জাতীয় গণহত্যা দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মার্চ ২০২৩, ১:১৫:৩৭ অপরাহ্ন
ভাষা আত্মীয়তার আধার; তা মানুষের জৈব-প্রকৃতির চেয়ে অন্তরতর। -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মার্চ বাঙালির অগ্নিশপথের মাস। মার্চ স্বাধীনতার মাস। মার্চের ২৫ তারিখ আজ। মার্চ এলেই প্রতিটি বাঙালির মন উচ্ছ্বসিত হয় আনন্দে, ব্যথিত হয় কষ্টে। এই মার্চেই বাঙালিরা বজ্রমুষ্টি উত্তোলিত করে অগ্নিশপথ নেয় বিদেশী বর্গীদের তাড়িয়ে ৫৪ হাজার বর্গমাইলের সোনার বাংলা স্বাধীন করার। এই মার্চেই বাঙালিরা যুদ্ধে নামে এবং দীর্ঘ ন’মাস মরণপণ লড়ে বিশ্বের বুকে নতুন মানচিত্রের জন্ম দেয়। একাত্তরের সাতই মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন স্বাধীনতার ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ আর মার্চের ২৫ তারিখ মধ্যরাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে পশ্চিমা হায়েনারা। ওই রাতে তারা নির্বিচারে মানুষ মারে। সেটা ছিলো বিশ্বের ইতিহাসে একটি ভয়াবহতম গণহত্যা। আজ সেই দিন। ৫২ বছর আগের সেই মর্মবিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে আজ দেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় গণহত্যা দিবস।
২০১৭ সাল থেকে আজকের দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। গণহত্যা হলো একটি জাতি গোষ্ঠী বা একটি সম্প্রদায়কে নির্মূলকরণ প্রক্রিয়া। একাত্তরের ২৫ শে মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানায় তখনকার ইপিআর সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা করে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর। শুরু হয় হত্যাযজ্ঞ। চলতে থাকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই ন’ মাসে তারা ৩০ লাখ বাঙ্গালীকে হত্যা করে, তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করে। আর এই রক্তস্নাত পথ বেয়েই আসে হাজার বছরের কাংখিত স্বাধীনতা। পাকিস্তানিরা চেয়েছিলো সবুজ শ্যামল বাংলার জনপদকে জনমানবশূন্য বিরান ভূমিতে পরিণত করতে। তাই তাদের বুলেট-বেয়নেট থেকে শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ কেউই রেহাই পায়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক হাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত। একাত্তরের পঁচিশে মার্চ থেকে শুরু করে ন’ মাসব্যাপী পাকিস্তানীরা যেসব বর্বরতম হত্যাকা- চালিয়েছে, সেটা আন্তর্জাতিকভাবে ‘গণহত্যা’ বলেই স্বীকৃতি পাওয়া উচিত বলে বুদ্ধিজীবীগণ মনে করেন।
সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, নানা কারণে বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতায় বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি। তবে এ বছরসহ বিগত ছয় বছর আজকের দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করায় দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবী আরও জোরালো হয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ করা জরুরি। ২০১৫ সাল থেকে জাতিসংঘ ৯ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে। একইভাবে বাংলাদেশ চাইছে ২৫ শে মার্চের কালরাত্রির গণহত্যাকে যেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়। আমরা আজকের এই জাতীয় গণহত্যা দিবসে একাত্তরের গণহত্যার শিকার শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।