স্বাধীনতা দিবসে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের প্রত্যয়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মার্চ ২০২৩, ১২:৫১:৫৮ অপরাহ্ন
বিদ্যা সমাজের অলঙ্কার স্বরূপ এবং শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার জন্য অমোঘ কবচ। -আল হাদিস
পলাশ-শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম আবিরে সেজেছে প্রকৃতি। যার সঙ্গে একাকার প্রতিটি বাঙালি। আজ আনন্দের দিন। একটি ভূ-খন্ডের আনন্দে উদ্বেলিত হওয়ার দিন। আজ একটি মানচিত্র, একটি পতাকার জন্ম নেয়ার অগ্নিশপথের দিন। ক্যালেন্ডারের পাতায় রক্তিম অক্ষরের একটি দিন। আজ আমাদের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাংলা আর বাঙালির ইতিহাসের অবিস্মরণীয় এই দিনে স্বাধীনতার অমর মন্ত্রে বলিয়ান হয় জাতি। আমাদের জন্মভূমি অভ্যুদয়ের ইতিহাসে চিরকাল অমোচনিয় থেকে যাবে দিনটি। এই দিনে বাঙালিরা নিজেদের জন্মভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দখলদার পশ্চিমা হানাদারদের বিরুদ্ধে। বাংলার কৃষক শ্রমিক মজুর খেটে খাওয়া মানুষেরা যার যা আছে তাই নিয়ে বিশ্বের একটি শক্তিশালী যোদ্ধাবাহিনীর সামনে দাঁড়ায়। অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের বিরুদ্ধে মরণপণ যুদ্ধ করে বাঙালিরা ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। তাই জাতি প্রতি বছর জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপন করে আজকের দিনটি।
বাঙালিরা হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করে অযুত ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে। ব্রিটিশ আমল থেকেই শোষণ নির্যাতন আর অবহেলার শিকার হতে থাকে বাঙালিরা। এই ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে জেগে ওঠে এদেশের মানুষ। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দীপিত করেন। তারা সোচ্চার হয়; উজ্জীবিত হতে থাকে নিজেদের অধিকার আদায়ে। ব্রিটিশের দু’শ বছরের শাসন আর পাকিস্তানের ২৪ বছরের শোষণ বঞ্চনার ঘৃণিত অধ্যায় পেরিয়ে এই দেশের মানুষ বিজয়ের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়। একাত্তরের পঁচিশে মার্চের কালো রাতে হানাদার বাহিনী যখন বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে, তখন নিরস্ত্র অথচ স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দীপ্ত বাঙালিদের রুখে দাঁড়ানো শুরু। দীর্ঘ ন’মাসের জীবনবাজি যুদ্ধ শেষে লাখো প্রাণের রক্তের বিনিময়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামের ভূ-খন্ডের, জন্ম হয় একটি পতাকার, জন্ম হয় একটি জাতির। যাদের রক্তে আমাদের এই অর্জন, সেই বীর শহীদদের প্রতি রইলো আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম। অফুরন্ত সমবেদনা যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি। একাত্তর সালের আজকের এই দিনে যে যুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো, নয় মাস পর ষোলোই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি ঘটে। প্রতি বছরই ছাব্বিশে মার্চ এবং ষোলোই ডিসেম্বর উৎসবে মেতে ওঠে এদেশের মানুষ। যে স্বপ্ন নিয়ে এদেশের মানুষ পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো, সেই স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয়ে যায় নি এখনও। জাতির পিতার স্বপ্নের সেনার বাংলা গড়ে তোলার কর্মযজ্ঞে সদা ব্যস্ত রয়েছেন তাঁরই সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁরই নেতৃত্বে সম্মৃদ্ধ দেশ গঠনে জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। আসল কথা হলো এই জনগোষ্ঠী থেমে থাকবে না। বাঙালি থেমে থাকার জাতি নয়। একাত্তরে এই সবুজ শ্যামল বাংলার মানুষ বিজয় ছিনিয়ে আনতে ভুল করে নি। প্রিয় মাতৃভূমির সমৃদ্ধি অর্জনে তারা হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হবেই। সেই আলোকরেখা এখন দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ-এ উন্নীত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে। এ সময়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, নিখাদ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের কল্যাণে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দেয়ার মানসিকতা গড়ে তোলা। আজকের স্বাধীনতা দিবসে আমরা আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং নিরন্তর শ্রমে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর মাধ্যমে স্বাধীনতার চেতনায় নিজেদের গড়ে তোলার শপথ নেবো।