বোরো রক্ষায় নদী খনন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৩, ৫:৫১:১২ অপরাহ্ন
বুদ্ধি যেখানে প্রবল, লালসা সেখানে দুর্বল। – প্লেটো।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেছেন, বোরো ফসল রক্ষায় শিগগীরই হাওর এলাকার ১৯টি নদী খননের প্রকল্প নেওয়া হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাঁধ নিয়ে এতো কথা হবে না। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের তুফানখালী ফসল রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন। হাওরের বোরো ফসল নিয়ে যখন শংকার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন কৃষকগণ, তখনই এই কথা বললেন প্রতিমন্ত্রী।
দেশের হাওরাঞ্চল নিয়ে ‘গবেষণা’ কম হয় নি। বিশেষ করে, অকাল বন্যার হাত থেকে এই অঞ্চলের একমাত্র ফসল রক্ষায় নানা ধরণের ‘কর্মযজ্ঞ’ অব্যাহত আছে। হাওরে বাঁধ নির্মাণ, নদীর তীর সংরক্ষণ, স্লুইসগেট নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্পের কাজ চলছে ধারাবাহিকভাবে। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোন লাভ হচ্ছে না। মাঝখানে সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে। এবারও এই অঞ্চলে হাওরে বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। কিন্তু তা যথাসময়ে বাস্তবায়িত হয় নি।এমনি যখন অবস্থা,তখন বলা হচ্ছে নদী খননের মাধ্যমে হাওরের ফসল রক্ষা করা সম্ভব। বলা হচ্ছে, হাওরের ফসল রক্ষায় ব্যাপক আকারে নদী খনন প্রয়োজন। হাওর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে এগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে,ফসল রক্ষায় যথাসময়ে টেকসই বাঁধ নির্মাণের পাশপাশি প্রয়োজন হাওর এলাকার নদীগুলো খনন। তাদের বক্তব্য, বাঁধের কাজে অনিয়ম ও গাফিলতি কমলে ফসল কিছুটা রক্ষা পাবে। তবে ঢল বেশি হলে কেবল বাঁধ দিয়ে এখন আর ফসল রক্ষা করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজন নদীর নাব্যতা ফেরানো। দেশের সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ১৪ হাজার ৫৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাওর অঞ্চল বিস্তৃত। এখানে ৪১৪টি হাওর আছে।এসব হাওর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে অন্তত ১৪টি নদী। তলদেশ ভরাট হয়ে এই সবগুলো নদীই নাব্যতা হারিয়েছে। ফলে অল্প বৃষ্টি বা ঢলেই নদী উপচে আশপাশের এলাকায় পানি ছড়িয়ে পড়ে। ভাসিয়ে নেয় ফসল-জনপদ। উল্লেখ করা যেতে পারে,প্রধানমন্ত্রী নৌপথ উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। কারণ দেশে যেভাবে রেল ও সড়কপথের উন্নয়ন হয়েছে সেইভাবে নৌপথের উন্নয়ন হয়নি। তাই হাওরের নদীগুলো খননের মাধ্যমে নাব্যতা ফেরানোর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
এখন আসল কথা হলো, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? হাওরের বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতিসহ যেসব কা-কারখানা চলে আসছে, সেটা কারও অজানা নয়। নদী খনন বা তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নিয়েও চলছে ব্যাপক ‘নয়ছয়’। বলা যায় এই সব প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি আমাদের ‘ঐতিহ্যে’ পরিণত হয়ে গেছে। এখন হাওরের নদী খনন পরিকল্পনাটিও কি সেই দুর্নীতিবাজদের লুটপাটের নতুন একটি দ্বার খুলে দেবে?