নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ মার্চ ২০২৩, ৫:৫৩:৪২ অপরাহ্ন
আফতাব চৌধুরী
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। সমাজ গঠনে নদীর ভূমিকা প্রাচীনকাল থেকেই প্রাধান্য পেয়ে আসছে। নদী মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। নদ-নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে মানবসভ্যতার ইতিহাস। দেশের কৃষিকাজ, পানি বিদ্যুৎ, পানি সেচ, ব্যবস্থা সুলভ পানিপথ পরিবহন, পানীয় জলের জোগান, মৎস্য উৎপাদন, শহর ও শিল্পকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় পানি সরবারহ প্রভৃতি ক্ষেত্রে দেশবাসী নদ-নদীর প্রভাব খুবই বেশি। নদ-নদীগুলো যেন মায়ের হাতে সন্তানস্নেহে লালন-পালন করে চলছে। দেশের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপে নদ-নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর সকল নদীই বিশ্বমানবতার পথিকৃৎ। বিন্দু বিন্দু পানিরাশির অববাহিকায় উৎসস্থল পাহাড়ের অভ্যন্তর থেকে ছড়া, নদ-নদী, মহানদী, সমুদ্র, পানিপ্রবাত ও মহাসাগরের সৃষ্টি। নদী ছড়া উপত্যকার নামেই গ্রাম-শহরের পরিচিত। নদীর সাথে মানুষের আত্মীয়তার বন্ধন চিরকাল। নদী তার জীবন উৎসর্গ করেছে মানুষের কল্যাণে। নদী ইতিহাস রচনা করে। নদীর পানি সর্বধর্ম সর্বজাতির কাছে পবিত্র। নদী নিয়ে কত কথা, রূপকথা, কত গল্প, কবিতা আর গান রচিত হয়েছে। নদীর পাদদেশে গড়ে উঠেছে শহর, বন্দর, নগর, হাট-বাজার, শিল্পকারখানা প্রভৃতি।
আমাদের বুড়িগঙ্গা। একদিন এই নদী ছিল বাংলাদেশের প্রাণ। কিন্তু আজ? আজ বুড়িগঙ্গা শীর্ণ এক নদী। বুড়িগঙ্গায় এখন স্বচ্ছ পানি পাওয়া বিরল। নদীর অধিকাংশ জুড়ে আছে কালো, নীলাভ ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি প্রবাহ যা জীবাণুমুক্ত এবং স্বাস্থ্যের জন্য, পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এই পানি ঢাকা নগরীর কলকারখানার বর্জ্য ও প্রতিদিনকার বিপুল পরিমাণ মল ও আবর্জনা মিশ্রিত। এই পানিতে গোসল, কাপড়কাচা, বাসন মাজা আর রান্না-বান্নাসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার পর্যন্ত সবকিছুই হচ্ছে। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে জাহাজ নির্মাণ কারখানা।
ধোলাইখাল দিয়ে রাজধানীর যাবতীয় ময়লা পানি গিয়ে পড়ছে বুড়িগঙ্গায়। যে জায়গাটির খালটি বুড়িগঙ্গায় মিশেছে সেখানে গেলেই চোখে পড়বে এক নরকীয় দৃশ্য। এখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বুড়িগঙ্গার পানি দুর্গন্ধ। পানিতে ভাসছে মরা মাছ-পশু-পাখির নাড়ি-ভূড়ি। ভাসছে হাজার হাজার পলিথিন ব্যাগ। এক মাইলব্যাপী এলাকার পানিতে সারাক্ষণ বুদবুদ উঠতে দেখা যায়। বুড়িগঙ্গার এক নৌকার মাঝি আহাদ মিয়া জানালেন, এখানে প্রায়ই মাছ মরে ভেসে ওঠে।
বুড়িগঙ্গা দিয়ে প্রতিদিন প্রায় তিন’শ লঞ্চ ও স্টীমার আসা-যাওয়া করে। এসব নৌযান থেকে তেল অনবরত মিশছে নদীতে। এছাড়া চলেছে প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেক ইঞ্জিনচালিত নৌকা। পানির উপর তেলের বিশাল আস্তরণ মাঝে মাঝে খুব স্পষ্টতই দেখা যায়। বুড়িগঙ্গার ডানদিকে অবস্থিক ডকইয়ার্ডে বিভিন্ন ধরনের যাত্রী ও মালবাহী জাহাজ নির্মাণ ও ভাঙ্গা হচ্ছে। এই ডকইয়ার্ডের যাবতীয় আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ পড়ছে বুড়িগঙ্গায়। সবকিছু মিলিয়ে বুড়িগঙ্গা দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। পাগলায় অবস্থিত আবর্জনা ও বর্জ্য পদার্থ পড়ছে বুড়িগঙ্গায়। সবকিছু মিলিয়ে বুড়িগঙ্গা দূষিত ও বিষাক্ত হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। পাগলায় অবস্থিত ঢাকা ওয়াসার আউটফল স্যুয়ার লাইনের ত্রুটির কারণে বেশ কিছুদিন মহানগরীর মল পরিশোধন ছাড়াই বুড়িগঙ্গায় ফেলছে। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন কারণে প্রচুর মল পড়ছে বুড়িগঙ্গায়। ইসলামবাগ, চাঁদনীঘাট, কামরাঙ্গীরচর, মান্দাইল, বড়িশুরসহ নদীর উভয়তীরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার প্রায় সাত হাজার উন্মুক্ত পায়খানা রয়েছে নদীর উপর। ফলে এই নদীর পানি ব্যবহার মোটেই নিরাপদ নয়।
ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় চারশত ট্যানারি রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১০০টি ট্যানারি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত। এসব ট্যানারির পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থ ড্রেন দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ছে। ট্যানারি শিল্পে ‘ক্রোসমল’ জাতীয় এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়। প্রতিদিন একটি কারখানা ১০/১৫ টন ক্রোমসল ব্যবহার করে। একটি ট্যানরির তিন হাজার গ্যালন ‘ডাস্ট ওয়াটার’ প্রতিদিন পড়ছে সোজা বুড়িগঙ্গায়। ফলে নদীর পানিতে ক্রোমিয়ামের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এছাড়া ট্যানারির বর্জ্যে ক্ষতিকর আর্সেনিকও রয়েছে। প্রতিদিন ট্যানারির হাজার হাজার গ্যালন বর্জ্য পানি বুড়িগঙ্গায় পড়ার ফলে নদী বিষাক্ত হচ্ছে। ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ পলি পড়ে। ক্ষতিকর ক্রোমিয়াম ও আর্সেনিক পলির সঙ্গে জমা হচ্ছে। ফলে শুধূ পানিই বিষাক্ত হচ্ছে না, বুড়িগঙ্গার মাছও হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। চিকিৎসকদের অভিমত, শরীরে ক্রোমিয়ামের মাত্রা অধিক হলে ক্যন্সার হতে পারে। অথচ হাজারীবাগ এলাকায় গেলেই দেখা যাবে. ড্রেনগুলো দিয়ে ¯্রােতধারায় হালকা সবুজ ও নীল রঙ-এর ট্যানারির বর্জ্য পানি বুড়িগঙ্গায় যাচ্ছে। এর সবটাই ক্রোমিয়াম যুক্ত পানি। বুড়িগঙ্গার তীরে রয়েছে মিডফোর্ড হাসপাতাল। এই হাসপাতালের জীবাণুযুক্ত যাবতীয় পানি ও বর্জ্য ড্রেন দিয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ছে। তাছাড়া হাসপাতালের রোগীদের ব্যবহৃত পোশাক, বিছানার চাদর ও যাবতীয় লিনেন বুড়িগঙ্গায় ধোয়া হচ্ছে। ফলে নানান জটিল রোগের জীবাণু মিশছে বুড়িগঙ্গার পানিতে। এখানে মধ্যবিত্ত, নি¤œবিত্ত, বিত্তহীনদের গোসল করতে দেখা যায়। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ গোসল করে। কাপড় কাচা থেকে হাঁড়ি-কুঁড়ি ধোয়া-মাজা পর্যন্ত। এমন কি কলসি ভরে অনেক পানি নিয়ে যায় যা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর। কেন ট্যাপে পানি থাকা সত্ত্বেও নদীর পানি কেন ব্যবহার করেন এ সম্পর্কে গোসলকারীদের মতামত হলে জানায় প্রয়োজনীয় পানির খুব অভাব। স্থানীয় সব হোটেলে মিউনিসিপ্যালিটির পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও হাতমুখ ধোয়ার জন্য বুড়িগঙ্গার ব্যবহার করা। কিছু লোক টিন ভর্তি করে এসব হোটেলে পানি সরবরাহ করে থাকে। মিউনিসিপ্যালিটি পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে মিটার প্রবর্তন করার পর অতিরিক্ত কোন লোককে বাড়তি পানি ব্যবহারের সুযোগ দিতে চায় না।
একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী বলেন, বুড়িগঙ্গা ক্রমাগত দূষিত হয়ে পড়ছে। অথচ বুড়িগঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণের যেমন উদ্যোগ নেই, তেমনি দূষণ কি হারে বাড়ছে তারও পর্যবেক্ষণ নেই। শুকনো মৌসুমে বুড়িগঙ্গার পানি ব্যবহার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে বলে বিশেষজ্ঞরা মতামত ব্যক্ত করেছেন।
