রমযানুল মুবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৮:১৫ অপরাহ্ন
শাহ নজরুল ইসলাম
আজ শনিবার, ৯ রমযান ১৪৪৪ হিজরি। রহমতের দশকের আর মাত্র এক দিন বাকি। দুই বছর পর করোনা উত্তর পৃথিবীতে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার মাঝে এবার আমাদের সামষ্টিক উৎসাহ উদ্দীপনা আর ইবাদত বন্দেগির আয়োজন দৃশ্যমান। এবার কুরআন নাযিলের মাসে কুরআনের চর্চার প্রতিষ্ঠানগুলোও কাজ করতে পারছে। বহু প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা আমাদের দেশে এ কাজ করে আসছে। কেবল আঞ্জুমানে তালীমুল কুরআন বাংলাদেশ এবার পরিকল্পনা করেছে তিন লক্ষাধিক শিশুÑকিশোর ও যুবক যুবতিকে সহীহ শুদ্ধ কুরআন পাঠের আওতায় নিয়ে আসবে। এবার ঘরে ঘরে ঈদুল ফিতরের কেনা কাটার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। মানুষ আবারো কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। এর মাঝেও অনেকে একটি মাসআলা জিজ্ঞেস করেন। বাস্তবেও বিষয়টি জীবন ঘনিষ্ঠ। অনেক পরিবারেই অক্ষম বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ আছেন, তাদের রোযার হুকুম কি? ফিদয়া কি? আবার রোযার কাফফারা সম্পর্কেও জানতে চান অনেকে। ভাবলাম আজকে এ নিয়েই লিখবো।
মানুষের জীবনে কিছু অবস্থা আছে, যে অবস্থায় তার রোযা না রাখা জায়েয আছে। যেমন অসুস্থ ব্যক্তি যদি রোযা রাখার কারণে কোন শারীরিক ক্ষতির আশংকা করে বা মৃত্যুর ভয় করে তবে এ অবস্থায় রোযা রাখবে না। সুস্থ হওয়ার পর কাযা করবে। তবে কেবল মনের ধারনাগত কারণে রোযা ত্যাগ করা বৈধ নয়। এ জন্য শরীয়ত সম্মত কারণ থাকতে হবে। যখন কোন মুসলিম চিকিৎসক বলবেন যে রোযা রাখলে ক্ষতি হবে অথবা নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতা কিংবা কোন লক্ষণ দ্বারা প্রবল ধারণা জন্মে যে, রোযা রাখলে ক্ষতি হবে, তখন রোযা ত্যাগ করা যাবে। কোন কারণে রোযা ছুটে গেলে বা ভেঙ্গে গেলে অনতিবিলম্বে তা কাযা করে নেয়া উচিত। কারণ জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই।
কাযা রোযা ধারাবাহিকভাবে রাখা আবশ্যক নয়। কয়েক রমযানের কাযা রোযা একত্রিত হয়ে গেলে সেগুলো রাখার সময় কোণ রমযানের রোযা রাখা হচ্ছে, নিয়তের সময় তা নির্ধারণ করা লাগবে।
কাফফারার বিবরণ : একটি রোযার কাফফারা হলো, একটি দাস মুক্ত করা। দাস প্রথা না থাকার কারণে কিংবা অর্থ না থাকার কারণে তা অসম্ভব হলে, একাধারে ৬০ টি রোযা রাখতে হবে। মাঝে কোন বিরতি দেয়া যাবে না। যে কোন কারণে মাঝে একটি ছুটে গেলে পুনরায় শুরু থেকে ৬০ টি রাখতে হবে। অবশ্য মহিলাদের (মাসিক) ঋতুস্রাবের কারণে ধারাবাহিকতায় সমস্যা হবে না। শর্ত হলো, রক্ত বন্ধ হওয়ার পর থেকে কালবিলম্ব না করে আবার রোযা রাখা আরম্ভ করে দিতে হবে।
কাফফারার রোযা আরম্ভ করার আগে দেখে নিতে হবে যাতে মাঝে রোযা নিষিদ্ধ এমন কোন দিন যেমন ঈদের দিন না আসে। যাতে ধারাবাহিকতা ছুটে না যায়।
