পরিবার পরিকল্পনার ডা: জেসমিন বরখাস্ত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ মার্চ ২০২৩, ৬:০৭:০৫ অপরাহ্ন
বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা \ ৮ পরিবার কল্যাণ সহকারীর নিয়োগ আদেশ
বাতিল এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশ
জনবল নিয়োগে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সিলেটের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ- তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
এদিকে, পরিবারকল্যাণ সহকারী পদে প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ৮ জনকে নিয়োগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের নিয়োগ আদেশ বাতিলের নির্দেশও দেয়া হয়েছে। পরিবারকল্যাণ সহকারী ছাড়াও আয়া পদে নিয়োগেও নানা অনিয়ম বেরিয়ে আসছে। তদন্ত কমিটি সিলেটে অবস্থান করে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। গত ২২ মার্চ ‘লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা না দিয়েও নিয়োগ পেলেন ৯ পরিবার কল্যাণ সহকারী” শিরোনামে-দৈনিক সিলেটের ডাক-এ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। রিপোর্ট প্রকাশের পর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়। এরপর মঙ্গলবার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সিলেটের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিন এর বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার তাকে বরখাস্তের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। যার স্মারক নং ৫৯.০০.০০০০.১১০.৯৯.০০২.২৩-২১৯। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিনের বিরুদ্ধে আনীত জেলা পর্যায়ের নিয়োগে এখতিয়ার বহির্ভূত ও বেআইনিভাবে এবং দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে জেলা নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সুপারিশ বহির্ভূত ৮ জনের অনুকূলে নিয়োগপত্র জারি সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। বিভাগীয় মামলা তদন্তের স্বার্থে তাকে চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এই প্রজ্ঞাপন জারি করেন।’
অপর একটি স্মারকে (৫৯.০০.০০০০.১১০.৯৯.০০২.২৩-২২০) ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিনের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শৃঙ্খলামূলক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া আরো একটি স্মারকে (৫৯.০০.০০০০.১১০.৯৯.০০২.২৩-২২১) পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও সিলেটের জেলা প্রশাসক তথা নিয়োগ কমিটির সভাপতিকে জনবল নিয়োগ ও বাছাই কমিটির সুপারিশ বহির্ভূতভাবে নিয়োগকৃত ৮জন ব্যক্তির নিয়োগপত্র বাতিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও বর্ণিত কর্মকর্তাসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়।
অন্য আদেশে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। (৫৯.০০.০০০০.১১০.৯৯.০০২.২৩-২২) নং স্মারকে তদন্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিন যেন বিদেশে পলায়ন করতে না পারেন-এজন্য তাঁর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশ দেয়া হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে।
তদন্ত কমিটি সিলেটে
সিলেট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি নজরে আসার পর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। পরিবার পরিকল্পনা ঢাকা বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো: মাহবুব আলম, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কেন্দ্রীয় পণ্যাগার (ড্রাগস এন্ড স্টোরস) এর অতিরিক্ত পরিচালক মো: আব্দুল বাতেন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রশাসন ইউনিট সহকারী পরিচালক (পারা-১) মো: আব্দুল মান্নানকে নিয়ে গঠিত ৩ সদস্যের কমিটি প্রাথমিক তদন্তে অনিয়মের সত্যতা পায়। এরপর পরই গতকাল উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: লুৎফুন নাহার জেসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এছাড়া প্রাথমিক তদন্তে অনেকেরই নাম উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক তাদের নাম পাওয়া যায়নি। মামলা দায়ের হলেই তাদের নাম বেরিয়ে আসবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, যুগ্ম সচিব মো: মাহবুব আলমের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি বর্তমানে সিলেটে অবস্থান করছে। গতকাল মঙ্গলবারও বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সিলেটের পরিচালকের সভাকক্ষে সিলেট জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বাশির মিয়া, বরুণসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদন্ত কমিটি জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী, সিলেট সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা সহকারী চন্দন রায়, গোয়াইনঘাট উপজেলার এফপিআই ইমরান আহমদ ও মো. হোসেন আলী, জৈন্তাপুর উপজেলার এফপিআই জসিম উদ্দিন, আঞ্চলিক পণ্যাগারে সংযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মো: মনসুর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বেরিয়ে আসছে আরো অনিয়ম
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রুজি বেগম ও রমা রানী মিস্ত্রী নামে আরো দুই পরিবার কল্যাণ সহকারীকে বিজ্ঞপ্তি বহির্র্ভূত ইউনিটে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমার সিলাম ২/ক ইউনিটে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি, তবে চূড়ান্ত ফলাফলে আছেন এমন প্রার্থী রুজি বেগমকে জালালপুর ইউনিয়নে ২/ক ইউনিটে নিয়োগ দেয়া হয়। আর রমা রানী বিশ্বনাথের রামপাশা ইউনিট থেকে নির্বাচিত হলেও অভিযোগ রয়েছে তিনি ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নন।
অপরদিকে, আঞ্চলিক পণ্যাগারে সংযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মো: মনসুর আহমেদের প্রচেষ্টায় আয়া পদে বিভিন্ন সময়ে তার তিন আত্মীয় নিয়োগ পান। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমার কুচাই ইউনিয়নে তাছলিমা নাছরিন, নাসিমা বেগম গোয়াইনঘাটের নন্দিরগাঁওয়ে ও আছমা বেগম বিশ্বনাথের লামাকাজি ইউনিয়নে এ পদে নিয়োগ পান। তাদের তিনজনের ঠিকানা হিসেবে সিলেট নগরীর ৫৫ সাগরদিঘীরপাড় উল্লেখ করা হয়। মূলত তাদের বাড়ি সুনামগঞ্জে। তাছলিমা নাছরিন, নাসিমা বেগম ও আছমা বেগম আঞ্চলিক পণ্যাগারে সংযুক্ত পরিবার পরিকল্পনা সহকারী মো: মনসুর আহমেদ এর স্ত্রীর বোন হন। এছাড়া, সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, পত্রিকায় অনিয়ম সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের পর কোম্পানীগঞ্জে নিয়োগপ্রাপ্ত আয়া রাহেনা বেগমের কাছ থেকে নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র হাতিয়ে নিয়ে তাকে অফিস করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। শুধু আয়া নয়; পরিবার কল্যাণ সহকারী পদেও আরো অনিয়ম বেরিয়ে আসছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো: কুতুব উদ্দিন জানান, জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।