মাহে রমজান সমাগত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২০ মার্চ ২০২৩, ২:৪৫:২৫ অপরাহ্ন
বন্ধু থাকা ভালো, কারণ প্রয়োজনের সময় বন্ধুরাই এগিয়ে আসে। -ফ্লেচার
সমাগত সংযমের মাস মাহে রমজান। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির দুর্ভোগের মধ্যেই বছর ঘুরে আবার মুসলমানদের সামনে এসেছে সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা সারা বছরই অপেক্ষায় থাকে এই মাসটির জন্য। আগামি এক মাস চলবে রমজানের আত্মশুদ্ধি আর সিয়ামের সাধনা। প্রতিটি মানুষের আত্মাকে পুত পবিত্র করে তোলার জন্য এই মাসটির রয়েছে অনন্য ভূমিকা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসেই নিজেকে শুধরে নেয়ার জন্য একাগ্রচিত্তে সাধনা করেন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার বন্ধ রেখে রোজাদাররা সংযম ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা নেয়। পরহেজগারির তাক্বওয়া অর্জনের পরিপূর্ণ শিক্ষার জন্য মাহে রমজানের মতো উপযুক্ত আর কোন উপলক্ষ নেই। তাই রোজা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ বা অবশ্যকরণীয়।
বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মুসলমানদের সামনে রোজা আসে। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে-‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ কিন্তু এই রোজা কি আমাদের সেভাবে পরহেজগার করে তুলতে পারছে? আমরা কি পরহেজগার হতে পারছি? পারছি কি আত্মাকে শুদ্ধ করতে? অর্থাৎ এই রমজানে রোজাদার বা মানবজাতির যা অর্জন করার কথা, সেটা কি অর্জিত হচ্ছে? আমরা আমাদের চারপাশে তাকালে দেখবো, সর্বত্রই একটা ভাওতাবাজি আর প্রতারণার মহোৎসব চলছে। যেন সংযমের চেয়ে বেশি অসংযমী হয়ে উঠছি আমরা। আত্মশুদ্ধির চেয়ে আত্মকলুষিতই হচ্ছে বেশি। যেন নিজেকে শুধরে নেয়ার পরিবর্তে নিজের পশুত্বকেই জাগিয়ে তুলছি। আর এভাবেই ভুলণ্ঠিত হচ্ছে মাহে রমজানের মর্যাদা। সত্যি বলতে কি, আমাদের ব্যক্তিগত হীন স্বার্থের কারণেই মাহে রমজানের পবিত্রতা বিনষ্ট হচ্ছে। কুলষিত হচ্ছে এর চেতনা। আমরা অনেক সময়ই ব্যক্তিগত হীন স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে ধর্মকর্ম পালন করতে পারছি না। অনেক সময় স্রেফ লোক দেখানো পর্যায়ে চলে যায় আমাদের এবাদত বন্দেগী আর সংযম সাধনা। প্রতিটি রমজানেই বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। এতে অসাধু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয় ঠিকই, তবে দুর্ভোগ বেড়ে যায় রোজাদার আর সাধারণ মানুষের।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি রমজানে মানুষের দুর্ভোগের আরেকটি কারণ হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারিদের অবৈধ আবদার। তাদের ‘ঈদের প্রস্তুতি’ শুরু হয় রমজান মাস আসতে না আসতেই। আর তাই তারা সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে উপরি আদায়ের মাত্রাটি বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মিথ্যাচার, দুর্নীতিসহ নানা অপকর্ম বেড়ে যায় মাহে রজমানে। অথচ এইসব কর্মকান্ড ইসলামের পরিপন্থী এবং মাহে রমজানের পবিত্রতা ধ্বংসকারি। এইসব অপকর্মে জড়িতদের উদয়াস্ত না খেয়ে উপোষ থাকলেই রোজা পালন হয়ে যাবে, এমনটি বলা যায় না। আর তাই আমাদেরকে শপথ নিতে হবে যথাযথভাবে রমজানের সিয়াম সাধনার। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে যারা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে বাড়িয়ে দেয় জনদুর্ভোগÑ তাদের বিরুদ্ধে। সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।