কোন কারণে ধারাবাহিকভাবে ৬০ টি রোযা রাখতে অক্ষম হলে, যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ৬০ জন দরিদ্র লোককে পেট ভরে দু’বেলা খাবার খাওয়াবে। এ ৬০ জন দরিদ্র প্রাপ্ত বয়স্ক বা প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হওয়ার কাছাকাছি হতে হবে। একবেলা যাদেরকে খাওয়ানো হবে অপর বেলায় তাদেরকেই খাওয়াতে হবে। একেবারে ছোট বাচ্চাকে খাওয়ালে তা যথেষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত ৬০ জন দরিদ্র লোকের প্রত্যেককে এক সাদাকায়ে ফিতর পরিমাণ সম্পদ দান করলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।
কাফফারার ক্ষেত্রে একজনকে একদিনে একাধিক সাদাকায়ে ফিতর সমপরিমাণ সম্পদ দিলে তা এক সাদাকায়ে ফিতর ধরা হবে। তাই আরো ৫৯ টি সাদাকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে।
গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া একই রমযানে একাধিক রোযা ভাঙ্গলে কাফফারা একটাই আদায় করতে হবে। অবশ্য একাধিক রমযানের রোযা হলে, কাফফারা একাধিক আদায় করতে হবে।
অতি বৃদ্ধ/বৃদ্ধা রোযা রাখতে পরিপূর্ণ অক্ষম বা রোযা রাখতে অসম্ভব হলে অথবা রোযার কারণে রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হলে পাশাপাশি ভবিষ্যতে রোযা রাখার শক্তি পাবে না বলে মনে হলে, প্রতিটি রোযার পরিবর্তে এক সাদাকায়ে ফিতর পরিমাণ সম্পদ গরীবদের দান করতে হবে বা কোন গরীবকে পেট ভরে দু বেলা খাবার খাওয়াতে হবে। আর এটাকেই ফিদিয়া বলা হয়।
মুসাফির সফর থেকে ফিরে কিংবা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করার মত সময় পাওয়ার পরও যদি তা কাযা না করে আর এ অবস্থায় ইন্তিকাল করে এবং ইন্তিকালের পূর্বে ফিদিয়া দেয়ার অসিয়ত করে যায়, তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা ফিদিয়া আদায় করা উত্তরাধিকারীর উপর আবশ্যক। অসিয়ত না করে থাকলে প্রাপ্ত বয়স্ক উত্তরাধিকারীগণ নিজ অংশ থেকে ইচ্ছে করলে ফিদিয়া দিতে পারবে। তবে রোযা রাখার সুযোগ না পেয়ে মারা গেল ফিদিয়া দিতে হবে না। কারো পক্ষ থেকে ফিদিয়া দেয়ার পর যদি সে রোযা রাখতে সক্ষম হয়ে যায়, তবে তাকে ফিদিয়া দেয়া রোযার কাযা করতে হবে।
কারো যদি ফিদিয়া আদায়ের সামর্থ না থাকে, তবে সে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করবে এবং অন্তর দিয়ে আশা রাখবে, যদি সামর্থবান হয় তাহলে ফিদিয়া আদায় করে দিবে।
(হিদায়া, আদদুররুল মুখতার, ফাতাওয়ায়ে শামী, আলফিক্বহ আলাল মাযাহিবিল আরবাআ, বাদায়িউস সানায়ে, বাহরুর রায়িক, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, হাশিয়াতুত তাহতাবী আলাল মারাক্বী, আহকামুল আতফাল, মাসাইলে রোযা, জাওয়াহিরুল ফিক্বহ, আহকামে যিন্দেগী ও তুহফতুল খাইর ইত্যাদি কিতাব থেকে সংগৃহিত)
রমযান মাসে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কারণ ছাড়া রোযা পরিত্যাগ করলে বা ভঙ্গ করলে বা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ে স্ত্রীচর্চা করলে রোযা নষ্ট হয়ে যায় এবং তার উপর কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হয়। রোযার কাফফারা হলো একজন কৃতদাস আজাদ করা অথবা দুই মাস লাগাতার রোযা রাখা অথবা ষাটজন অভাবী মিসকিনকে খাবার খাওয়ানো। কাফফারা আদায়ের বিষয়টি কঠিন, সুতরাং কারোই কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হয় এমনভাবে রোযা ভাঙ্গার ঝুঁিক নেয়া উচিৎ নয়। মহান আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তাওফীক দিন আমীন।