রোযার উপকারিতা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৩, ৩:৪৫:০২ অপরাহ্ন
বেলাল আহমদ চৌধুরী
রোযার প্রকৃত হাকীকত এবং তাৎপর্য হচ্ছে তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাকওয়া হচ্ছে হৃদয়ের এক বিশেষ অবস্থার নাম। ঐ অবস্থা অর্জন হলে মানুষের হৃদয় মহান আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়। চারিত্রিক মহত্ব, নৈতিক পরিচ্ছন্নতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা, আত্মিক পবিত্রতা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করাই হলো রোযার মূল লক্ষ।
নবী করীম (সা.) বলেন, জান্নাতের মধ্যে ‘র্যায়ান’ নামক একটি দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কেবলমাত্র কিয়ামতের দিন রোজাদার লোকই প্রবেশ করবে। রাসূল (সা.) আরও বলেন- রোযা এবং কুরয়ান বন্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযার উপকারীতা সম্বন্ধে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (র.) আহকামে ইসলাম আকল কী নযর সে’ নামক গ্রন্থে রোযার উপকারিতা সম্পর্কে কতিপয় বিষয় উল্লেখ করেছেন যাহা নি¤েœ উল্লেখ করা হলো-
১. রোযার দ্বারা প্রবৃত্তির উপর আকলের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয় এবং রুহানী শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক ইচ্ছা হ্রাস পায়। এতে মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং অন্তর বিগলিত হয় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায়।
২. রোযার দ্বারা রোযাদারের অন্তরে মহান আল্লাহর ভয়ভীতি এবং তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়।
৩. রোযার দ্বারা মানুষের স্বভাবের ন¤্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়। এবং মানব মনে আল্লাহর আযমত ও মহানত্বের ধারণা জাগ্রত হয়।
৪. রোযায় মানুষের দূরদর্শিতা প্রখর হয়।
৫. রোযার দ্বারা মানব মনে নূরানী শক্তি বৃদ্ধি পায় যার দ্বারা মানুষ সৃষ্টির এবং বস্তুর গুঢ় রহস্য সম্বন্ধে অবগত হতে সক্ষম হয়।
৬. রোযার বরকতে মানুষ ফিরিশতা চরিত্রের নিকটবর্ত্তী হতে পারে।
৭. রোযার বরকতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা জাগ্রত হয়। একজন রোজাদারের কাছে অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতি তার অন্তরের মহানুভূতির উদ্রেক হয়।
৮. রোযা পালন করা আল্লাহর মহব্বতের অন্যতম নিদর্শন।
৯. রোযা মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ। রোযা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হিফাযত করে।
১০. রোযা দ্বারা মানুষের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষের জন্য বছরে কয়েকদিন উপবাস থাকা আবশ্যক। স্বল্প খাদ্যগ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সুফী সাফিদের মতে, হৃদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্য গ্রহণের উপকারিতা অনেক বেশি। অধিকন্তু রোযা দেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
পরিশেষে বলব, রমযান হলো ধৈর্যের মাস এবং ধৈর্য্যরে বিনিময় হচ্ছে জান্নাত। আর এ মাস মানুষের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রকাশের মাস। অধিকন্তু আত্মিক উৎকর্ষ ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক বেহেশতী সাওগাত এই রমযান মাস।
লেখক: কলামিস্ট