নগরীর ফুটপাত পথচারীদের জন্য কতটা নিরাপদ?
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ৭:০০:১১ অপরাহ্ন
ইউনুছ চৌধুরী
সিলেট নগরীতে সড়ক প্রশস্তকরণের পাশাপাশি নির্মিত হচ্ছে ফুটপাতও। অনেক স্থানে উঁচু-নিচু ও সরু ফুটপাত পথচারীদের চলাচল সুগম করার পরিবর্তে বিঘ্নিত করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। এসব ফুটপাত দিয়ে চলাচল নিরাপদ নয় বলে তাদের মন্তব্য। এ বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর বলছেন, কোন উপায় না থাকায় ফুটপাত যতটা সম্ভব সমতল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘এ ধরণের ফুটপাত পথচারী বান্ধব নয়-এমন মন্তব্য করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেছেন, পর্যাপ্ত জায়গা (স্পেস) না থাকায় সমঝোতার মধ্য নিয়ে নগরীতে ফুটপাত নির্মিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিলেট মহানগরীর উন্নয়নের অংশ হিসেবে নগরীর সড়কগুলো প্রশস্ত করা হচ্ছে। একই সাথে সড়কের পাশে ফুটপাত ও রোড ডিভাইডার এবং সড়ক দ্বীপ বা চত্বরগুলো নতুন করে পুন:সংস্কার হচ্ছে। সড়ক দ্বীপে সিলেটের ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। ফুটপাত গুলো সংস্কার, প্রশস্তকরণ অথবা ফুটপাতবিহীন স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে। সংস্কারের পাশাপাশি উন্নত টালি বসিয়ে দৃষ্টিনন্দন রঙিন ফুটপাত তৈরি করা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন বাসা বাড়ি, মার্কেট, দোকান ও পাড়ার সড়কের সাথে মিলিয়ে ফুটপাত নির্মাণ করতে গিয়ে কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হয়ে গেছে ফুটপাত। কোথাও কোথাও ফুটপাত অত্যন্ত সরু। দুই বা ততোধিক ব্যক্তি এক সাথে স্বাভাবিকভাবে অনেক ফুটপাতে চলাচল করতে পারেন না বলে অভিযোগ অনেক পথচারীর। আবার অনেক স্থানে ফুটপাত রাস্তা থেকে অনেক উঁচু হওয়ায় ফুটপাত থেকে রাস্তায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় বলে পথচারীরা অভিযোগ করেন।
আম্বরখানাস্থ বাসা থেকে জিন্দাবাজার মুক্তিযোদ্ধা গলির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হেঁটে যাওয়া-আসার চেষ্টা করেন জামান চৌধুরী (৫৮)। তিনি জানান, অনেক স্থানে ফুটপাত উঁচু-নিচু হওয়ার কারণে অসতর্ক হয়ে পা ফেলে অনেক দিন পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কোন কোন স্থানে ফুটপাত অনেক সরু। স্বাভাবিকভাবে হাঁটা যায় না। কোন স্থানে আবার রাস্তা থেকে অনেক উঁচু ফুটপাত হওয়ায় পড়ে যাওয়ার ভয় থাকে বলে তার মন্তব্য।
লামাবাজার এলাকার কলেজ শিক্ষক শতাব্দি চক্রবর্তী জানান, লামাবাজার থেকে জিন্দাবাজার পর্যন্ত তিনি প্রায়শ হেঁটে যান। কিন্তু, হকারদের কারণে ফুটপাতে চলাচল নিরবচ্ছিন্ন নয়। টালি বসিয়ে ফুটপাত উন্নত করলেও হাঁটতে ইচ্ছে হয় না বলে জানান তিনি।
নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা ও জিন্দাবাজারস্থ ইদ্রিস মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শরিফ উদ্দিন (৬০) বলেন, উপশহর থেকে জিন্দাবাজার সব জায়গায়ই উঁচু-নিচু ফুটপাত রয়েছে। যা হাঁটার জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত নয়। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে দিতে বা চলাচল করতে সতর্কতার সাথে পা ফেলে চলতে হয় বলে তার মন্তব্য।
কোর্ট পয়েন্ট এলাফার ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মকসুদ আহমদ (৪০) জিন্দাবাজারে সরু ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় মানুষের ঠাসাঠাসিতে অনেক সময় মোবাইল-মানিব্যাগ খোয়ানোর ভয় থাকে। এ ফুটপাতে নিজের একটি মোবাইল খোয়ানোর কথা জানান তিনি।
সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, বিকল্প না থাকায় বাসা-বাড়ি-মার্কেট-পাড়ার রাস্তা সবকিছু বিবেচনা করেই তাদেরকে ফুটপাত নির্মাণ করতে হচ্ছে। ফুটপাত নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায়-তাদেরকে এমনটি করতে হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরীতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ফুটপাত রয়েছে। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার সাথে ফুটপাত গড়ে উঠেছে। যে স্থানে ড্রেন যেমন, সেই স্থানে তেমনভাবে ফুটপাত নির্মিত হচ্ছে। নগরীতে ৬ ফুট চওড়া ফুটপাত নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ফুটপাত বড় করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ফুটপাত অবকাঠামো বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তবে প্রয়োজন শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা। যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা, ফুটপাত দখল রোধ, হকার বসতে না দেয়া সর্বোপরি ফুটপাতের সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও জনগণের অনুবিধা হবে না বলে ওই কর্মকর্তার মন্তব্য।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফুটপাত হবে সড়কের মতোই নিরাপদ ও পরিষ্কার। সেখানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এবং একই সাথে হবে তা মসৃণ ও সমতল।
শাবির অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, স্থানীয়দের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে যতটা পারা যায় ফুটপাত নির্মাণ করতে হবে। তবে শহরের বর্ধিত অংশে ফুটপাত নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া উচিত বলে মন্তব্য এ অধ্যাপকের।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার সাথে ফুটপাতের উঁচু-নিচুর বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট মাপের মধ্যে করা হয়-যাতে ব্যবধানটা বেশি না হয়। যাতে মানুষ পায়ে চলাচলের সময় অনিরাপদ মনে না করেন। তবে কিছু কিছু জায়গায় এই ব্যবধানটা ঠিকমতো মানা হয়নি।’
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) সিলেট বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ফজলে রব্বে বলেন, সিলেটে ড্রেনেজ ও ফুটপাত এক সাথে করা হয়েছে-যা কোন বড় শহরের জন্য উপযোগী নয়। এ কারণে সিলেট জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে না। সিলেটের জন্য আলাদা ফুটপাত ও আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে তার মন্তব্য।
এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।