নদীকে দূষণমুক্ত রাখা নাগরিক জীবনের সাংবিধানিক মৌলিক কর্তব্য। চিরাচরিত কাল ধরেই নদীর তীরে মৎস্যজীবীদের বসবাস। দৈনন্দিন নদীতে মাছ শিকার তাদের প্রধান জীবিকা। ইতিহাসের পাতায় মিশরকে নীল নদের দান বলা হয়। সিন্ধু নদের তীরে গড়ে উঠেছে সিন্ধু সভ্যতা। ধরণীর বুকে নদী চিরকাল বয়ে যাবে আপন ধারায়। নদীর প্রতি মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে উঠেছে প্রাচীনকাল থেকে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য হ্রাসের ফলে নদী দিন-দিন হারিয়ে ফেলছে তার নাব্যতা। নির্বিচারে বন ধ্বংসের কারণে পাহাড়ের মাটি আগের মতো বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে না-পারায় থাকে না মাটি ছোঁয়া পানি। ফলে শুকনো মরশুমে নদী, ছড়াতে থাকে না পানি। পার্বত্য অঞ্চলের নদীগুলো খরার প্রকোপে পানিহীনতায় ভুগছে। বন ধ্বংসের ফলে নদী ও ছড়া পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে। নদীর পানি ভাসিয়ে আনে বাঁশ, পাহাড়ে উৎপাদিত জুমের ফসল। নদীতে মাছ ধরে মৎস্যজীবীরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। নদীপথে নৌকায় গ্রাম্য জীবনের মানুষ যাতায়াত করে। ভূগর্ভে পানির স্তর নিম্নমুখী, তাই মানুষের পানির চাহিদা পূরণ করতে প্রযুক্তি অবলম্বন করে নদীর প্রাকৃতিক পানিকে ব্যবহার করছে। উপজাতীয় অঞ্চলে ছড়ার পানি একমাত্র পানীয়। নদীর ছড়ায় বাঁধ দিয়ে সেচ প্রকল্প গড়ে উঠেছে। প্রায় নদীতে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পানিশোধানাগারে নদীর পানি পরিশ্রুত করে লক্ষ মানুষের পানীয়জলের জোগান দিচ্ছে। বায়ু পানি বৃষ্টি ব্যতীত জীবপ্রাণ ধ্বংস। পানি মন্ডলের মহাসমুদ্রের চেয়ে নদীর গুরুত্ব মানুষের কাছে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। নদী, ছড়ার পানি পান করে বন্যরাও বেঁচে আছে। পাহাড় হতেই নদী ছড়ার সৃষ্টি। নদী পরিবেশের বিশেষ অঙ্গ, মানুষের কাছে নদীর গুরুত্ব তাই অপরিসীম। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত পৃথিবীর সাতটি আশ্চর্য সৃষ্টির মধ্যে একটি তাজমহল। নদী দূষণ সম্পর্কে মানুষের অবচেতনার ফলে নদী বা ছড়ার বালুচরে খোলা আকাশের নীচে মুক্ত পায়খানা, শ্মশানের অর্ধ-জ্বলন্ত শবদাহ, নদীতে ভাসমান মৃত গবাদি পশুর দেহ মাটিতে পুঁতে না-দিয়ে নদীর পানি ফেলে দেওয়ার রীতি রয়েছে। সম্প্রতি পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বুদ্ধির সুবাদে সর্বাধিক স্বাস্থ্য বিধান প্রকল্পে আজকাল নদীতে মুক্ত পায়খানা করার কুঅভ্যাস অনেকাংশে কমে গেছে। নদী ও ছড়া নাগরিক জীবনের সম্পদ হিসেবে প্রদান করছে মুক্ত পানি, বিদ্যুৎ, সেচ, নদীর বালু-পাথর, মৎস্যজাতীয় সুষম খাদ্য। নদীর চরে সবুজ ফসল, শাকসবজি। নদীর খরস্রোতে ভেসে আসছে জ্বালানি কাঠ, মানুষ তা সানন্দে সংগ্রহ করছে।
আগেকার শীতের মরশুমে পাহাড়িরা নদীতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে প্রাকৃতিক বিষ প্রয়োগ করত। স্যালারলতা নামে এক জাতীয় বিষাক্ত লতার রস নদীর পানিতে মিশিয়ে দিত। এতে কিছু সময়ের জন্য মাছের চোখ অন্ধকার হয়ে যেত। শত শত মানুষ আনন্দে উল্লাসে নদীতে মাছ ধরার জন্য দল বেঁধে নেমে পড়ত। চল্লিশ বৎসর আগে নদীর মাছের দর ছিল কেজি প্রতি দুই টাকা, আজকাল তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন-পাঁচশ টাকা। নির্বিচারে চলছে নদী ও ছড়াতে রাসায়নিক বিষ প্রয়োগে মাছ ধরার ঘৃণিত উদ্যোগ। নদী ও ছড়ার পানিতে বিষ মিশিয়ে মাছ ধরার কান্ড নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। যার ফলে নদীর কোলে প্রকৃতিতে উৎপন্ন