সুনামগঞ্জে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ মার্চ ২০২৩, ১২:০৭:১৭ অপরাহ্ন
পৃথক মামলায় আরো দু’জনের যাবজ্জীবন
সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ঃ সুনামগঞ্জে স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক। একই আদালত পৃথক ধর্ষণ মামলায় আরো দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। যাবজ্জীবন দন্ড প্রাপ্ত আসামিদের এক লাখ টাকা করে জরিমানা আর জরিমানার টাকা ভিকটিমদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হলেন জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের মো. সফিক মিয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া (২৫)। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ডলুরা গ্রামের সমছু মিয়ার ছেলে খলিল আহমেদ (৪৫) ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে আব্দুর রহমান আব্দুল (২৯)।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর মো. রাসেল মিয়ার সাথে একই গ্রামের রেছনা বেগমের মেয়ে মনমালাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতে স্বামী রাসেল মনমালাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে রাসেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়ের পর রাসেল যৌতুকের দাবিতে আর নির্যাতন করবে না বলে মামলাটি আপসে নিষ্পত্তি হয়। মামলা নিষ্পত্তির পর ২০১৮ সালের ২৮ জুন মনমালা তার অসুস্থ চাচাকে দেখতে যায়। ওই দিনই রাসেল মনমালাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। পরদিন মনমালা মারা গেছে বলে আত্মীয়-স্বজনদের জানায়। খবর শুনে মনমালার মা গিয়ে তার মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। পরে একই বছরের ৮ জুলাই মনমালার মা রেছনা বেগম বাদী হয়ে রাসেল ও তার বাবা মো. সফিক মিয়া এবং মা কবিফুলকে আসামি করে জামালগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানী সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত মো. রাসেল মিয়াকে মুত্যুদণ্ড ও মো. সফিক মিয়াা এবং কবিফুলকে খালাস প্রদানের আদেশ দেন।
এদিকে, ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চেংবিল গ্রামের এক বিধবা নারী পাশর্^বর্তী ডলুরা গ্রামের সমছু মিয়ার ছেলে খলিল আহমেদের কাছে পাওনা ১২ হাজার টাকা নিয়ে নিজ বাড়ি উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় তাকে এগিয়ে দেয়ার কথা বলে রাত অনুমান সাড়ে ৮টার দিকে ডলুরা গ্রামের আখ খেতে পৌঁছলে ওই বিধবা নারীকে জোরপূর্ব ধর্ষণ করে খলিল। এসময় বিধবা নারীর চিৎকার শুনে আশে পাশের লোকজন এসে খলিলকে আটক করে স্থানীয় পঞ্চায়েতের নিকট সোপর্দ করেন। পঞ্চায়েতে মীমাংসা না হওয়ায় নালিশকারী আদালতে মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে ওই বিধবা নারীর গর্ভবতী হয়ে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। আসামি ওই নারীকে ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়ার শিশুর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষায়ও প্রমাণিত হয় ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া শিশুর পিতা হচ্ছে আসামি খলিল আহমদ। সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে গতকাল দুপুরে আসামি খলিলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে জরিমানার টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই নারীকে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।
অপরদিকে, ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠে গ্রামীণ মেলা ও ঘোড়ার দৌড় দেখে কৃষ্ণনগর গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে বাড়ি ফিরছিল। বিকেল অনুমান সাড়ে ৫টার দিকে একই গ্রামের ফিরোজ মিয়ার বাড়ির সামনের সরকারি খালের পাড়ে পৌঁছলে আসামি আব্দুর রহমান ওই মেয়েকে ডেকে নিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে ওই কৃষক সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় আসামি আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আদালত আব্দুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। জরিমানার টাকা ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালতের বিচারক।