পারমানবিক যুদ্ধ এবং সম্ভাব্য পরিণতি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ৩:৪০:১৫ অপরাহ্ন
অ্যাডভোকেট আনসার খান
সম্ভাব্য পারমানবিক সংঘাত ও যুদ্ধের আশংকায় বিশ্বের শান্তিকামী মানুষেরা গভীর উদ্বিগ্ন এবং উৎকন্ঠিত হয়ে আছেন। শক্তিধর দেশগুলোর ব্যাপক পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদন ও মজুতকরণ প্রতিযোগিতার কারণে বিশ্বব্যবস্থায় পারমানবিক যুদ্ধের একটি শংকা এমনিতেই বিদ্যমান আছে এবং এমনকি প্রতিযোগী রাষ্ট্রগুলোর কোনো না কোনো ভূল বার্তার কারনেও পারমানবিক যুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত রয়েছে। যুদ্ধে পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার পৃথিবীর ধ্বংস ডেকে আনবে। পারমানবিক অস্ত্রের বিধ্বংসী প্রভাব মানব সভ্যতার ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট ম্যাকনামারা ২০০৩ সালের ডকুমেন্টারী, ‘ফগ অব ওয়ার’ এ বলেছিলেন যে, মানুষের ব্যর্থতা এবং পারমাণবিক অস্ত্রের অনির্দিষ্ট সংমিশ্রণ জাতিগুলোকে ধ্বংস করবে।
রাশিয়ার মতো একটি বৃহৎ শক্তি দ্বারা নিকট প্রতিবেশি ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে যুদ্ধে সম্ভাব্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কর্তৃক ইউক্রেন যুদ্ধে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহারের গুরুতর হুমকির প্রেক্ষাপটে।
‘পারমানবিক যুদ্ধের ঝুঁকি অবশ্যই ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ’ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব এক্সিস্টেনশিয়াল রিস্ক (সিএসইআর) এর দ্বারা সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। (ফরবিশ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত ২০২৩)।
যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, এবং চীন এখন পূর্ণাঙ্গ পারমানবিক অস্ত্র আধুনিকীকরণ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে, যা পারমানবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার একটি বিপজ্জনক নতুন, ‘তৃতীয় পারমাণবিক যুগের’ সূচনা করেছে, যা একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক পারমানবিক পরিস্থিতি ও ঝুঁকি তৈরি করেছে। যেহেতু দেশগুলো অস্ত্রের মজুত বৃদ্ধি করে চলেছে, সেহেতু বিশ্বের একটি পারমানবিক যুদ্ধে প্রবেশের সম্ভাবনা বাড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এই বলে যে, পারমানবিক যুদ্ধ, ‘সম্ভাবনার সীমানায় ফিরে এসেছে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘একবার একটি যুদ্ধ শুরু হলে সেটির ব্যাপকতা সীমিত করে রাখা খুব কঠিন হতে পারে।’ অর্থাৎ পারমানবিক যুদ্ধ বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশংকা।
বিশেষজ্ঞজনসহ সংশ্লিষ্টরা পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদন ও মজুত করার প্রবণতা এবং বর্তমানের উত্তেজনাপূর্ণ বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আশংকা ব্যক্ত করেছেন যে, একটি পূর্ণমাত্রার পারমানবিক যুদ্ধের ঝুঁকি আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং অনুরূপ একটি যুদ্ধে পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার হওয়ার কারণে মানব সভ্যতা ধ্বংস হওয়ার আশংকা রয়েছে।
