পুরানো আসবাবপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ৩:০৬:৪২ অপরাহ্ন
রফিকুর রহমান লজু
বাড়ির পুরানো আসবাবপত্র সংরক্ষণের শখ শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান নামের এক সৌখিন ব্যবসায়ীর। অনেক জিনিসপত্রের মধ্যে থালা-বাসন ফার্ণিচারসহ রয়েছে মূল্যবান আরও কতোকিছু। আছে ১১২ বছরের পুরানো পালঙ্ক এবং ২৫০ বছরের পুরানো টাকা রাখার বাক্স। অত্যন্ত যতœসহকারে তিনি সংরক্ষণ করে থাকেন তাঁর হেফাজতে থাকা আসবাবপত্র। টাকা রাখার বাক্সটি রুপার। এখানে ২০০ বছরের ৩০ প্রকারের ২ শতাধিক মুদ্রা। আরো রয়েছে রুপার নৌকা, চেয়ার, সেতার, পায়ের মল, গলার হার, হুক্কা, কাঁটা চামচ, চামচ, গ্লাস, সুরমাদানি, আতরদানি ও কুপি। বাড়িখানি ছোট-খাটো জাদুঘর হয়ে ওঠেছে। আলমগীর খান তার মা-বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে এমনটি করেছেন। আর ইহা একটি ব্যতিক্রমি ও অনন্য জাদুঘর হয়ে ওঠেছে। শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খানের বয়স ৬৬ বছর। ১১২ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী পালঙ্কে ছোটবেলায় বোন রোকেয়া বেগম কাজলসহ তিনি মা-বাবার সঙ্গে একত্রে ঘুমিয়েছেন। তাঁর পিতা আজম খান অলংকারের ব্যবসা করতেন।
১১২ বছরের পালঙ্কের ইতিহাস হলো এই, কুমিল্লার এক জমিদার বাংলাদেশ থেকে চিরতরে ভারতে চলে যাওয়ার সময় পালঙ্কটি আজম খানের নিকট বিক্রি করে দেন। আজম খানের পুত্র শাহ মোহাম্মদ আলমগীরের জন্মের আগে পালঙ্কটি সংগ্রহ করা হয়। পালঙ্কের গায়ে খোদাই করে লেখা আছে ৮ কার্তিক, ১৩১৭ বাংলা। এটির কারিগর কৈলাশ চন্দ্র সূত্রধর। তাদের বাড়িতে এটি আছে ৭৫ বছর ধরে। এটির আয়তন লম্বায় ৮ ফুট, পাশে ৬ ফুট। খাটের স্ট্যান্ডসহ উচ্চতা সাড়ে ৭ ফুট। খাটটি ফ্লোর থেকে ২ ফুট উচুতে। শাহ মোহাম্মদ আলমগীর খান জানান, ১৯৬৭ সালে তার বাবা আজম খান এবং ১৯৮৮ সালে মা তাহেরা বেগম মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর পালঙ্কটি আর তেমন ব্যবহার হয় না। খাটের কাছে গেলে তার মা-বাবার কথা মনে পড়ে যায় এবং তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। মা-বাবার স্মৃতি ধরে রাখতে তিনি যুগের পর যুগ এটি সংরক্ষণ করে চলেছেন। তিনি তাঁর সন্তানদেরও বলে রেখেছেন এটি সংরক্ষণ করতে। এলাকা থেকে জানা যায়, ১১২ বছরের পালঙ্ক ও অন্যান্য প্রাচীন সংরক্ষিত জিনিসপত্র দেখতে প্রায়ই বাড়িতে লোকজন আসেন। কফি কালারের লোহা কাঠের নকশা করা খাটটি এখনো মজবুত। খাটের যতœ বলতে গত ৫০ বছরে মাত্র একবার এটি বার্নিশ করা হয়েছিল। দেখতে এখনো এটি নতুনের মতো।
এত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এই আসবাবপত্রগুলো ব্যক্তিমালিকানায় অমনি অমনি পড়ে থাকা সমীচীন নয়। তারা দেশের কোনো জাদুঘরে দিয়ে দিতে পারেন। চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপপরিচালক ড. আতাউর রহমান বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে সংরক্ষণে থাকা উক্ত নিদর্শনগুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তারা ইচ্ছে করলে এগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করতে পারেন। তখন দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী এগুলো দেখার সুযোগ পাবেন এবং এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
সূত্র : বাড়ি যেন জাদুঘর, মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা, দৈনিক প্রতিদিন ২০.১২.২০২২
লেখক : সাবেক শিক্ষক ও সিনিয়র কলামিস্ট।