জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ৩:২৪:৩৯ অপরাহ্ন
অনর্থক ও বাজে কথা পরিহার করো। -আল কুরআন
আজ তেসরা এপ্রিল। জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের এই দিনে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন এফডিসি গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই দিনকে স্মরণ করে ২০১২ সালে প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করা হয়। একাধারে দিবসটি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠা দিবসও। এক সময়ের জমজমাট চলচ্চিত্র শিল্প আজ হুমকির মুখে। সামাজিক-রাজনৈতিক সুস্থ পরিবেশ গঠনে চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও আমাদের দেশে বর্তমানে চলচ্চিত্রের সেই অবস্থা নেই। এখানে যেসব চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তার বেশিরভাগই মানসম্মত নয়; যেগুলো মূলত ব্যবসায়িক চিন্তা থেকেই নির্মিত হচ্ছে। অথচ চলচ্চিত্র গুলো সেভাবে ব্যবসাও করতে পারছেনা। তাই একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমাহলগুলো। অতীতে দেশে যেখানে প্রায় দেড় হাজার সিনেমাহল ছিলো, সেখানে বর্তমানে একশ’টি হলও সচল নয়। এই প্রেক্ষাপটে আজকের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপনের গুরুত্ব অনেক।
আমাদের দেশে চলচ্চিত্রের ইতিহাস পুরনো। এই ভূ-খ-ে ১৮৯০ এর দশকে চলচ্চিত্র প্রদর্শনি শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯০০ এর দশকে নির্বাক এবং ১৯৫০ এর দশকে সবাক চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন শুরু হয়। এখানকার সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে চলচ্চিত্রের প্রায় ৫০ বছর সময় লেগেছিলো। ১৯৫৪ সালে এই ভূ-খ-ের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। ১৯৫৯ সাল থেকে প্রতি বছরই এদেশে বিপুল পরিমাণ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়ে আসছে। এই ধারা অব্যাহত আছে এখনও। তবে চলচ্চিত্রের সেই সুদিন এখন আর নেই। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে এদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো শিক্ষা, তথ্য বিনোদন তথা সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ের জন্য দর্শকদের মন জয় করে আসছে। মহান ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যূত্থান কিংবা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র গুলো দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে আজও অনুপ্রাণিত করছে যেকোন ন্যায্য অধিকার আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে। এর বাইরেও সমাজসচেতনমুলক অনেক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে; যেগুলোর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। এখন যেসব চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তার মধ্যে হাতে গোনা দুয়েকটির নাম উল্লেখ করা যায় যেগুলোতে নির্মাতাদের মেধা ও মননের ছাপ রয়েছে।
আমাদের এই ম্রিয়মান চলচ্চিত্রকে জাগিয়ে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক উৎকর্ষের এই যুগে মানুষ অনায়াসে বিদেশি চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় ভালো ছবি নির্মিত হলে দর্শক হলমুখী হবে, এতে সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিককালে তার কিছুটা প্রমাণও পাওয়া গেছে। যথাযথ শিল্পমান ও কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন চলচ্চিত্র তৈরি হলে মানুষ আর বিদেশি ছবির দিকে ঝুঁকবে না। আর এজন্য দরকার সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ। সর্বোপরি মেধাবিরা যদি এই শিল্পে মনোনিবেশ করেন, তবে ভালো কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। এব্যাপারে সরকারের যথাযথ সহযোগিতারও দরকার রয়েছে।