প্যাকেজের চড়া মূল্যেও সিলেটে হজ যাত্রী বেড়েছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মার্চ ২০২৩, ৫:৫৯:৪৬ অপরাহ্ন

দুর্ভোগ লাঘবে ওসমানী বিমানবন্দর থেকে ৬টি হজ ফ্লাইট চায় হাব
আনাস হাবিব কলিন্স
হজ প্যাকেজের মূল্য চড়া হলেও সিলেটে এবার হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ অঞ্চলের হজ যাত্রী পরিবহনে এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৬টি হজ ফ্লাইট চালুর দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মাধ্যমে যাত্রী দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হলে বলে তাদের মন্তব্য।
হজ্ব এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু জানান, নানা জটিলতা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সিলেট অঞ্চলের প্রায় আড়াই হাজারের বেশি হজযাত্রী রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। আগামী ২৭ মার্চ পর্যন্ত হজ নিবন্ধনের সর্বশেষ সময় পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে তার আশা। সিলেট থেকে কমপক্ষে ৬টি হজ্ব ফ্লাইট চালুর দাবি এ হাব নেতার। তার মতে, সিলেট-জেদ্দা রুটে ৪টি এবং সিলেট-মদিনা রুটে আরো দুটি ফ্লাইট চালুর দাবি তাদের। এটা হলে সিলেটের হজযাত্রীদের আর ঢাকায় যেতে হবে না। ফলে তাদের দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব হবে।
সিলেটের হজ সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, করোনা মহামারির কয়েক বছর আগ থেকেই সিলেট অঞ্চলের হজ এজেন্সিগুলো তাদের নির্ধারিত হজ যাত্রীর কোটা পূরণ করতে পারছে না। প্রাক নিবন্ধন সংক্রান্ত অসচেতনতাসহ নানা কারণে কমে যায় সিলেট অঞ্চলের হজযাত্রী সংখ্যা। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সরবরাহ সংক্রান্ত জটিলতায় ২০২০ সালে হজ গমনেচ্ছুরা পড়েন চরম বেকায়দায়। সে সময় সরকার কয়েক দফায় হজ রেজিস্ট্রেশনের তারিখ বাড়ালেও বৈশ্বিক মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে শেষ রক্ষা হয়নি। পরবর্তীতে ২০২২ সালে সৌদি সরকার সীমিত আকারে পবিত্র হজ পালনের অনুমোদন দেয়। সবমিলিয়ে সারাদেশে ৫৮ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে সিলেট অঞ্চলের ১ হাজার ৬শ’ জন হজে গমণের সুযোগ পান।
আটাব এবং হাব সিলেট জোন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে সিলেট অঞ্চলের হজযাত্রী ছিলেন ২ হাজারের ওপর। ২০১৮ সালে প্রাক নিবন্ধন জটিলতার কারণে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৯শ’ জন। ২০১৭ সালে সিলেট অঞ্চলের হজযাত্রী ছিলেন ৩ হাজার ৪শ’ জন।
হাব সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি ও লতিফ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী জহিরুল কবির চৌধুরী শীরু আরো জানান, সিলেট অঞ্চলে প্রায় অর্ধশত ট্রাভেল এজেন্সি হজযাত্রী সংগ্রহ করলেও নির্ধারিত কোটা পূরণ করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। দু’তিনটি এজেন্সি মিলে যে কোন একটি এজেন্সির নামে হজের নিবন্ধন কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। গত সপ্তাহ পর্যন্ত ইকরা ট্রাভেলসের মাধ্যমে ১৫৬ জন, এলাইট ট্রাভেলসের মাধ্যমে ২৩৯ জন, খাজা এয়ার সার্ভিস ১৪৯ জন, আল মনসুর ট্রাভেলস ১৩৬, আল এহসান ট্রাভেলস ১৯৮ জন, সিটি ওভারসিজ ২৭২ জন, নিব্রাস ট্রাভেলস ২১৮ জন, শিপ্লু ওভারসিজ ১৩৯ জন, লতিফ ট্রাভেলস ২৯২ জন, সানসাইন ট্রাভেলস ২৯২ জন এবং সিপার এয়ার ওয়েজের মাধ্যমে ১০৭ জন হজযাত্রী নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই-এর সাবেক পরিচালক ও সিপার এয়ার সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, সরকার হজযাত্রী বহনে সকল এয়ারলাইন্সকে অনুমোদন দিলে হজযাত্রা অনেকটা সহজ হতো। বিষয়টি এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি সিলেট অঞ্চলের হজযাত্রীদের সুযোগ সুবিধায় সিলেট থেকে সরাসরি হজ ফ্লাইট নিশ্চিত করার দাবি তাঁর।
এসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সিলেট চ্যাপ্টারের সভাপতি জিয়াউর রহমান খান রেজওয়ান জানান, বিশ্বের অনেক দেশকেই হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া নিয়ে এমন বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে না। ফলে দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। এ সংকট কাটাতে সরকারের আরো জোরালো ভূমিকার তাগিদ দেন তিনি।
আটাবের সিলেট চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি আব্দুল জব্বার জলিল বলেন, হজের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকারকে আরো নমনীয় হতে হবে। এ ব্যাপারে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নিলে আগামীতেও হজযাত্রীরা হয়রানির শিকার হবেন।
হাব ও আটাব সিলেট চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোতাহের হোসেন বাবুল বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির উত্তরণ হলেও হজ ব্যবস্থাপনায় সরকারের উদারতার অভাবে হজযাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
হজের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণ হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার। এর মধ্যে ১৫ হাজার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করবেন। চলতি মৌসুমে হজের সেবার খরচ সৌদি সরকার কমানোর পর বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য হজের খরচ কমেছে ১১ হাজার ৭২৫ টাকা। ফলে হজ প্যাকেজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭১ হাজার ২৯০ টাকা। একইসঙ্গে হজ নিবন্ধনের সময় আগামীকাল ২৭ মার্চ পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল বুধবার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সৌদি সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।