আসুন ভাল হয়ে যাই
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৩, ৩:৪২:৪৫ অপরাহ্ন
মোঃ রফিকুল ইসলাম
বাংলায় একটি প্রবাদ আছে যে, ‘ভালো হতে পয়সা লাগে না’ কথাটি সত্য বটে। কারণ ভাল হতে হলে টাকা-পয়সার প্রয়োজন নেই। এর জন্যে মানুষের ইচ্ছাই যথেষ্ট। মানুষ যদি ইচ্ছা করে তাহলে সে তার চরিত্র সুধরে নিতে পারে এবং সকল প্রকার খারাপ কাজ পরিত্যাগ করে ভাল মানুষ হতে পারে। তবে ভাল হওয়ার জন্য তার ইচ্ছা থাকতে হবে। কারণ ইচ্ছা থাকলে মানুষ অনেক অসাধ্যকেও সাধ্য করতে পারে।
উন্নত-সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে হলে অথবা ভাল দেশ গড়তে হলে ভাল মানুষের প্রয়োজন। যে দেশে বা সমাজে ভাল মানুষের সংখ্যা যত বেশি হবে, সে দেশ বা সমাজ হবে তত উন্নত, সমৃদ্ধ ও ভাল। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর গল্প আমরা প্রায়ই শুনে থাকি যে, সেসব দেশের মানুষ খুবই ভাল। তারা দেশপ্রেমিক এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা মিথ্যা বলে না, প্রতারণা করে না, কর্তব্য কর্মে অবহেলা করে না, তারা চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই করে না। তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে না। তারা ন¤্র-ভদ্র এবং সবার সাথে ভাল আচরণ করে। এ কারণে সে সব দেশ উন্নত এবং সেসব দেশের মানুষ সুখে শান্তিতে ও নিরাপদ বসবাস করছে।
কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের অবস্থা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ চরিত্রহীন। তাদের চারিত্রিক স্খলন দেখা দিয়েছে। এ কারণে দেশব্যাপী দিন দিন অপরাধ প্রবণতা কেবলই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, অপহরণ, খুন-খারাবী, জবর দখল, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ইত্যাদি অপরাধ আমাদের সমাজ জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সমাজে দুর্নীতি পুনর্বাসিত এবং সমাজ থেকে ন্যায়নীতি নির্বাসিত। ‘জোর যার, মুল্লুক তার’- এই নিয়ম সমাজে বিরাজমান। সমাজের সিংহভাগ মানুষ আইন মানে না, ন্যায় নীতির ধার ধারে না। এমন কি যারা আইন তৈরি করেন এবং যারা আইন প্রয়োগ করেন তাদের অনেকেই আজ বেআইনী কাজে লিপ্ত। সমাজের বহু মানুষ অপরাধ করতে করতে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা আর অপরাধকে অপরাধ মনে করে না এবং দুর্নীতিকে তারা ন্যায়নীতি মনে করে। আমাদের দেশে আইনের যথার্থ প্রয়োগ না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না। অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধ করেও অপরাধীরা শাস্তি পায় না, আবার অনেকে লঘু অপরাধ করেও গুরুদ- পেয়ে থাকে। কাজেই একটি অপরাধমুক্ত সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য আইনের সঠিক প্রয়োগ অপরিহার্য।
আমরা যদি ইউরোপের দেশগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই, সে সব খুবই উন্নত এবং জনগণ সুখে-শান্তিতে ও নিরাপদে বসবাস করছে। কারণ, ইউরোপের মানুষ খুবই ভাল, তারা মিথ্যা বলে না, প্রতারণা করে না, তারা কর ফাঁকি দেয় না, তারা দেশের আইন মেনে চলে এবং সহজে অপরাধে জড়ায় না। তারা দেশপ্রেমিক, তারা নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখে এবং তারা এমন কোন কাজ করে না যাতে দেশের এতটুকু ক্ষতি হয়। তারা ন¤্র ভদ্র, রুচিশীল এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তারা রাস্তা-ঘাটে ময়লা আবর্জনা ফেলে না বরং নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে। তারা কর্মঠ, কর্তব্যপরায়ণ এবং নিয়মানুবর্তী। তারা কখনো কর্তব্য কর্মে ফাঁকি দেয় না। সে সব দেশের সরকারি কর্মচারীরা সেবার মনোভাব নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করে এবং জনগণের সাথে ভাল আচরণ করে। সরকারি অফিস-আদালতে জনগণকে ভোগান্তির শিকার হতে হয় না।
কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা আমাদের দেশের মানুষের বৈশিষ্ট্য। দুনীতি-স্বজনপ্রীতি, কর্তব্য কর্মে অবহেলা ইত্যাদি আমাদের দেশের মানুষের মজ্জাগত ব্যাপার। তারা অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে এবং দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে। তারা দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে। আমাদের দেশের সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকায় তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এবং তারা সঠিকভাবে জনগণের সেবা করে না। আমাদের দেশে প্রকৃত আইনের শাসন না থাকায় জনগণ অনেক সময় আইন নিজেদের হাতে তুলে নেয়। যে কারণে আমাদের দেশে চুরি-ডাকাতি, খুন-হত্যা, ছিনতাই, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার কখনো অপরাধীরা চোর ডাকাত সন্দেহে নির্দোষ মানুষকে হত্যা করে ফেলে।
এক কথায়, মুসলমান হিসাবে আমাদের যেসব ভাল গুণ ছিল, সেগুলো বিধর্মীরা গ্রহণ করে তারা ভাল মানুষে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমরা তাদের খারাপ আচরণগুলো গ্রহণ করে খারাপ মানুষে পরিণত হয়েছি। তাই আমাদের উচিত ইসলামের মহৎ গুণগুলো নিজেদের জীবনে বাস্তবায়িত করে ভাল মানুষে পরিণত হওয়া এবং সাথে সাথে ইসলাম বিরোধী সকল প্রকার খারাপ আচরণ ও কার্যকলাপ পরিত্যাগ করা। তাহলে আমাদের দেশ উন্নত হবে এবং আমরা বিশ্বের উন্নত জাতি হিসাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব।
আসুন, আমরা আমাদের চরিত্র সংশোধন করে নেই এবং সকল প্রকার বদ অভ্যাস ও খারাপ আচরণ পরিত্যাগ করে ভাল মানুষ হয়ে যাই। ইচ্ছা করলে আমরা সহজেই ভাল হয়ে যেতে পারব- এর জন্যে টাকা পয়সা লাগবে না।