অনৈতিকতা নিরসনে নাটক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মার্চ ২০২৩, ৩:৩১:৪৪ অপরাহ্ন
যারা বুদ্ধি ও যুক্তিতে নয়, গলাবাজি করে জিততে চায়, তারা বর্বর। -আবুল ফজল
বিশ্ব নাট্য দিবস পালিত হয় গতকাল। সুন্দর সুশৃঙ্খল সমাজ বিনির্মাণে নাটকের গুরুত্বকে তুলে ধরতেই প্রতিবছর ২৭শে মার্চ পালিত হয় বিশ্ব নাট্য দিবস। নাটক আসলে আমাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি। শিল্প জগতে বিভিন্ন মাধ্যম বিভিন্নভাবে নিজেদের কথা বলে। নাটক জগতের কথা বলে, জীবনের কথা বলে।চলমান শতাব্দিতে সমগ্র বিশ্বে বাড়তে থাকা হিংসা, হানাহানি, অরাজকতা, বিশ্বাসঘাতকতা, সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতা নিরসনে একমাত্র নাটকই পারে এগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের মননকে তৈরি করতে। অর্থাৎ যে কোনও অনৈতিক কাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো এবং তার থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করার মতো বলিষ্ঠ মাধ্যম হচ্ছে নাটক।
বিশ্ব নাট্য দিসের ইতিহাস পরনো। ১৯৬১ সালের জুন মাসে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) নবম কংগ্রেসে সর্বসম্মতভাবে বিশ্ব নাট্য দিবস প্রবর্তনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। পরের বছর ১৯৬২ সালে থিয়েটার অব নেশনস উৎসবের সূচনার দিন অর্থাৎ ২৭শে মার্চ প্রতি বছর বিশ্ব নাট্য দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।আর বাংলাদেশে ১৯৮২ সাল থেকে প্রতি বছর ২৭শে মার্চ বিশ্ব নাট্য দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। নাটক বা থিয়েটার সব সময় মানুষের মনে ও চেতনায় এক উচ্চ স্থান পেয়ে এসেছে। বিশ্ব সভ্যতার উদ্ভব ও বিকাশের আদিতম ক্ষেত্র হিসেবে স্বীকৃত মিসর, গ্রিস, রোম, ভারতবর্ষ, চীন ও জাপানে প্রাচীন ইতিহাস অধ্যয়নে জানা যায় সর্বত্রই নাটক নামে এক ধরনের পরিবেশনা শিল্পের অস্তিত্ব ব্যাপকভাবে বিদ্যমান ছিলো এবং সেই প্রাচীনকালেই তা বিকশিত রূপ লাভ করেছিলো। প্রাচীন সভ্যতায়ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কোথাও কোথাও নাট্যচর্চা ও নাট্যপ্রতিযোগিতার আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের নিবিড় অংশগ্রহণ ছিলো।তাছাড়া,খ্রিস্ট-জন্মের সময় থেকেই ভারতবর্ষে নাটক প্রচলনের ইতিহাস জানা যায়।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নাটক অনেকটাই প্রসারতা লাভ করেছে। চর্যাপদ থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত নানা আঙ্গিকের নাটক নিয়ে কাজ করে চলেছেন এ দেশের লোকশিল্পীরা।দেশের গ্রামগঞ্জে এখনও ঐতিহ্যবাহি ধারায়, অসংখ্য আঙ্গিকে নাটক অভিনীত হয়। অবহেলা আর অনাদরে অনেক আঙ্গিক হারিয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তির পথে পড়ছে এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্যআঙ্গিক যাত্রা। প্রশাসনিক জটিলতায় যাত্রাশিল্প এখন বিলুপ্তপ্রায়। মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১০ লাখ মানুষ।ঐতিহ্যবাহি নাটক নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোন কাজ এখন হচ্ছে না।কিছু একাডেমিক গবেষণা যা হয়েছে বা হচ্ছে, তা একেবারেই গ্রন্থাগারকেন্দ্রিক। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশে নাটক যতোটা এগিয়েছে, ততোটাই শিকার হয়েছে অবহেলার। বিশ্ব নাট্য দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহি মঞ্চনাটকসহ অন্যান্য নাটকের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ সৃষ্টিতে প্রচেষ্টাকে চালানো হবে।