বিশ্ব পানি দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৩, ২:২০:০৮ অপরাহ্ন

বিনয় ক্রোধকে প্রশমিত করে, ভদ্রতাগুণ শাস্তিকে পরিমিত করে। -স্টেচার
পানি ছাড়া প্রাণি বাঁচে না, পানি ছাড়া বাঁচে না বৃক্ষরাজি। তাই পানির আরেক নাম জীবন। তবে শুধুই পানি নয়, সেটা হতে হবে বিশুদ্ধ পানি। এই পানি নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আজ দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। প্রতি বছরই আজকের এই দিনে সারা বিশ্বে পালিত হয় দিবসটি। যখন এই দিবসটি পালিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অভাব দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের। বিশুদ্ধ পানির প্রধান উৎস নলকূপের পানিতে ধরা পড়েছে বিষাক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি। দেশের ৬১ জেলায়ই নলকূপের পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। আর্সেনিক আক্রান্ত পানি ব্যবহার করলে মানবদেহে মারাত্মক রোগের জন্ম হতে পারে। এছাড়া, প্রতি শুষ্ক মওসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি ওঠে না। এই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশে বিশ্ব পানি দিবসের গুরুত্ব অন্য যেকোন দেশের তুলনায় বেশি।
সবচেয়ে মারাত্মক দুঃসংবাদ হচ্ছে, ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া। ফলে দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে নলকূপে পানি উঠছেনা। তাই বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হচ্ছে দিন দিন। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে নিঃসন্দেহে। শুধু তাই নয়, ভূগর্ভস্থ পানির উৎসও দিন দিন সংকোচিত হচ্ছে। নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, জলাশয়, হাওর-বাওর, খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। গত চার দশকে দেশের জলাভূমি কমেছে কমপক্ষে ৬৫ লাখ হেক্টর। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশের জলাভূমি কমেছে ৭০ ভাগ। শুকিয়ে যাচ্ছে নদ নদীও। সারাদেশে কমপক্ষে আট হাজার কিলোমিটার নৌপথ ইতোমধ্যেই হারিয়ে গেছে। এককালের খরস্রোতা নদীগুলো এখন রয়েছে অস্তিত্ব সংকটে। আমাদের দেশের এই নাজুক পরিস্থিতিতে বিশ্ব পানি পরিস্থিতিও যে খুব ভালো নয়, সেটা বলতেই হয়। পানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে সারা বিশ্বে। বিজ্ঞানীরা অনেক আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন-এই পানি সংকট আগামীতে আরও ঘনীভূত হবে এবং ভবিষ্যতে যদি কোনো বিশ্বযুদ্ধ বাঁধে, তবে তা হবে পানি নিয়ে। বিশ্বের সকল দেশেই বিশুদ্ধ পানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এর কারণ হলো, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এর প্রভাবে বিশুদ্ধ পানির উৎসগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। বনজঙ্গল ধ্বংস করার ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে। গত অর্ধ শতাব্দী জুড়ে পৃথিবী থেকে ঊর্ধ্বাকাশে কার্বনের উৎক্ষেপন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ফলে জলবায়ুতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। বেড়েছে উষ্ণতা। আবহাওয়া হয়ে ওঠেছে শুষ্ক-উত্তপ্ত। সেই সঙ্গে নদীবাহিত শিল্প ও রাসায়নিক বর্জ্য দূষণ সৃষ্টি করছে নদী এবং সাগরে।
আজকের এই বিশ্ব পানি দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত সকলের জন্য বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা দেয়া। নদ নদী, হাওর, বিল, জলাশয়, পুকুর-ডোবা, খাল ভরাট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা সবচেয়ে জরুরি। পানি যাতে দূষিত না হয় সেই উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি পানিকে আর্সেনিকমুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ভূ-গর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমিয়ে ভূ-পৃষ্ঠের পানি গৃহস্থালীসহ অন্যান্য কাজে যাতে সর্বাধিক ব্যবহার করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উদাহরণ এক্ষেত্রে অনুসরণ করা যায়। বিশ্বের অনেক দেশেই ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। সমুদ্র ও নদনদীকেও দূষণের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে। শিল্প ও রাসায়নিক বর্জ্য যাতে নদী এবং সাগরে না ফেলা হয়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। সবার জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্তি হোক সহজলভ্য, বিশ্ব পানি দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।