বিশ্ব আবহাওয়া দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মার্চ ২০২৩, ৪:৩১:৪৮ অপরাহ্ন
যাদের একটা গভীর অন্তর্দৃষ্টি আছে, তাদের কাছে কোন কিছুই অদৃশ্য বা অজেয় থাকে না। -আল হাদিস
আজ বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। ‘আব’ মানে জল বা পানি। আর ‘হাওয়া’ মানে বাতাস বা বায়ু। অর্থাৎ আবহাওয়া হচ্ছে জলবায়ু। জলবায়ু নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতি বছর মার্চ মাসের ২৩ তারিখ পালিত হয় বিশ্ব আবহাওয়া দিবস। ১৯৫১ সাল থেকে সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এর আগের বছর এই দিনে গঠন করা হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। এটি জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা হিসেবে মর্যাদা পায়। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আবহাওয়ার প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করেই মানুষের জীবন প্রবাহ আবর্তিত হচ্ছে। আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন। আবহাওয়ার গতি প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেই মানুষকে এগোতে হয় সামনে, সাজাতে হয় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে যতো সচেতনতা সৃষ্টি করা যাবে, ততোই দুর্যোগ, দুর্ভোগ এড়িয়ে চলার সুযোগ খুঁজে পাওয়া যাবে।
বিশ্বের একশ’ ৯১টি দেশ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সদস্য। ১৮৭৩ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থার ধারাবাহিকতায়ই উৎপত্তি হয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা। এবার যখন সারা বিশ্বে ওই দিবসটি পালিত হচ্ছে তখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। আর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছে আরেকটি বিষয়- প্রাকৃতিক দুর্যোগ। জলবায়ু যতোই পরিবর্তন হবে, ততোই বেড়ে যাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা। বিজ্ঞানীদের বক্তব্য হচ্ছে, বিশ্ব উন্নয়নের যেসব বৈরি প্রভাব-প্রতিক্রিয়া স্পষ্ট হয়ে উঠছে আগামিতে তা বাড়বে আরও দ্রুততর গতিতে। বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে টালমাটাল অবস্থা। সাগরের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলবর্তী দেশগুলো পড়েছে বিপর্যয়ের মুখে। ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের আবহাওয়া পরিবর্তন সম্পর্কিত আন্তঃসরকার প্যানেল বিষয়ক যে দলিল তৈরি হয়েছে তাতে বলা হয়- তাপপ্রবাহ, ঝড়-বৃষ্টি, সাগরের জলোচ্ছ্বাস এবং উষ্ণমন্ডলীয় সামুদ্রিক ঝড়ের মতো নানা প্রাকৃতিক দুর্বিপাক-এর মাত্রা আরও বাড়তে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে কমপক্ষে ২০ ফুট। তলিয়ে যাবে বিশ্বের সাগর, বেলা ভূমি, উপকূল। এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি বিশ্বের উন্নত দেশগুলো। অথচ আজ থেকে দুই তিন দশক আগেও এই অবস্থা ছিলো না। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে সম্পদশালী দেশগুলো তাদের ব্যবসায়িক লাভের জন্য বৈশ্বিক আবহাওয়াকে ঠেলে দিয়েছে দুর্যোগের মুখে। যদিও এর জন্য তাদেরকে খুব একটা ভুগতে হচ্ছে না। অপরদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যাদের ভূমিকা নগণ্য সেই অনুন্নত দেশগুলোকেই এই জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে হচ্ছে বেশি। উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা যায়। এখানে প্রতি বছরই ঘটছে নানা দুর্যোগ। এর কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন। যে কারণে আগামি অর্ধ শতাব্দির মধ্যে বাংলাদেশটাই সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাবে বলে অনেক বিজ্ঞানী সতর্ক বাণী দিয়েছেন।
সে যা-ই হোক, এই কথাটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জলবায়ুর পরিবর্তনের নেপথ্যে রয়েছে মানুষেরই হাত। তাছাড়া, জলবায়ুর পরিবর্তন কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা মানে না, সুতরাং এই ব্যাপারে বিশ্বের সকল দেশকেই সতর্ক হতে হবে। এর বিকল্প নেই। আবহাওয়ায় এই পরিবর্তনে সচেতন হতে হবে আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি। পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে অসময়ে বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি, শীতকালের স্থায়িত্ব কমে যাওয়া ইত্যাদি পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষিতে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। তাই এ ব্যাপারে আমাদেরকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে আজকের বিশ্ব আবহাওয়া দিবস আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, ইউনাইটেড ন্যাশনাল ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ‘কিয়োট প্রটকল’ এ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। এরই আলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় জাতীয় কৌশল প্রণয়ন জরুরি। তাছাড়া, জনগণকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সঠিকভাবে অবগত করানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে।