স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাক্সক্ষা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২৩, ৩:২৬:০০ অপরাহ্ন
মো. আব্দুল ওদুদ
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি মহান মুক্তিযুদ্ধের ফসল। বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আত্মপরিচয়ের সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। বিপদে আপদে এবং সুখে-দুঃখে এক হয়ে বেঁচে থাকার ব্যাপক আশা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ নামে রাষ্ট্র গঠনে তাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। বৎসরের পর বৎসর ধরে এ দেশের ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিকরা এই আশা বুকে নিয়ে নানা বিদ্রোহ সংগ্রাম করেছেন। আর আশার সূত্র ধরেই ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আসে ৭১।
মুক্তিযুদ্ধের সেই সময়ে সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ মিলে বাংলাদেশের অসহায় ও দুঃখী মানুষের। সেই সুযোগে সর্বোচ্চ ত্যাগ করেই আমরা অর্জন করি স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। যুবকরাই এই বিজয় অর্জনে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সেই দিক বিবেচনায় রেখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। আমাদের মূল পরিচয় হচ্ছে আমরা বাংলাদেশের জনগণ ও আমরা খাঁটি বাঙালি। মুসলিম ও অমুসলিম সেই সময়ে কোন বিভক্ত করা হয়নি। দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য যে, পরবর্তী সময়ে সংবিধানে বিভাজন আনা হয়। ১৯৮৮ সালে স্বৈরাচার ও বিশ্ব বেহায়া তখনকার সরকার রাষ্ট্র ধর্মের নামে বাংলাদেশের মানুষকে বিভক্ত করে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সহ উনার পরিবারের সকল সদস্যকে (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বাদে) ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট জঘন্যভাবে হত্যা করার পরই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের আশা আকাক্সক্ষা নির্মূল করে দেওয়ার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ারই অংশ হিসেবে সংবিধানে যুক্ত করা হয় জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের বদলে যোগ করা হয় জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের কথাগুলো। অবশ্যই স্বাধীনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ তবে এইটা মুক্তির প্রতিশব্দ কোন অবস্থাতেই হয় না।
বাংলাদেশের আপামর জনগণের আশা আকাক্সক্ষা ছিল দেশ স্বাধীন হলে, অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুব্যবস্থা হবে। পাশাপাশি জনগণ আশা করেছিলেন জনগণের কর্তৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সর্বক্ষেত্রে মানবিকতা বাস্তবায়ন হবে। আইনের চোখে সবাই সমান থাকবেন।
কোন মানুষের দয়ায় নয় সাংবিধানিক অধিকারের জোরেই সকল মানুষ সমান সুযোগ সুবিধা পাবেন। সংবিধানের মূল চেতনায় এদেশের কৃষক শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, দরিদ্র, হতদরিদ্র সহ সব মানুষেরই সমান উন্নয়নের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে। সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে সাম্য ভিত্তিক অর্থনীতি ও সমাজ গড়ার কথা যুক্ত করা হয়েছে। গ্রামে-শহরে পুরুষ নারীত্বে ও শ্রেণীেেত ব্যবধান কমানোর প্রতিশ্রুতির স্থান পায়, সংবিধানে গুরুত্বের সহিত স্থান পায় নারী অধিকার ও পরিবেশ বিষয়ে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩ বছর ১৫ দিনের শাসনামলে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করেছিলেন। যেমন: নতুন একটি সংবিধান প্রণয়ন, ইসলামী ফাউন্ডেশন গঠন, প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারীকরণ, শিক্ষা কমিশন, কৃষি উন্নয়নের জন্য নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, আধুনিক কৃষি উপকরণ সংগ্রহ সহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যাবলি। তিনি সর্বশ্রেণির মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য অল্প সময়ে প্রায় সবকিছু করেছিলেন। উনার সময়ে দেশের অবস্থা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আশা, আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করে সোনার বাংলাদেশ গঠন করতে চেয়েছিলেন।
চিন্তার বাহিরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশী বিদেশী ও স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত না হলে অবশ্যই উন্নয়নের সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তোলতে তিনি সফল হতেন। এবং এদেশের নির্যাতিত অসহায় গরীব মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতো। ১৯৭৫ সালের পর আমাদের বাংলাদেশ চলে যায় প্রতিক্রিয়াশীল ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে। ব্যাপক যৌথ আন্দোলন সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ দেশবাসী ফিরে পান। সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, শিশু ভাতা, মাতৃভাতা প্রচলন করেন। ১৯৯৮ সালে ভয়াবহ বন্যা থাকা সত্ত্বেও উনার শাসন আমলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
দীর্ঘ সাত বছর পর ২০০১ সালে শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসার পর দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা শুরু হয়। সমাজ ও অর্থনীতির অবস্থা অত্যন্ত সফলতার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্ব ব্যাংক ও অনেক দাতা দেশ অর্থ প্রদানে অনিহা প্রকাশ করার সাথে সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন যে, বাংলাদেশের টাকা দিয়ে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করবো। বর্তমানে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে সামনের দিকে। বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বিশ্ব পরিসরে স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যুক্ত হয়ে জাতিসংঘ থেকে প্রাথমিক ছাড়পত্র পেয়েছে আমাদের এই বাংলাদেশ।
ইতোমধ্যে আমাদের সব অর্জন ও সফলতা বিশ্ববাসীর নজরে এসেছে। পৃথিবীর অনেক দেশ এখন আমাদেরকে অনুসরণ করছে। আমরা অতীতের দিকে থাকালে দেখতে পাই ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধানে পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব বহাল রাখার জন্য সংখ্যানুপাতের কথাটি বাদ দিয়ে সংখ্যা সাম্যের কথা লিখা হয়েছিল। ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তানের লোকসংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৫০ লাখ ও পশ্চিম পাকিস্তানের লোকসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ। এই বাস্তবতাকে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ (ওয়ালী খান ব্যতিত) ও সেনা বাহিনীর জেনারেলরা মেনে নিতে পারেন নাই। যার জন্য ১৯৫৬ সালে প্রণীত সংবিধানে সংখ্যা সাম্যের কথা লিখা হয়েছিল। যার ফলে সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫০ পূর্ব পাকিস্তানের ও ১৫০ পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সেই সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ইসকন্দর মির্জা। আইয়ুব খানের ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনের পূর্বে ২ বছরের মধ্যে ইসকন্দর মির্জা ৪ বার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন করেন। উনারা হচ্ছেন যথাক্রমে: মোহাম্মদ আলী, সোহরার্দী, চন্ডীগড়, ফিরোজ খান। এতেই রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার আবাস ফুটে উঠেছিল। পাকিস্তানের শুরু থেকেই হযবরল অবস্থা বিরাজমান ছিল। কায়দে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও উনার সেনাপতি লিয়াকত আলী খানকে সাথে নিয়ে পাকিস্তান করার জন্য যে সংগ্রাম করেছিলেন তার সুফল পশ্চিম পাকিস্তানীরা ভোগ করতে চেয়েছিল। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান গঠিত হলে পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন করার মাধ্যমে আমাদেরকে সবদিক দিয়ে শোষণ করা শুরু করে।
মুসলিম লীগের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়েছিল। সে মুসলিম লীগের অবস্থা ধারাবাহিকভাবে শোচনীয় পর্যায়ে চলে আসে। পশ্চিম পাকিস্তানের পিপিপিই বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠে। পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগও শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে।
সেই সময় শেখ মুজিবের প্রণীত ৬ দফাকে মেনে নিলে পাকিস্তানকে রক্ষা করার সম্ভাবনা ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৭ কোটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা একেবারেই যে নাই, তা ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় প্রমাণিত হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান থেকে ১ হাজার মাইল দূরে পশ্চিম পাকিস্তান অবস্থিত। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যে কত অসহায় ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত শুধু রক্তই দিতে হলো বাঙালি জাতিকে।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারও মেয়াদপূর্ণ করতে পারলো না। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় বাঙালিদেরকে হত্যা, জেল জুলুম অত্যাচার নির্যাতন করে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। ধর্মের নামে তারা যা করেছিল তাকে অধর্ম বলা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু ৫৪ বছর বয়সে ২২ বারই জেলে ছিলেন। বাংলাদেশের বাম দলের নেতাদেরকেও সেই সময় জেল, ঝুলুম ও অত্যাচারের শিকার হতে হয়।
১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর ইয়াহিয়া পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল করার ঘোষণা করেন। এতে বলা হয় এক ব্যক্তি এক ভোট এর অধীনে ১৯৭০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয়, গণপরিষদের নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রায় সব দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭০ সালের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ১৮০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৬৭ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। প্রাদেশিক পরিষদে ১টি আসনে বিজয়ী হয় ন্যাপ (মোজাফফর) প্রার্থী। পাকিস্তানে পিপলস পার্টি ১৩৮টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৮১ আসনে জয়লাভ করে হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।
১৯৭১ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারিতে জেনারেল ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের বসার তারিখ ৩রা মার্চ ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ১ মার্চ রাষ্ট্রপতি এক ঘোষণা বলে সেই অধিবেশন বাতিল করেন। জেনারেল ইয়াহিয়া একদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ষড়যন্ত্র করছিলেন কিভাবে আমাদেরকে দমন করা যায়। আলোচনা ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলছিল। এই আলোচনা ছিল ভাওতাভাজি ও লোক দেখানো। ২, ৩ ও ৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে অনেক লোককে হত্যা করেছিল। অনেক লোককে আহত করেছিল। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) বিশাল জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো তবুও এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো। ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো বলেছিলেন- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী হত্যা করতে লাগলো ঢাকাবাসীকে। সর্বশ্রেণির শত শত মানুষ এই হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হলো। উনাকে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ যথাক্রমে মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী, মণি সিংহ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আ.স.ম আব্দুর রব, শাহজাহান সিরাজ, বিমল বিশ্বাস, দিলীপ বড়ুয়া, পীর হবিবুর রহমান, মনোরঞ্জন ধর, বারিন দত্ত (ছদ্মনাম আব্দুস সালাম), আব্দুল কদ্দুছ মাখন, নূরে আলম সিদ্দীকি, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফর এবং আওয়ামী লীগের সব জাতীয় নেতৃবৃন্দ ভারতে চলে যান। এবং বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় নিলেন। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। বাংলাদেশের হাজার হাজার ছাত্র, যুবক, কৃষক সহ সর্বশ্রেণির মানুষ সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হলেন কর্ণেল এম.এ.জি ওসমানী। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হল। ন্যাপ (ভাসানী) সভাপতি মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ন্যাপ (মোজাফফর) সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, কংগ্রেস সভাপতি মনোরঞ্জন ধর, পি.পি.বি. সভাপতি কমরেড মণি সিং ও আওয়ামী লীগ নেতা ফনী ভূষণ মজুমদারকে নিয়ে ৫ সদস্যের মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা করা হয়। ৩০ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারালো, ২ লক্ষ মা-বোন ইজ্জত দিলেন, প্রাণ দিয়ে ইজ্জত দিয়ে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম ও বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। জাতি প্রতি বৎসর যথাযোগ্য মর্যাদার সহিত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করে আসছে। এখন স্বাধীনতার পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে দেশবাসীর প্রত্যাশিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে হবে।
লেখক : মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, কলামিস্ট।