জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি বিপদ থেকে রক্ষা করতে বনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মার্চ ২০২৩, ৪:২৫:৫৯ অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর : ‘সুস্থ শরীর সুস্থ মন, যদি থাকে সমৃদ্ধ বন’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সিলেটে আন্তর্জাতিক বন দিবস পালিত হয়েছে।
সিলেট বন বিভাগ এর উদ্যোগে দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।
সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. তৌফিকুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, মূলত মানুষকে গাছের গুরুত্ব বোঝাতেই আন্তর্জাতিক বন দিবসটি পালিত হয়। এর মধ্যে বৃক্ষরোপণও অন্তর্ভুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি বিপদ থেকে রক্ষা করতে বনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গাছ থাকলে নিরাপদ থাকবে পরিবেশ। অক্সিজেন বৃদ্ধির পাশাপাশি সবুজ বন পরিবেশের ভারসাম্যও বজায় রাখে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বন সংরক্ষণ নিয়ে অনেক বেশি কাজ করছেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সংরক্ষিত সব ধরনের বন থেকে যে ফেইলিং সেটা বন্ধের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন শুধু আমাদের অক্সিজেনই সরবরাহ করে না, মানুষ, প্রাণী, পোকামাকড়, বন্য প্রাণীকে আশ্রয় দেয় এবং কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণ করে ও আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করে। পৃথিবীতে জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে, অক্সিজেন সরবরাহ করতে, পর্যটনশিল্প বিকাশে ও শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে গাছপালা অর্থাৎ বনভূমি। তাই প্রত্যেকেরই উচিত নিজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে বেশি বেশি গাছ লাগানো।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মাহফুজা আক্তার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি এন্ড এনন্ডভায়রনম্যান্টাল সায়েন্স বিভাগের প্রফেসর ড. ফারজানা রায়হান। বক্তব্য রাখেন রাতারগুল সোয়ার্ম ফরেস্ট এর সহ-ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম, স্টেক হোল্ডারদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় উদ্যান খাদিমনগর এর সহ-ব্যবস্থাপনা নির্বাহী কমিটির সভাপতি মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এক দশক ধরে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উদযাপন করা হয় মূলত বন ও জঙ্গলযুক্ত এলাকা রক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং জনগণকে বন, বনজ দ্রব্য ও বন্যপ্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য। অন্য অর্থে দিনটি জীবনের জন্য গাছের গুরুত্বের একটি অনুস্মারক হতে চায়। কারণ, গাছ বা বৃক্ষ বিশুদ্ধ বাতাসের একটি উৎস এবং মানুষের জন্য নানা রকম ফল ও উপকরণ সরবরাহ করে।
বক্তারা বলেন, গাছপালা বা জঙ্গল রয়েছে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশে। ওই সব বন ও জঙ্গলে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ এবং ২ হাজারের বেশি আদিবাসী তাদের সংস্কৃতিসহ জীবিকা, ওষুধ, জ্বালানি, খাদ্য ও আশ্রয়ের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে। একটি বনে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ গাছ থাকে। একজন মানুষের শ্বাস নিতে বছরে ৭৪০ কেজি অক্সিজেন প্রয়োজন। গড়ে একটি গাছ বছরে ১০০ কেজি পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়। ফলে মানুষের বেঁচে থাকা আর পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা একা হাতেই সামলায় বনাঞ্চল।
অনুষ্ঠানে ফরেস্ট বিভাগের কর্মকর্তারা, উপকারভোগী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথি উপকারভোগী হবিগঞ্জে চুনারুঘাট উপজেলার কালিনগর গ্রামের মাসুক মিয়া, ডেউয়ারতলী গ্রামের মাহমুদুর রহমান ও মো. মোর্শেদ মিয়া প্রত্যেককে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৯ টাকা করে এবং সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মো. আব্দুল ওহাব, অমর বিশ্বাস ও শেখ ফয়জুর রহমান ফজরকে ২৫ হাজার ৯৭২ টাকা করে লভ্যাংশের টাকা প্রদান করেন।
এদিকে শাবি প্রতিনিধি জানান, সকাল ১০টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ‘বন ও স্বাস্থ্য’ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের উদ্যোগে ও ‘ইউনাইটেড স্টেটস ফরেস্ট সার্ভিসেস’র সহযোগিতায় এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রোমেল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) মোমিনুর রশিদ আমিন।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে দেশে জিডিপির প্রায় ৬% আসে বন ও বনজ পণ্য থেকে মন্তব্য করে বলেন, বন বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এটি পানি বিশুদ্ধকরণ, ভাঙনরোধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণেও অবদান রাখছে। গত কয়েকবছরে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সুন্দরবন অনেক অবদান রেখেছে। তাই বন রক্ষায় আমাদের সোচ্চার হতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন করতে হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার সরকার, অরণ্যক ফাউন্ডেশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইউএসএফএসের এশিয়া-প্যাসিফিক প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাস্টিন গ্রীন। এছাড়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নারায়ন সাহা।
এর আগে, সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ‘ই’ থেকে বন দিবস উদযাপন উপলক্ষে ক্যাম্পাসের প্রধান সড়ক সমূহে একটি র্যালি বের করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম এবং বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। র্যালি শেষে উপাচার্যের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের পাশে বৃক্ষরোপণ করা হয়।
এছাড়া সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের করিডোরে বিভাগের পক্ষ থেকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পোস্টার প্রেজেন্টেশন করা হয়। পরে বিজয়ীদের হাতে অতিথিরা ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।