পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ৮:৩৩:২০ অপরাহ্ন
রঞ্জিত কুমার দে
পরিবেশ ও মানুষের মধ্যে একটি নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। সভ্যতার বিবর্তনে মাসে মাসে মানুষ যেমন একটু একটু করে তার পরিবেশ গড়ে তুলেছে তেমনি সভ্যতার চরমলগ্নে এসে সেই মানুষই আবার তার পরিবেশকে নানা উপায়ে ধ্বংস করে চলেছে। তাইতো মানবসভ্যতা আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ দূষণের জন্য একটি দুটি নয় অগণিত কারণ রয়েছে। তবে পরিবেশ দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হলো জনসংখ্যা। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে জনসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু বাড়ছে না প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদ। যে কারণে সীমিত প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাহিদার চাপ পড়ছে প্রচন্ডভাবে। বাড়তি জনগণের চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ নির্মমভাবে ধ্বংস করছে বনজ সম্পদ। এতে করে একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উদ্ভিদজগৎ অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণিজগৎ। এ দ্বিজগতের ক্ষতি সাধনের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এক সংকটজনক অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। পরিবেশ দূষণের আরেকটি কারণ হলো শক্তি উৎপাদন। শক্তি উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষক নানা রাসায়নিক দ্রব্য নির্গত হয়।
প্রকৃতির এক অফুরন্ত নিয়ামক হলো বায়ু। যে বায়ু আজ নানাভাবে দূষিত হয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন জ্বালানি যেমন- তেল, কয়লা, গ্যাস পুড়ে প্রতিনিয়তই বায়ুতে কার্বন- ডাইঅক্সাইড ছড়িয়ে পড়ছে। বায়ুতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বেড়ে, যাওয়ার কারণে তাপমাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে অসময়ে বর্ষণ, কুয়াশা, ঝড় ও বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তেল, কয়লা পুড়ে যে গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে মানুষের মাথাধরা, শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, দীর্ঘস্থায়ী ব্রংকাইটিস ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়। বায়ুর মত পানিও আজকাল নানাভাবে দূষিত হচ্ছে। শহর বন্দরে কলকারখানায় বিকট আওয়াজ, মোটর যানের হর্ণ, বাজি, পটকার শব্দ, টেলিভিশনের শব্দ, মানুষের চেচামেচি, চিৎকার, উচ্চ ধ্বনিতে মাইক বাজানো সব মিলিয়ে যে শব্দের এক মহাযজ্ঞ চলছে। এসব শব্দের ফলে মানুষের জীবনে নানারকম বিপর্যয় দেখা দেয়। শ্রবণশক্তির বিলোপ, মানসিক বিপর্যয়, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি ও স্নায়বিক অস্থিরতা প্রভৃতি অস্বাভাবিক শব্দেরই পরিণাম।
পরিবেশ দূষণের হাত থেকে বাঁচার জন্য যা করতে হবে তা হচ্ছে বৃক্ষনিধন হয়, বরং বৃক্ষরোপণ করে এ পৃথিবীকে সবুজের সমারোহে ভরিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে কয়লা, গ্যাস ব্যবহার করতে হবে পরিমিত পরিমাণে। কবির মতো আমরাও উচ্চারণ করি-
‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।