বিশ্বের নয়টি দেশ পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদন ও মজুত করেছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু এবলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপনস। আরও কোনো কোনো রাষ্ট্র পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদনের জন্য চেষ্টা করে চলেছে। তবে সফল হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনো অবধি। তবে পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদন ও মজুতের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্ভিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
বেশিরভাগ পারমানবিক অস্ত্র উৎপাদক রাষ্ট্র তাদের পারমানবিক অস্ত্রের মজুতের আকার ও পরিমাণ সম্পর্কে গোপনিয়তা বজায় রাখে এবং এসব রাষ্ট্রগুলো মূলত তাদের পারমানবিক অস্ত্রের সঠিক সংখ্যার বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনা বিধায় সত্যিকার অর্থে কোনো দেশ কতটি পারমানবিক অস্ত্রের মজুত গড়েছে সেটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়না বলে পারমানবিক অস্ত্রের মোট পরিমান নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যার হিসেব দেখতে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়কালে বিশ্বে প্রায় মোট ১৩৪১০ টি পারমানবিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে বলে মনে করেন এবং এর প্রায় ৯১ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মালিকানায় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইন্টিস্ট এর পরিসংখ্যানটি অধিকতর গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। এফওএএস, তাদের ২০২২ সালের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২২ সালের প্রথম দিকে বিশ্বের নয়টি দেশের হাতে প্রায় ১২৭০৫টি পারমানবিক ওয়ারহেড মজুত ছিলো। এরমধ্যে ৯৪০০টিরও বেশি ক্ষেপনাস্ত্র, বিমান, জাহাজ এবং সাবমেরিনে ব্যবহারের জন্য মজুত রয়েছে, যারমধ্যে প্রায় ৩৭৩০টি অপারেশনাল ফোর্স (মিসাইল বা বোমারু ঘাঁটিতে) মোতায়েন করা হয়েছে। এইসব অস্ত্রগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটিশ এবং ফ্রান্সের মালিকানাধীন প্রায় ২০০০ ওয়ারহেড সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, যেগুলো স্বল্প নোটিশে শত্রুর মোকাবিলা বা প্রতিহত করতে বা আক্রমণ পরিচালনা করতে সদা প্রস্তত।
ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইন্টিস্ট (এফওএএস) যে নয়টি পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেগুলো হলো-
১. রাশিয়া ফেডারেশন : ৫৯৭৭, তবে আইসিএএনব্লিউ তাদের পরিসংখ্যানে উল্লেখ করেছে, রাশিয়ার হাতে ৬৮৫০ পারমানবিক অস্ত্রের মজুত রয়েছে। দ্য বুলেটিন অব দ্য এটমিক সাইন্টিস্টস বলেছে রাশিয়ার পারমানবিক অস্ত্রের সংখ্যা ৪৪৭৭। দ্য বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে যে, ৮১২ স্থল ভিত্তিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র, ৫৭৬ সাবমেরিনলঞ্জ করা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং প্রায় ২০০ ভারি বোমারু ঘাঁটিতে মোতায়েন রয়েছে রাশিয়ার। পক্ষান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের ১৬৪৪ কৌশলগত পারমানবিক ওয়ারহেড মোতায়েন রয়েছে।
২. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : ৫৪২৮। এছাড়াও দেশটির মজুতে রয়েছে অধিক শক্তিশালী এফ-৩৫, বি১-১২ বোমা ও ক্রুজ মিসাইল, যা অন্য দেশের অস্ত্রাগারে নেই। এইগুলো সব নতুন সংযুক্তি। অবশ্য আইসিএএনডাব্লিউ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আছে ৬৪৫০ পারমানবিক অস্ত্র। ৩. চীন : ৩৫০ পারমানবিক অস্ত্র রয়েছে দেশটির অস্ত্রাগারে পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছে, জার্মান ভিত্তিক অনলাইন প্লাটফর্ম ‘স্ট্যাটিস্টা।’ তবে বিজনেস ইনসাইডার বলেছে চীনের হাতে ২৮০ পারমানবিক অস্ত্র মজুত আছে। ৪. ফ্রান্স : পারমানবিক অস্ত্র মজুত আছে ২৯০। ৫. যুক্তরাজ্যের মালিকানায় ২২৫ পারমানবিক অস্ত্র রয়েছে। ৬. পাকিস্তান : ১৬৫। ৭. ভারত : ১৬০, ৮. ইসরায়েল : ৯০ এবং ৯. উত্তর কোরিয়া : উত্তর কোরিয়ার হাতে মজুত রয়েছে ২০ পারমানবিক অস্ত্র। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন সর্বশেষ দেশ দুটি তাদের পারমাবিক অস্ত্রের মজুত নিয়ে তথ্য গোপন করে চলেছে। তাদের ওই সংখ্যা সঠিক কি-না তা নিশ্চিত করা হয়নি কোনো মহল থেকেই।
পারমানবিক অস্ত্র কেন ভয়ংকর : ১. পারমানবিক অস্ত্র সভ্যতার ধ্বংস করতে পারে। ২. কোটি কোটি মানুষের প্রাণহানি ও স্থাপনা ধ্বংসের কারণ হতে পারে। ৩. পারমানবিক অস্ত্রের আঘাতে উচ্চ মাত্রার বিকিরণ ঘটে এবং আয়নাইজিং বিকিরণ তৈরি করে, যা মানুষ, প্রাণীকুলের এবং পরিবেশের ধ্বংস সাধন করতে পারে। ৪. পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার হলে পৃথিবীতে শীতকালিন অবস্থা তৈরি হওয়ার আশংকা হবে।
পারমানবিক অস্ত্রগুলো অন্যান্য অস্ত্রের চেয়ে ভিন্ন আদলে তৈরি, যা সাধারণ মানুষকে হত্যা করাসহ সমগ্র শহর ও স্থাপনাগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। মোটকথা, একটি পারমানবিক যুদ্ধ কোটি কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হবে এবং অধিকাংশ নগর, শহর, বন্দরগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার আশংকা রয়েছে। কেননা, পারমানবিক অস্ত্রের তাপিয় বিকিরণ এতোটাই তিব্র যে স্থল শূন্যের কাছাকাছি প্রায় সবকিছুই বাষ্পিভূত হয়ে যায়। এর তাপ মারাত্মক পোড়ার কারণ হয় এবং একটি বিশাল অগ্নিঝড়ের সৃষ্টি করে।
পারমানবিক বিস্ফোরণ থেকে ফায়ারবেলের সর্বোচ্চ আকারে পৌঁছুতে প্রায় দশ সেকেন্ড সময় লাগে। একটি পারমানবিক বিস্ফোরণ, তাপ এবং বিকিরণ আকারে প্রচুর পরিমানে শক্তি নির্গত করে। একটি বিশাল শক-ওয়েভ ঘন্টায় কয়েকশ কিলোমিটার বেগে পৌঁছায়, যা কিছু সামনে পড়ে তার সবকিছু ধ্বংস করে ফেলে। অর্থাৎ এর তাপিয় বিকিরণ এতোটাই তিব্র যে স্থল শূন্যের কাছাকাছি প্রায় সবকিছুই বাষ্পিভূত হয়ে যায়।
পারমানবিক অস্ত্রগুলো, এ যাবৎকাল সময় পর্যন্ত তৈরি করা অন্য সকল অস্ত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক, অমানবিক এবং নির্বিচার বিধ্বংসী অস্ত্র। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধ্বংসাত্মক পারমানবিক ক্ষেপণাস্ত্রটি হলো বি-৮৩, যার রয়েছে হিরোশিমার অংশভাগ ধ্বংসকারী বোমা ‘লিটল বয়’ থেকেও ২০০ গুণেরও বেশি ধ্বংসাত্মক ক্ষমতাসম্পন্ন। বি-৮৩ বোমাটি ১৪.৯ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। এই বোমার আঘাতে দৃষ্টিসীমার সবকিছু ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে এবং পুরো অঞ্চল আঁধারে ছেয়ে যাবে। ফলে পুরো এলাকার সবকিছু দৃষ্টির আড়ালে চলে যাবে। এই অস্ত্রের বিস্ফোরণের ফলে পারমানবিক শীত হওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর ইকো সিস্টেমকে ধ্বংস করে দিতে পারে এবং জলবায়ুতে মারাত্মক পরিবর্তন আসবে, যা মানব সভ্যতার জন্য চরম বিপর্যয় নিয়ে আসবে।