ছোটো বড়ো মাছ, কাঁকড়া, ঝিনুক, শামুক, কচ্ছপ, ব্যাঙ প্রভৃতি জলজ প্রাণী বংশানুক্রমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এতে মৎস্যজীবীরা সমূলে বিপন্ন হচ্ছে। ঔষধিসম্পন্ন বহু মাছ আজকাল নদীতে দু®প্রাপ্য। নদীতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে যা নদীকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। নদীতে বিষ প্রয়োগের চরম প্রবণতায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী জীবাণূরা বিলুপ্ত হতে চলেছে। রাসায়নিক বিষ-কৃষকের জমিতে ক্ষতিকারক কীট-পতঙ্গ রোধ করার জন্য আবি®কৃত হয়েছে। বিষ জৈববৈচিত্র্যের জীব-জন্তু, পাখি, মাছ নিধনের জন্য নয়। বিষে মারার মাছ খেয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষে মারা মাছে রাসায়নিক বিষাক্ত অণু থেকে যায়। এই মাছ ভক্ষণে শারীরিক পঙ্গুত্বের ভয় থাকে। পাহাড়ি ছড়াতে ক্ষুদ্র প্রজাতির মাছ, শামুক, কাঁকড়া, ঝিনুক উৎপন্ন হয়। এইসব বনবাসী জীবনের প্রিয় খাদ্য। ছড়াতে বিষ দেওয়ার ফলে এদের বংশবিন্তার ক্রমান্বয়ে লুপ্ত হতে চলেছে। বিষাক্ত নদীর পানি পান করে গবাদি পশু, গরু, শূকর, ছাগল মারা যাচ্ছে। নদীর মাছের স্বাদ অতুলনীয়। নদী ও ছড়ার মাছের স্বাদের জন্য নদীর মাছের চাহিদা অনেকগুণ বেশি। আমাদের দেশে বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ইচ্ছা করলে আমরা ছাদের উপর বড় চৌবাচ্ছা তৈরী করে বৃষ্টির পাসি শীতে ব্যবহারের জন্যও সংরক্ষণ করতে পারি।
নদী চিরকাল মানুষের সুখ-দুঃখের সাক্ষী। নদী মানব সভ্যতার দিশারী বলেই মানুষ নদীর কাছে ঋণী। নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞায় সরকার অনতিবিলম্বে আইন প্রণয়ন করুক। নদীতে বিষ প্রতিরোধ আইন তৈরি করতে সরকারের নিকট দাবি জানাতে জনমত গঠন ও বিষ প্রয়োগে মৎস্য নিধনের আইনি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করতে সর্বস্তরের জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। মৎস্যজীবীদের বাঁচাতে নদীদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে অধিক ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। বিষ প্রয়োগে মৎস্য নিধন নিষিদ্ধ করতে এবং বিষ প্রয়োগকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সময়োচিত বিধান তৈরিতে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বিভিন্ন জেলায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্যদ নদী দূষণের প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছে না। নদীতে বিষ প্রয়োগকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে সরকার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় পুলিশি আইনে বলবৎ ও রূপান্তরে বিধিসম্মত জনহিতকর নীতি গ্রহণ করতে দাবি জানাচ্ছে পরিবেশপ্রেমী বুদ্ধিজীবী মহল। সভ্যতার যুগে নদীমাতৃক দেশে নদীতে বিষ প্রয়োগ এক কলঙ্কিত অধ্যায়। নদ-নদীর দান অপরিসীম বলেই নদীর বিশেষত্ব কখনো সমাজের সুস্থ মানুষ ধ্বংস করতে দেবে না। নদীর প্রতি বিরূপ আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন মানুষের এই বিষক্রিয়া আর বেশি দিন প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। নদী ও ছড়ার স্নিগ্ধ তীরে পশু-পাখিদের বিচরণ ভূমি। সম্প্রতি সংবাদপত্রে প্রকাশ, পশু-পাখিরা নদীর বিষাক্ত পানি পান করে প্রাণ হারাচ্ছে। নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছধরা বন্ধ করতে পরিবেশ সচেতনতা অভিযান সফল করা দরকার। নদীতে বিষ প্রয়োগের ফলে ভয়ঙ্কর পরিবেশ দূষণ মানবসভ্যতার কাছে এক অশনিসংকেত।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।