প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে রমজানের প্রভাব: শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২৩, ৫:৫২:১৪ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ঃ একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। আর সামনের বেঞ্চে বসে আছে ৪/৫ জন শিক্ষার্থী। এরকম দৃশ্য এখন সিলেটের বেশিরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে সিলেট অঞ্চলে কোরআন শিক্ষার নানা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি কমেছে। এলাকা ভেদে উপস্থিতির সংখ্যা অর্ধেক থেকে নিয়ে ১৫/২০ ভাগ পর্যন্ত রয়েছে। অন্যদিকে, পবিত্র রমজান মাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখা নিয়েও রয়েছে নানা বিতর্ক। অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ।
প্রচলিত নিয়মে রমজান মাস জুড়েই স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে। তবে গেলো বছর করোনার ক্ষতি পোষাতে রমজানেই কিছুদিন খোলা ছিলো শ্রেণি কার্যক্রম। এবার ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত লম্বা ছুটিতে আছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা। এমনকি পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, ইস্টার সানডে, বৈসাবি, নববর্ষ ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি কলেজ, আলিয়া মাদরাসা ও টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজেও একই সময়ে ছুটির ঘোষণা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
অন্যদিকে, বড় বড় শহরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এগুলো শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অধীন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিকের মতোই তাদের ছুটি থাকবে ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটিও একই। কিন্তু চলছে অন্যসব প্রাথমিক স্কুলের ক্লাস। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে সাত এপ্রিল থেকে প্রাথমিকের ছুটি শুরু হবে। অর্থাৎ ১৫ রমজান পর্যন্ত ক্লাস হবে। কিন্তু মূল সংকট হচ্ছে সেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, যারা মাধ্যমিক স্কুলের সঙ্গে একই ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করছে।
অপরদিকে, রমজান মাস শুরু হলে আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটে ধর্মীয়ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পুরো অঞ্চলজুড়ে আনাচে কানাচে মসজিদ মাদ্রাসা তথা বিদ্যালয়গুলোতেও চলে সহীহ কোরআন শিক্ষা। যেখানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছাড়াও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সহীহ কোরআন শিক্ষা অর্জন করেন।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি রমজানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একেবারেই কমে এসেছে। এলাকা ভেদে ১৫/২০ ভাগ পর্যন্ত উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।
কোম্পানীগঞ্জের জালিয়ারপার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাজ্জাদুর রহমান জানান, রোববার স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রাম ছিলো। ফলে রমজানে ক্লাস শুরুর প্রথম দিন ছিলো সোমবার। ওই দিন ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ছিলো একেবারেই কম। অবশ্য পরদিন থেকে উপস্থিতি বাড়ছে।
এছাড়া, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষকরা তেমন কিছু বলতে চাননি। অবশ্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, সারা দেশের পরিস্থিতি যাই হোক সিলেটের পরিস্থিতি ভিন্ন। এখানে ধর্মীয় অনুভূতিশীল মানুষজন তাদের সন্তানদের স্কুলে পড়ালেখা করালেও সহীহ কোরআন শিক্ষা করাতে চান।
যার জন্য গ্রামের স্কুলগুলোতে এর প্রভাব পড়েছে খুব বেশি।
কানাইঘাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোপাল চন্দ্র সূত্রধর বলেন, কানাইঘাটের মানুষজন এমনিতেই ধর্মপরায়ণ। স্কুল খোলা থাকলেও উপস্থিতি একেবারেই কম। ১৫ থেকে ২০ ভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত হচ্ছেন। অনেকেই মাদ্রাসায় কোরআন শিক্ষায় ভর্তি হয়ে গেছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: রোমান মিয়া বলেন, ৫০ থেকে ৬০ ভাগ উপস্থিতি রয়েছে তার উপজেলার বিদ্যালয়গুলোতে। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে দারুল ক্বেরাত নামের সহীহ কোরআন শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যার প্রভাব বিদ্যালয়গুলোতে পড়েছে।
অপরদিকে, রমজান মাসে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা রাখায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। সিলেট শহরতলীর খাদিমনগর ইউনিয়নের লাখাউরা গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, রমজানে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকে এটা প্রচলিত নিয়ম, কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। তাতে বছরে একমাস কোরআন শিক্ষার সুযোগটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ হাইস্কুলসহ কলেজ বন্ধ রয়েছে।
আরিফুল ইসলাম নামের অপর এক অভিভাবক বলেন, কোমলমতি শিশুদের ধর্মকর্ম শেখানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় পবিত্র রমজান। মাত্র নয় দিনের জন্য বিদ্যালয় খোলা রেখে শিশুদের ধর্ম শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়গুলোতে নজর দিলেই প্রকৃত শিক্ষার্থী উপস্থিতির তথ্য চোখে পড়বে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। আমরা নিয়মিত উপস্থিত হচ্ছি।
এব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রয়েছে। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। তবে আমাকে কেউ বলেনি যে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কম। তিনি দাবি করেন ক্লাস যথারীতি চলছে।