জৈন্তাপুরে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত ব্যবসায়ী সমছু মারা গেছেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৩, ৭:০৮:২১ অপরাহ্ন
থানায় মামলা ও নিহতের দাফন সম্পন্ন
জৈন্তাপুর (সিলেট) থেকে নূরুল ইসলাম : জৈন্তাপুরে পারিবারিক দ্বন্দ্বে আহত ব্যবসায়ী সমছু উদ্দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে তিনি মারা যান। নিহত সমছু উদ্দিন (৪২) দরবস্ত ইউনিয়নের চাল্লাইন গ্রামের আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান এর পুত্র।
জানা গেছে, উপজেলার দরবস্ত বাজারে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে চাল্লাইন গ্রামের একই গোষ্ঠীর চাচাত ভাইদের মধ্যে মারামারি হয়। মারামারির ঘটনায় আপন চাচাত ভাই দরবস্ত বাজারের ব্যবসায়ী সমছু উদ্দিনসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৭/৮ জন ভাই-ভাতিজা আহত হন। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করে কেউ কেউ বাড়িতে চলে আসেন।
জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ফোর্স প্রেরণ করা হয়। এই ঘটনায় ২৫ মার্চ জৈন্তাপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-২০ এবং জৈন্তাপুর জি আর-৫৩/২০২৩। পুলিশ ঘটনার পর থেকে আসামীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরো জানান, গত ২৪ মার্চ রাত আনুমানিক ১টার দিকে দরবস্ত বাজারে চাল্লাইন গ্রামের একই গোষ্ঠীর আপন চাচাত ভাইদের মধ্যে পারিবারিক জায়গা-জমিসহ নানা বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দরবস্ত ইউনিয়নের চাল্লাইন গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য শামীম আহমদের পরিবার একই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ আপন চাচাত ভাই বশির উদ্দিনের পরিবারের মধ্যে তাদের জায়গা-জমিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলছিল। এনিয়ে তাদের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা চলে আসছে। এ দ্বন্দ্বের জের ধরে ২৪ মার্চ রাতে দরবস্ত বাজারে দুই পক্ষের মাঝে প্রথমে কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন।
চাল্লাইন গ্রামের মরহুম আব্দুল হক (মেম্বার)’র ছেলে দরবস্ত বাজারের লীজ গ্রহীতা বর্তমান ইউপি সদস্য বশির উদ্দিন, তার ভাই কামাল উদ্দিন, তাজুল আহমদ, নাছির উদ্দিন, রহিম উদ্দিন, ভাতিজা তানভীর আহমদ, আরিফ আহমদসহ তাদের পক্ষের অন্তত ১০/১৫ জন এবং অপর পক্ষে তাদের আপন চাচাত ভাই সমছু উদ্দিন তার ভাই শামীম আহমদ, এডভোকেট মাসুক আহমদ, ফয়সল উদ্দিন, মামুন রশিদসহ অন্তত ১০/১২জন বাজারের দক্ষিণ গলিতে মারামারিতে জড়ান।
উভয় পক্ষের মধ্যে অন্তত ১০/১৫ মিনিট ধরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হন বাজারের ব্যবসায়ী সমছু উদ্দিন, এডভোকেট মাসুক আহমদ, ফয়সল উদ্দিন, মামুন রশিদ ও অপর পক্ষের ইউপি সদস্য বশির উদ্দিন, কামাল উদ্দিন, রহিম উদ্দিন, নাছির উদ্দিনসহ অন্তত উভয় পক্ষের ৭/৮ জন। সংঘর্ষে সমছু উদ্দিনের মাথায় আঘাত লাগে।
এ ঘটনার খবর পেয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং মুরব্বিদের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে জৈন্তাপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত সমছু উদ্দিনসহ উভয় পক্ষের অন্য আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। গুরুতর আহত সমছু উদ্দিন ঢাকা ও সিলেটে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসারত অবস্থায় ৩১ মার্চ রাত ১২টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বিকেল ২টার দিকে জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন নিহতের লাশ সিলেট থেকে চাল্লাইন গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।
গত শনিবার বাদ আছর চাল্লাইন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
জানাজার নামাজে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল আহমদ, দরবস্ত ইউপি চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহারসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি ওমর ফারুক দরবস্ত বাজারের মারামারির ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজন মারা যাওয়ার কথা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার খবর পেয়ে ঐদিন রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। অভিযাগ পাওয়ার পর আমরা মামলা রেকর্ড করেছি। পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।