সুনামগঞ্জে নান্দনিক ‘দিলশাদ-হাজেরা ওয়েলফেয়ার সেন্টার’র উদ্বোধন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মার্চ ২০২৩, ৩:১৬:২২ অপরাহ্ন
এর মাধ্যমে এ অঞ্চল আরো আলোকিত হয়ে উঠবে ॥ সমাজকল্যাণ মন্ত্রী
কাউসার চৌধুরী
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম আহমদাবাদে আধুনিক ডিজাইনের নান্দনিক মসজিদ ও এতিমখানা উদ্বোধন করা হয়েছে। আধুনিক স্থাপত্যের সঙ্গে মুসলিম ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে তৈরি এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদ ও এতিমখানার সুরম্য ভবনের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ সবাই। সরকারের অতিরিক্ত সচিব, খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী তার পিতা-মাতার নামানুসারে “দিলশাদ-হাজেরা অরফানেজ এন্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার” নামে এতিমখানাটি গড়ে তুলেছেন। এতে এতিম শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি হিফজখানা,কুরআন শিক্ষা ও গবেষণা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে। কেবল শিশুরাই নয় সকল বয়সী নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে পৃথক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। এখান থেকে তাদেরকে ধর্মীয় জ্ঞানের সাথে সাথে কর্মমুখী নানা প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। বহুমুখী এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের উপস্থিতিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এম.পি আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। এ সময় জিল্লুর রহমান চৌধুরীর শতবর্ষী পিতা দিলশাদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এম.পি বলেন, সুনামগঞ্জের পিছিয়ে থাকা এই জনপদের এতিম শিশুসহ সকল পর্যায়ের মানুষদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হয়েছে। দিলশাদ-হাজেরা অরফানেজ এন্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে এই অঞ্চল নিঃসন্দেহে আলোকিত হয়ে উঠবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ গড়তে এখান থেকে ভালো মানের শিক্ষা দেয়া হবে। এখানকার শিশুরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী (বাবুল)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে শেখ হাসিনা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে পাকিস্তান প্রেমীদের সহ্য হচ্ছে না। বিএনপি-জামাত দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে দেশ বিরোধী নানা ষড়যন্ত্র করছে। দেশ বিরোধী এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আপামর জনসাধারণকে রুখে দাঁড়াতে হবে। সজাগ থাকতে হবে তাদের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। পাকিস্তানপ্রেমিরা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে ভেবেছিল দেশকে আবারও পাকিস্তান বানিয়ে ফেলবে। কিন্তু তাদের সেই দুঃস্বপ্ন পূরণ হয়নি। বরং জাতির পিতার কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে চলেছে।
অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরীর কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, আমার জামাতা হিসেবেই নয় একজন সৎ, দক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে জিল্লুরকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। আজকে তার পিতা ও শ্বশুরকে এক সাথে নিয়ে এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন নিঃসন্দেহে গৌরবের।
গেস্ট অব অনারের বক্তব্যে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, সিলেটের কমিশনার হিসেবে যোগদানের পর বন্ধু জিল্লুর রহমান চৌধুরীর এই প্রতিষ্ঠান এখান দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় দূর থেকে দেখেছি। এর প্রতিটি ইট বালুর সাথে আমারও পরিচিত মনে হয়। কারণ জিল্লুর রহমান চৌধুরী কেবল বন্ধুই নয় আমার সহকর্মীও। প্রতিষ্ঠানটি আমাদের জন্যে একটি উদাহরণ। ইচ্ছে ও সাহস থাকলে এত বড় পদে দায়িত্ব পালন করেও এরকম প্রতিষ্ঠান করা যায়। প্রশাসনের এ পর্যায় পর্যন্ত আসাটা অনেক কঠিন। তার যোগ্যতা তাকে এখানে এনে দিয়েছে। কারণ সে জাতির জন্য, মানুষের জন্য চিন্তা করে। অনেক কর্মকর্তা আছেন বড় কর্মকর্তা হয়ে গেলে এলাকার আর খোঁজ খবর নেন না, রাজধানী কেন্দ্রীক হয়ে যান। এক্ষেত্রে জিল্লুর ব্যতিক্রম। তার এই প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলকে আলোকিত করবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, একজন মুসলমানের মৃত্যুর পরে সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। কেবল ভালো কাজ সদকায়ে জারিয়া হিসেবে থাকে। এই প্রতিষ্ঠান সদকায়ে জারিয়া হিসেবে থাকবে। জিল্লুর রহমান চৌধুরী চিন্তা করেই এরকম একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পেরেছেন। তার এই উদ্যোগে আমাদের সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত থাকবে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ বলেন, এরকম প্রতিষ্ঠান এলাকাকে, সমাজকে আলোকিত করবে। আদর্শ মানুষ তৈরি করবে। এই অঞ্চলের মানুষ তথা দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন,আমাদেরকে কিছুদিন পরপর খরা, বন্যা, শিলা বৃষ্টির সাথে যুদ্ধ করেই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। এরকম যুদ্ধ করে বেঁচে উঠে এখান থেকে অনেক গর্বিত সন্তান তৈরি হয়েছেন। জিল্লুর রহমান চৌধুরী এরকমই একজন। এরকম প্রতিষ্ঠান সমাজকে আলোকিত করে তুলবে। তিনি তার বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতা ও দুই মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকার একটি বড় অংশ এই প্রতিষ্ঠানে দেয়ার ঘোষণা দেন।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী (বাবুল) বলেন,এখানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম শিক্ষা দেয়া হবে।বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হবে। মানুষ চলে গেলেও তার স্মৃতি রয়ে যায়।এই প্রতিষ্ঠানও তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান।এলাকার উন্নয়নের নেপথ্যের কারিগর হিসেবে তিনি জিল্লুর রহমান চৌধুরীর বিভিন্ন প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুজ্জামান আহমেদ, মানবকল্যাণ পদক প্রাপ্ত আব্দুল জব্বার জলিল, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আনিসুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, অধ্যাপক মো.নুরুজ আলী,সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক রঞ্জন তালুকদার, টুকেরবাজার মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল ওয়াহাব বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফিজ সালমান আহমেদ।
অনুষ্ঠানে সমাজসেবা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম,সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. হোসেন আহম্মেদ , সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর এপিএস মো. মিজানুর রহমান, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাদিউর রহিম জাদিদ, জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিৎ দেব, জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রঞ্জন চন্দ্র দে, সুনামগঞ্জ সদর থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, আইনজীবী হাবিবুর রহমান হাবিব, শিক্ষক কামাল আহমদ আম্বিয়া,সিলেট প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ও তাড়ল উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি কাউসার চৌধুরী, সংগঠক জাহেদ আহমদ, ব্যবসায়ী রেজাউল করিম সুয়েব, সমাজসেবী সুফিয়ান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।