসহ আরো কয়েকটি উপজেলার বাসিন্দা। এই ত্রিশজুটি এবং তাদের পরিবারের সদস্যকে নিজ নিজ গ্রাম থেকে আনা নেয়ার জন্য ত্রিশটি গাড়ির ব্যবস্থাও করে আল খায়ের ফাউন্ডেশন। দুপুরে অতিথিসহ সবার জন্য আয়োজন করা হয় খাবারের। খাবার শেষে শুরু হয় ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। সব শেষে নতুন জীবনের পথে গন্তব্য হয় প্রতিটি নতুন দম্পত্তির।
ব্রিটেনের মানবিক উন্নয়ন সংস্থা আল খায়ের ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ সজীব জানান, এক সাথে ত্রিশজুটিকে একত্র করা, তাদের বিয়ে দেয়া বড় একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো। তবে বিয়েতে কোনো আন্তরিকতার অভাব ছিলো না। ভবিষ্যতেও আমরা তাদের খবরাখবর রাখবো।
যারা যৌতুকবিহীন বিয়ের মাধ্যমে নতুন জীবনের সূচনা করলেন তাদেরকেও ভবিষ্যতে যৌতুকের বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সাংবাদিক এবং কবি মুস্তাফিজ শফি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই ত্রিশ জুটি এবং তাদের পরিবারও যৌতুকের অভিশাপ সম্পর্কে সচেতন থাকবে।