রমযানুল মুবারক আস্-সালাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ৭:৪৩:২৭ অপরাহ্ন

শাহ নজরুল ইসলাম
‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য রোযার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান দেওয়া হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (কুরআন মাজীদ, সূরা বাকারা ২/১৮৩)
আজ রোববার, ১০ রমযান, ১৪৪৪ হিজরি। মুসলিম উম্মাহর নৈতিক চারিত্রিক ও আধ্যাত্মিক মানোন্নয়নের মাস মাহে রমযানের রহমতের দশকের শেষ দিন।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানব সন্তানের প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদানকে দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, রোযা ব্যতীত। কেননা রোযা আমারই জন্য এবং আমিই এর প্রতিফল দান করবো। সে আমারই জন্য নিজ প্রবৃত্তি ও খানাপিনা ত্যাগ করে। রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি তার ইফতারের সময় এবং অপরটি বেহেশতে নিজ প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ লাভের সময়। নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের খুশবু অপেক্ষাও অধিক সুগন্ধময়। রোযা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারো রোযার দিন আসে সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং অনর্থক শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করতে চায়, সে যেন বলে আমি একজন রোযাদার।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
আগামী রমযানে আবার আমরা রহমত ও মহান আল্লাহর দয়ার দশক পাব কিনা জানি না। বিগত দিনগুলোতে কতটা দয়াময় আল্লাহর দয়ার ভাগিদার হতে পেরেছি তা আল্লাহ-ই ভালো জানেন। দুনিয়া জুড়ে অশান্তি মানুষের পিছু ছাড়ছে না। মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশই এখনো অশান্ত। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সমগ্র বিশ্বে। আরাকানের মুসলমানরা দেশ ছাড়া। কাশ্মীর, আসাম, চীন এর মুসলমানরা শান্তিতে নেই। রহমতের আজকের এই শেষ দিনে মহান আল্লাহর কাছে র্প্রাথনা করি প্রভু হে! আপনি দুনিয়াবাসীর প্রতি দয়া করুন। আমাদের সকলকে হিদায়ত দান করুন। আপনার সন্তুষ্টির পথে আমাদের চলার তাওফীক দিন। মানবজাতির জন্য শান্তি নসীব করুন। বিশেষত মজলুম উম্মাহর শান্তি, মুক্তি ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে দিন। উম্মাহকে যোগ্য নেতৃৃত্ব দান করুন।
প্রিয় পাঠক! আমরা কয়জনই বা এ মহিমান্বিত মাসের হক আদায় করে সিয়াম পালন করছি। নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করা দরকার। রমযানুল মুবারক হচ্ছে ইবাদত, তিলাওত, যিকির পবিত্রতা অর্জন ও স্র্ষ্টার নৈকট্য লাভের এক সর্বজনীন বিশ্ব মৌসুম। আত্মিক উন্নয়ন, উৎকর্ষ সাধন ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক মহা রাজকীয় উৎসব। পূর্ব পশ্চিম ও উত্তর দক্ষিণের সকল মুসলমান সমভাবে এ উৎসবের অংশীদার। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, পণ্ডিত, মূর্খ রাজা, প্রজা, ধনী, গরিব সকলেই ইহ-পরকালীন কল্যাণ অর্জনের এ প্রতিযোগিতায় সমান উৎসাহী। ইসলামী দুনিয়ার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত অভিন্ন নিয়মে পালিত হচ্ছে সিয়াম সাধনা। মানবজীবনে যার প্রভাব সুদূর প্রসারী।
সিয়াম সাধনার এ সৌন্দর্য ও রূপ শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) তাঁর অন্তর্চক্ষু দ্বারা যথার্থই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।‘রমজানুল মুবারকের সাথে সাথেই খুলে দেয়া হয় জান্নাতের সকল দরজা।’এ হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন,‘সিয়াম যেহেতু একটি সার্বজনীন ইবাদত, যেহেতু রুসুম ও বিদ’আতের সকল মলিনতা থেকে তা মুক্ত, সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষ যখন সিয়াম সাধনায় ব্রত হয় তখন তাদের জন্য শয়তানকে বন্দি করে রাখা হয়। জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘মুসলমানদের সকল পর্যায়ের মানুষ যেহেতু একই সাথে একই নিয়মে সিয়াম পালন করে, সেহেতু এ কঠিন ইবাদতও তাদের জন্য সহজ সাধ্য হয়ে যায়। এ সকল অবস্থার কারণে সকলেই ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণীত হয়।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ্)
এমনিভাবে এই ঐক্যবদ্ধ ইবাদত বিশিষ্ট ও সাধারণ সকলের জন্য কল্যাণ ও বরকত বয়ে আনে। মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের প্রতি যে নূর বা জ্যোতি বর্ষিত হয় এবং আল্লাহর যে অসংখ্য নিয়ামত তারা লাভ করেন সাধারণ লোকেরাও তা থেকে বঞ্চিত হয় না। কারণ আল্লাহর দয়া সকল মানুষের জন্য অবারিত।
মহান মালিকের অফুরন্ত করুণা, দয়া, মায়া আর ভালোবাসায় আমরা যেন সকলেই স্নাত হই, সিক্ত হই, সতেজ ও সবল হয়ে উঠি ঈমান, আমল, আখলাক ও ইহসানের গুণে- সে তাওফীক চাই মালিকের দরবারে। তিনি আমাদের নিজ গুণে ক্ষমা করুন, তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিন, এই মুনাজাত।