বিশ্ব বন দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মার্চ ২০২৩, ৮:৪৪:০৭ অপরাহ্ন
ভদ্রলোক সে-ই, বড় সে-ই, যে সত্যের উপাসক। -শেখ সাদি রা.
আজ বিশ্ব বন দিবস। বন সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টিই এই দিবসটির লক্ষ। আমাদের বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। পরিবেশে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। দেখা দিচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়। বৈশ্বিক পরিবর্তিত জলবায়ূর ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা হয়ে উঠছে দূরূহ। দেশে দিন দিন বেড়ে চলেছে জনসংখ্যা। সেই সঙ্গে গড়ে উঠছে আবাসিক ভবন। বনাঞ্চল উজাড় করে তৈরি হচ্ছে ঘরবাড়ি। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের আয়তনের এই দেশে জনপ্রতি জমির পরিমাণ ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে- আবাদি জমি, বাড়ি-ঘর, স্কুল-কলেজ, কলকারখানা। রয়েছে জমির বহুমুখী ব্যবহার। এর জন্য প্রয়োজন হচ্ছে বাড়তি জমির। তাই হাত পড়ছে বনজঙ্গলের ওপর। বনাঞ্চল উজাড় করে তৈরি হচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে আছে জবর দখল। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বনাঞ্চল দখল করছে। সরকারি উদ্যোগে বনাঞ্চল সৃজন বা বৃক্ষরোপণ অভিযানে আশানুরূপ ফলাফল আসছে না। এই প্রেক্ষাপটেই আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন দিবস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য স্বাভাবিক রাখতে আয়তনের ২৫ শতাংশ বন বা গাছ পালায় আচ্ছাদিত থাকার কথা। মানুষের জীবনযাত্রা ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জলবায়ূর স্থিতিশীলতা এবং পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখার জন্যই কমপক্ষে ২৫ শতাংশ জমিতে গাছপালা থাকা খুবই জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে বর্তমানে মাত্র সাত লাখ ৭০ হাজার হেক্টর বা আয়তনের মাত্র ছয় শতাংশ এলাকা বন বা গাছপালায় আচ্ছাদিত। কিন্তু এই বনাঞ্চল ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। দেশের ৫০ ভাগ গাছপালা উজাড় হয়েছে গত ২০ বছরে। সরকারি বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষসম্পদ কেটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তচক্র। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, সিলেটের চারটি জেলার বন বিভাগের এক লাখ ৬৪ হাজার একরের বেশি জমির অর্ধেকই হাতছাড়া হয়ে গেছে। বেদখল হয়ে পড়েছে এই জমি। এই জমি উদ্ধারে নেই কার্যকর কোনো উদ্যোগ। সরকারি বনাঞ্চল লুটপাট করছে দুর্বৃত্তরা। তাদের সঙ্গে রয়েছে বন বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারি, বনরক্ষী। অর্থাৎ রক্ষক হয়ে ওঠেছে ভক্ষক। অনেক সময় দেখা গেছে, বনাঞ্চলের কাঠ পাচারে বনদস্যু, বনবিভাগ, পুলিশ ঐক্যবদ্ধভাবে জড়িত রয়েছে। বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বনরক্ষী সবাই জড়িত কাঠ পাচার প্রক্রিয়ায়। জড়িত বনের আশপাশ এলাকার বসবাসকারী অসাধু লোকজন। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীর ছত্রচ্ছায়ায় এই অপকর্ম সংঘটিত হচ্ছে অনেক সময়। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সন থেকেই সরকারি বনাঞ্চলের কাঠ পাচারের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাছাড়া, আইনের ফাঁকফোকরের কারণে বেদখলকৃত জমি উদ্ধার করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে বন বিভাগ মনে করে। কিন্তু এই ফাঁক ফোকর বন্ধ করার কোন গরজ নেই তাদের।
শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বই পরিবেশগত নানা বিপর্যয়ের শিকার। জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। উত্তপ্ত হচ্ছে আবহাওয়া। শীতকালের স্থায়ীত্ব কমছে, বাড়ছে গ্রীষ্মকালের স্থায়ীত্ব। গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা বাড়ছে। বেড়ে গেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। উচ্চতা বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের। অদূর ভবিষ্যতে সমুদ্র তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যেতে পারে সমুদ্রগর্ভে। তাছাড়া, সমুদ্র দূষণও সাম্প্রতিলককালে একটা বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন সাগর মহাসাগরে দু’ শ’র বেশি মৃত এলাকা চিহ্নিত হয়েছে। বনাঞ্চল উজাড় হওয়ার ফলে মার খাচ্ছে সাগর। পৃথিবীর বিশাল বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। গত অর্ধ শতাব্দীতে এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার বর্গমাইল বনাঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বসবাস উপযোগী পৃথিবী গড়ে তুলতে আমাদের সচেতন হতে হবে এখনই। বনাঞ্চল রক্ষার পাশাপাশি নতুন বন সৃজনের উদ্যোগ নিতে হবে। আজকের বিশ্ব বন দিবসের এটিই হোক আমাদের প্রতিশ্রুতি।