রমজানুল মোবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১১:৫২:৫২ অপরাহ্ন

শাহ নজরুল ইসলাম
আজ শুক্রবার, ৮ রমযান ১৪৪৪ হিজরী। রহমতের দশকের অষ্টম দিন। আজ মানুষের কিছু জিজ্ঞাসা সম্পর্কে আলোচনা করবো। অনেকেই সাক্ষাতে কিংবা মোবাইলে অনেক মাসাইল জিজ্ঞেস করেন। এখনও করোনার ভ্যাকসিনেশন চলছে। বিশেষ করে বোস্টার ডোজ নিচ্ছেন এখনো অনেক মানুষ। আবার রোযাও চলছে। এমতাবস্থায় ভ্যাকসিন বা টিকা নিলে রোযা ভাঙবে কী না? এ প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরাম ও মুফতি সাহেবান বলেছেন, রোযার কোন ক্ষতি হবে না। রোযাও ভাঙবে না।
যে সব কারণে রোযার কোন ক্ষতি হয় না এসব বিষয়ে মনে করা হয় যে রোযা ভেঙে গেছে। পরে আবার ইচ্ছা করে পানাহার করে। ফলে বাস্তবিকই রোযা ভেঙে যায়। অথচ এগুলোর কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না, মাকরূহও হয় না। নিম্নে এর বিবরণ দেয়া হলো- রোযার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করা কিংবা যৌনাচার করা। কাঁচা বা শুকনা যে কোন ধরনের মিসওয়াক ব্যবহার করা। চোখে বা কানে কোন ঔষধ ব্যবহার করা কিংবা পানি ঢুকে যাওয়া। ফুল কিংবা আতর ইত্যাদির ঘ্রাণ নেয়া। গরমের কারণে কিংবা পিপাসার কারণে গোসল করা বা ভিজা কাপড় দিয়ে গা মোছা। অনিচ্ছাকৃত গলায় ধোয়া, ধুলাবালি বা মাছি মশা প্রবেশ করা। স্বপ্নদোষ হওয়া কিংবা কামোত্তেজনার সাথে কারো দিকে শুধু তাকানোর দ্বারা বীর্যপাত হয়ে যাওয়া। মুখে থুথু আসার পর তা গিলে ফেলা। সাপ ইত্যাদির দংশনের শিকার হওয়া। পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও থুথুর সাথে লালচে ভাব থেকে যাওয়া। ফরয-গোসল না করা অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়া। নাক দিয়ে রক্ত বের হলে, যদি পেটে না যায়। তদ্রুপ শরীরের অন্য কোন স্থান থেকে রক্ত বের হলে। পাইরিয়া রোগের কারণে যে সামান্য রক্ত পুঁজ সর্বদা বের হতে থাকে, তা মুখের ভিতরে চলে যাওয়া। রোযা অবস্থায় প্রয়োজনে কাউকে রক্ত দেয়া। তবে রোযা রাখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে-এমন দুর্বল হওয়ার আশঙ্কা হলে, রক্ত দেয়া মাকরূহ।
যে সব কারণে রোযা মাকরূহ হয় ঃ বিনা প্রয়োজনে কোন বস্তু মুখে নিয়ে চিবানো বা লবণ ইত্যাদি চেখে দেখা। তবে ছোট বাচ্চার প্রয়োজনে কোন কিছু চিবানো বা স্বামী কিংবা মালিক বদ মেয়াজী হলে, স্ত্রীর জন্য তরকারী চেখে দেখার অবকাশ আছে। উভয় ক্ষেত্রে থুথু ফেলে দিতে হবে। রোযা অবস্থায় টুথপেস্ট, মাজন বা কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা। গোসল ফরয অবস্থায় পুরো দিন গোসল না করে অতিবাহিত করা। এ পরিমাণ রক্ত দেয়া যাতে শরীর দূর্বল হয়ে যায়। গীবত, চোগলখুরী, ঝগড়া-বিবাদ কিংবা গালিগালাজ করা। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না রাখার আশঙ্কা সত্ত্বেও স্ত্রীকে চুম্বন বা আলিঙ্গন করা। ছোলা, বুট থেকে ছোট কোন জিনিস দাঁতে আটকে গেলে তা বের না করে গিলে ফেলা।
যে কারণে রোযা ভেঙে যায় এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হয় তা হলো : নাকে তেল বা ঔষধ দিলে। ইচ্ছা করে মুখ ভরে বমি করলে বা বমি আসার পর তা গিলে ফেললে। কুলি বা নাকে পানি দেয়ার সময় অসতর্কতার কারণে পানি ভিতরে চলে গেলে। নারীকে স্পর্শ করার কারণে বীর্যপাত হলে। কাঠ, লোহা, পাথর বা এ জাতীয় কোন অখাদ্য বস্তু খেলে। আগরবাতি, ধুপ বা বিড়ি সিগারেট ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছা করে নাকে বা কণ্ঠ নালীতে পৌঁছালে। ভুলে পানাহার করার পর রোযা ভেঙে গেছে মনে করে পরে ইচ্ছে করে পানাহার করলে।
সময় আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পর পানাহার বা সহবাস করলে বা ইফতারের সময় হয়ে গেছে মনে করে সময়ের পূর্বেই ইফতার করে নিলে। পান মুখে রেখে ঘুমিয়ে গেলে আর এমতাবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে। নিয়ত একেবারেই না করলে বা এমন সময় করলে যে সময় নিয়ত গ্রহণযোগ্য হয় না। ছোলা, বুট পরিমাণ বা ততোধিক পরিমাণ কোন খাদ্যের টুকরা দাঁতে আটকে থাকলে এবং সুবহে সাদিকের পর তা মুখ থেকে বের না করে গিলে ফেললে। অবশ্য এর চেয়ে ছোট হলে রোযা ভাঙবে না। তবে কাজটা মাকরূহ হবে। হ্যাঁ, মুখ থেকে বের করার পর গিললে তা যতই ছোট হোক না কেন রোযা ভেঙে যাবে। দাঁত বা মুখের ভিতর থেকে রক্ত বের হলে যদি তা পরিমাণে থুথু বরাবর বা বেশি হয় এবং গলার ভিতর চলে যায়। ভিজা আঙ্গুল পায়ূপথের ভিতরে প্রবেশ করালে।
এক দেশে রোযা শুরু করে ভিন্ন দেশে চলে গেলে যদি দেখা যায় সেখানে আগে ঈদ হয়ে গেছে, তাহলে আগের দেশের হিসেবে যে কয়টা রোযা বাদ গেছে তা কাযা করতে হবে। পক্ষান্তরে ভিন্ন দেশে যাওয়ার পর সেখানে এক দুইটা রোযা বেড়ে গেলে তা রাখতে হবে। (মুফতী জমীরুদ্দীন, তুহফাতুল খাইর, পৃ. ৮-৯) রোযাদারের জন্য এসব মাসআলা মাসাঈল জানা জরুরি। মহান আল্ল¬াহ আমাদের জেনে বুঝে সহীহ শুদ্ধভাবে রোযা রাখার তাওফীক দিন। আমীন।