পারমানবিক শক্তিধর কোনো দেশ যদি ভূলেও ১০০-এর বেশি পারমানবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করে এবং সেটি বিস্ফোরিত হয়, তবে তা থেকে ‘নিউক্লিয় হেমন্ত’ সৃষ্টি হয়ে ‘নিউক্লিয় শীতলতা’ সৃষ্টি হবে। ফলে পারমানবিক বিস্ফোরণ থেকে তৈরি হওয়া ধোঁয়া সূর্যের আলোকে পৃথিবী পৃষ্ঠে পৌঁছাতে বাধার সৃষ্টি করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাস করে দিবে।
আর্থস ফিউসার নামক বৈজ্ঞানিক গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত ২০১৪ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছিলো ১০০ পারমানবিক অস্ত্রের ডেটোনেশন সমৃদ্ধ আঞ্চলিক যুদ্ধেই সৃষ্টি হবে মোট ৫ টেন্ট্রাগ্রাম ব্ল্যাক শুট, যা পৃথিবীর স্ট্রাটোস্ফিয়ার স্তর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়ে সূর্যালোকের আগমন বন্ধ করে দিবে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা হঠাৎ করে হ্রাস পাবে, যার স্থায়িত্বকাল হতে পারে দশ থেকে পঁচিশ বছরেরও বেশি সময়। অর্থাৎ এই সময়কাল পর্যন্ত পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে যাবে এবং পৃথিবীতে শীতকালিন অবস্থা নেমে আসবে।
নয়টি দেশের পারমানবিক শক্তির সম্মিলিত শক্তি নহে, কেবল রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রাগারে মজুতকৃত পারমানবিক অস্ত্রের সম্মিলিত শক্তির সক্ষমতা হিসেবে নিলেই একটি ভয়ংকর ভবিষ্যত পৃথিবীর চিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠে। দৈনিক টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক গবেষণায় বলা হয়েছে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ভান্ডারে থাকা অস্ত্রসমূহের মিলিত শক্তি প্রায় ৬৬০০ মেগাটনের সমান, যা প্রতি মিনিটে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত সৌর শক্তির দশভাগের একভাগের সমান। তাই ওই অস্ত্রগুলো পৃথিবীতে বিস্ফোরিত হলে পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য।
শহরগুলোতে আঘাতকারী পারমানবিক ওয়ারহেডগুলো অগ্নিঝড় সৃষ্টি করবে এবং স্ট্রাটোস্ফিয়ারে প্রচুর পরিমাণে কালি পাঠাবে, যা একদশক পর্যন্ত সূর্যের বেশির ভাগ অংশকে পৃথিবীতে আলো ছড়িয়ে দিতে বাধার সৃষ্টি করবে। এতে সারা বিশ্বের তাপমাত্রা অসম্ভব আকারে কমে যাবে এবং এমনকি অনেক জায়গায় শূন্য ডিগ্রিরও নিচে নেমে যাবে। পারমানবিক অস্ত্রের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের সব স্থাপনা, মানুষ, প্রাণি সব ধ্বংস হয়ে যাবে। ওই অঞ্চলের মাটি, পানি, বৃক্ষ ইত্যাদি দূষিত হয়ে ব্যবহার অযোগ্য হবে। ফলে ফসলহানি হবে এবং সংঘাত থেকে দূরবর্তী দেশগুলোতে কয়েক মিলিয়ন মানুষ ব্যাপক অনাহার ও দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত হয়ে মারা যাবে।
এটি বলা সঙ্গত হবে যে পারমানবিক ক্ষমতাসম্পন্ন রাষ্ট্রগুলো বিশ্বসভ্যতাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, ‘পারমাবিক বিস্ফোরণের ফলে বড় আকারের সম্ভাব্য বিপর্যয় বিবেচনা করা প্রায় অসম্ভব। তবে পারমানবিক ঝুঁকি কমানোর জন্য, সম্ভাব্য পরিণতি ঠেকানোর জন্য এবং বিশ্বসভ্যতাকে বড়ধরণের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশ্বের সচেতন মানুষকে এগিয়ে এসে এসে একটি পারমাণবিক শক্তি বিরোধী আন্দোলন জোরদার করা সময়ের দাবি।’
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, ফেডারেশন অব আমেরিকান সাইন্টিস্ট এর ওয়েবসাইট, স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণার ওয়েভসাইট, আই সি এ এন ডাব্লিউ ওয়েবসাইট ইত্যাদি।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।