বঙ্গবন্ধুর ১০৩তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০২৩, ৫:২৬:৩১ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
আজ সেই ১৭ মার্চ। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী, জাতীয় শিশু দিবস। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের অজপাড়াগাঁ মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওর-বাওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে জন্ম নেয়া খোকা নামের শিশুটি কালের আবর্তে হয়ে উঠেছিলেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালীর ত্রাণকর্তা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। পরাধীনতার জিঞ্জির ছিঁড়ে এই বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর দীর্ঘ ৯ মাস মৃত্যুপণ জনযুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অর্জিত হয়েছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভমের বিনিময়ে বাঙালী জাতি অর্জন করে তাদের হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন প্রিয় স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে স্থাপন করে সার্বভৌম বাংলাদেশ, নিজস্ব লাল-সবুজ পতাকায় আচ্ছাদিত হয় বাঙালীর হৃদয়। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই পৃথিবীর মানচিত্রে সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। পূর্ণতা পায় ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ-বঞ্চনা, ঔপনিবেশিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস পাকিস্তানী জল্লাদরা কারাবন্দী রেখে কবর খুঁড়েও যাঁকে হত্যা করার সাহস পায়নি; অথচ স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই হিমালয়সম ব্যক্তিত্বের অধিকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘাতকরা হত্যা করে ক্ষমতার পালাবদল করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হয়ে কাজ করা ঘাতকচক্রের বুলেটে সেদিন ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের হৃৎপিন্ড। কিন্তু তার পরও একটি জাতি ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বঙ্গবন্ধু শুধু দেশে নয়, সারাবিশ্বেই ইতিহাস হয়ে রয়েছেন।
সেই ইতিহাস হয়ে থাকবেন মহাকাল। নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধের কারণে বাঙালী জাতির জনক উপাধি অর্জন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিংশ শতাব্দীতে যাঁরা মহানায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাম্য, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিরামহীন সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকার কারণে বঙ্গবন্ধু ভূষিত হয়েছিলেন নোবেল খ্যাত বিশ্বশান্তি পরিষদের ‘জুলিওকুরি’ পদকে। বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধু যে অমলিন, তার প্রমাণ মেলে সারাবিশ্বের বাঙালীর ওপর পরিচালিত বিবিসির জরিপে। সারাবিশ্বের বাঙালীর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী হিসেবে নির্বাচিত হন। টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই খোকা থেকে জাতির পিতায় পরিণত হওয়া শেখ মুজিবুর রহমান ধন-ধান্য পুষ্পে ভরা শস্য শ্যামল রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন। তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে বঙ্গবন্ধু জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। বস্তুত সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে কোন শক্তির কাছে, যে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথানত করেননি। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারী পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় বঙ্গবন্ধু বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে তাঁর চোখের অপারেশন হয়। এ সময় কয়েক বছর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্টিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন।
১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এ সময় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই সময়ই তিনি শীর্ষ রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। যার জন্য জীবনে তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া কোন কিছুরই পরোয়া করেননি। দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম তিনি শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনা সহ্য করেছেন, ফাঁসির মঞ্চও যাঁর কাছে ছিল তুচ্ছÑ তিনি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান। ‘৭৫ পরবর্তী ইতিহাসের এই রাখাল রাজার নাম মুছে ফেলার অনেক ষড়যন্ত্র চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সকল ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই বিএনপি ছুটি বাতিল করে দেয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার আবারও সরকারী ছুটি ঘোষণা করে। তাই আজ সরকারী ছুটির দিন। যথাযোগ্য মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসেবেই পালন করা হচ্ছে। দিনটি পালনে আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গসংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, র্যালী, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ইত্যাদি।
মহানগর আওয়ামী লীগ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটায় চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। কবিতা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় থাকছে – ক-বিভাগ: ১ম-৩য় শ্রেণি (কবিতার বিষয়: মুজিব, কবি-রোকনুজ্জামান খান) খ-বিভাগ: ৪র্থ-৬ষ্ঠ শ্রেণি (আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি, কবি-নির্মলেন্দু গুণ) গ-বিভাগ: ৭ম-১০ম শ্রেণি (স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো কবি-নির্মলেন্দু গুণ)। চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় থাকছে- ক-বিভাগ: শিশু -৩য় শ্রেণি (ক-জাতীয় পতাকা) খ-বিভাগ: ৪র্থ-৬ষ্ঠ শ্রেণি (খ-মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ), গ-বিভাগ: ৭ম-১০ ম শ্রেণি (গ-বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি)। উল্লেখ্য, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের ১৮ মার্চ বিকেল ৪টায় চৌহাট্টস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সিলেট এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ।
আজ শুক্রবার হাসপতালের শিশু ও বহির্বিভাগের আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- শিশু ওয়ার্ড সুসজ্জিতকরণ ও কেক কাটা, শিশুদের উচ্চতা, ওজন ও পুষ্টিকর খাবার নিয়ে মায়েদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মানসিক বিকাশ ও পুষ্টি বিষয়ে মায়েদের সচেতন, শিশু ওয়ার্ডের শিশু রোগীদের মধ্যে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, শিশু বহির্বিভাগে আগত শিশু রোগীদের মধ্যে চকলেট/বেলুন বিতরণ।
শিশু সার্জারী বহির্বিভাগ আয়োজনে রয়েছে- বিনামূল্যে এতিম বাচ্চাদের সুন্নতে খতনা করানো, ঠোঁটকাটা ও তালু কাটা বাচ্চাদের সেবা প্রদান, বধির বাচ্চাদের কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য স্ক্রীনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে ইএনটি বহির্বিভাগ। এছাড়াও বিনামূল্যে বাচ্চাদের মধ্যে ক্লাবফুট (মুগরপা) সেবা প্রদান করবে অর্থো/ক্যাজুয়ালিটি বহির্বিভাগ।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে বিনামূল্যে জানা ও রেফার হয়ে আসা হৃদরোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাসহ সকল প্রকার সেবা প্রদান এবং পিতামাতাদের রোগের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে কাউন্সিলিং (পরামর্শ) প্রদান করবে শিশু হৃদরোগ ইউনিট। শিশু বিকাশ কেন্দ্রের আয়োজনের মধ্যে রয়েছে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মানসিক বিকাশ সংক্রান্ত সেবা দান ও মায়েদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কাউন্সিলিং।
সকাল ১০টায় বিনামূল্যে শিশুদের ব্লাড গ্রুপিং করানো এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করেছে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে হাসপাতাল প্রশানের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ শুক্রবার (১৭ মার্চ) সূর্যোদয়েরর সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, সকাল সাড়ে ১০টায় আলোচনা সভা, বহির্বিভাগ খোলা রাখা এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান, হাসপাতাল সুসজ্জিতকরণ, জুম’আ নামাজের পরে হাসপাতাল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন।
এছাড়াও ১৮ মার্চ ও ২২ মার্চ আগত রোগীদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ, ২২ মার্চ মেডিসিন বহির্বিভাগে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ চিকিৎসা প্রদান, ২৩ মার্চ গাইনী বহির্বিভাগে জরায়ুমুখ ক্যান্সার এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিং চিকিৎসা প্রদান, শিশু রোগীদের সকল ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান করা হবে।