নবজাতকের সুন্দর নাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২৩, ২:৪৬:৪৪ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
কোনো পরিবারে নবদম্পতির ঘরে সন্তান জন্ম নিলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় পরিবারে এবং আত্মীয় স্বজনের মধ্যে। ছেলে সন্তান না মেয়ে সন্তান, এমন প্রশ্ন থাকে না। আসল প্রশ্ন হলো নবজাতকের আগমন। নবজাতকের আগমনকে নানাভাবে উদযাপন করা হয়। নানার বাড়িতেই প্রথম উদযাপন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কারণ শিশুর নানী প্রথম ডেলিভারির আগেই তার মেয়েকে তাঁর কাছে নিয়ে যান।
নানা-নানী জন্মের সপ্তম দিনের মধ্যে নবজাতকের সুন্দর একটি নাম রাখেন। মাথার চুল মু-ন করেন। নিজেদের মধ্যে ছোট একটি অনুষ্ঠান ‘ছটি’ করেন, খাওয়া-দাওয়া হয়, আনন্দ হয়।
মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.) কে সব জিনিসের নাম শিখিয়ে তাঁকে শ্রেষ্ঠ ঘোষণা করেন। প্রতিটি বস্তুর নাম ও পরিচয় থাকা আবশ্যক। নামের ভালো-মন্দের প্রভাব শিশুর ওপর পড়ে। সুন্দর নামের প্রভাবে পরবর্তী জীবনে স্বভাব চরিত্রে শুভ্রতা ও পবিত্রতা প্রতিফলিত হয়। মন্দ নামের ও অসুন্দর নামের বিরূপ প্রভাব প্রতিফলিত হয়।
বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তির নাম, ওলামাদের নাম, সাহাবায়ে কেরাম ও আল্লাহর নবীগণের নামে নাম রাখা সবচেয়ে নিরাপদ। এতে শিশুর ওপর, তার পিতামাতার ওপর সুন্দর ও উত্তম প্রভাব পড়বে। সমাজে নিকৃষ্ট ও কলঙ্কিতদের নাম সুন্দর হলেও বর্জন করা উচিত। এরা এতই ঘৃণিত ও নিন্দনীয় যে কোনো অমুসলিমও তাদের সন্তানদের নাম ফেরাউন, নমরূদ, কারুন, শাদ্দাদ, আবু জেহেল ও কাফের রাখে না।
বিশিষ্ট ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, সাহাবায়ে কেরাম ও আল্লাহর নবীদের নামে নাম রাখা, যুগের অলি আবদাল গউস কুতুবের নামে নাম রাখা নিরাপদ ও উত্তম। এতে ওই বরণীয় ব্যক্তি, ব্যক্তিদের নামের প্রভাব শিশুর ব্যক্তিত্বের মধ্যেও ব্যাপ্ত হওয়ার মওকা ও সুযোগ হয়।
অতএব, সব মিলিয়ে শিশুর নাম রাখার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। প্রিয় নবী (সা.) সাহাবিদের ইসলাম পূর্ববর্তী যুগের রাখা এ ধরনের কোনো নাম শুনতে পেলে মুসলিম হওয়ার পর তা পরিবর্তন করে একটি সুন্দর ও ভালো নাম রেখে দিতেন। নবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা কারও নাম মুহাম্মদ রাখলে তাকে মারধর করবে না। তার অসম্মানও করবে না। যার তিনটি সন্তান জন্ম নিলো অথচ যে কারও নাম মুহাম্মদ রাখলো না, সে জাহিলের আচরণ করলো। তোমাদের কারও ঘরে এক, দুই বা তিন মুহাম্মদ তাকলে ওই ঘরে কোনও অনিষ্ট হবে না। যে ঘরে মুহাম্মাদ নামে লোক থাকবে সে ঘরে বরকত থাকবে, কল্যাণ থাকবে। কারও নাম সংক্ষিপ্ত করে বা বিকৃত করে ডাকাও উচিত নয়, এতে অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। এমন করলে আল্লাহর ফেরেশতারা তার ওপর লানত দেন।
আমরা অত্যধিক আদর করে সন্তানের নাম ছোট করে ফেলি এবং ওই সংক্ষিপ্ত নামে তাকে ডাকি। এতে নামের বিকৃতি ঘটে, নামের অর্থও পাল্টে যায়। অতএব আমরা মূল নামকে কখনও খ-িত করবো না। ছোট নাম হবে শ্রুতিমধুর, অর্থপূর্ণ এবং সহজ। নামের মধ্যে যেনো কোনও অসম্মান ও তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা অবজ্ঞার ভাব না থাকে। কোনও পশু পাখি, বৃক্ষলতা, মাছ, সাগর-নদী, পুকুর, খাল বিলের নামকরণ করা ঠিক নয়।
আসল নামের পাশাপাশি সন্তানের একটা ডাক নাম (ঘরপশহধসব) রাখা হয়। ডাক নাম হবে ছোট্ট, সহজ, ¯েœহময়, উত্তম ও অর্থময়।
ভালো নাম, সুন্দর নাম রাখা ধর্মীয় দৃষ্টিতে সুন্নত। সব নবজাতক-শিশুদের মুঠিতে ধরাপড়–ক জগতের সব সুখ-শান্তি আর সফলতা।
লেখক : কলামিস্ট।