রমযানুল মুবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ৭:২৩:৫০ অপরাহ্ন
শাহ নজরুল ইসলাম :
আজ মঙ্গলবার, ১২ রমযান, ১৪৪৪ হিজরী। রহমতের দশক আমরা অতিক্রম করে এসেছি। মাগফিরাতের দশকের আজ দ্বিতীয় দিন। এ দশকে মহান আল্লাহ উম্মতের অসংখ্য মানুষকে ক্ষমা করে দিবেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার জন্য উপযোগিতা অর্জন করতে হয়। ক্ষমা পাওয়ার চেষ্টা তদবীর করতে হয়। এ বরকতময় মাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন-
‘রমযান মাস হলো সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সত্য পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ। আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে, সে অন্য দিনে (রোযা রেখে) সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না। যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার জন্য মহান আল্লাহর মহত্ত¡ বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (কুরআন মাজীদ : সূরা ২, বাকারা : আয়াত ১৮৫)
এ মহিমান্বিত মাসেও অনেককে ফরয রোযা ত্যাগ করতে দেখা যায়। বিশেষত যুবক ও শ্রমিক শ্রেণির মাঝে এ প্রবণতা বেশি। আর শহরাঞ্চলে অনেক মা-বাবা কিশোর-কিশোরীদেরও রোযা রাখতে বারণ করেন, এই অজুহাতে যে তাদের কষ্ট হবে। মা বাবার এই প্রশ্রয় তাদেরকে পরবর্তীতে তাদের প্রতি ফরয রোযা না রাখতে অভ্যস্ত করে তুলে। ইসলামের বিধান মহান আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে তাদের মধ্যে এক ধরনের উপেক্ষা ও অবজ্ঞার মনোবৃত্তি তৈরি হয়। এর দায় দায়িত্ব ঐ সব মা-বাবাকেই নিতে হবে। নাবালিক অবস্থায়ই সন্তানদেরকে নামায রোযায় অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা পিতা-মাতার কর্তব্য।
এ জন্য সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে অভিভাবকদের নামাযের নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে এবং দশ বছর বয়সে নামায না পড়লে শাসন করতে বলা হয়েছে। রোযার ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরীদের অবশ্যই রোযার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নামায পড়ার বয়স থেকে তাদেরকে ধীরে ধীরে মৌলিক ইবাদতের প্রতি যতœশীল করে গড়ে তোলা পিতা মাতা ও অভিভাবকের কর্তব্য। তবে নাবালিগ ছেলে মেয়ে যদি রোযা রাখার পর তা ভেঙে ফেলে তাহলে তাদের উপর এর কাযা ওয়াজিব হবে না। কিন্তুু নামায শুরু করার পর তা ভাঙলে তা পুনরায় আদায় করার জন্য তাদের হুকুম করতে হবে। (ফতয়ায়ে শামী)
আজকাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। নানা বিষয়ে মানুষ দেশ-বিদেশ থেকে প্রশ্ন করেন। মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক, ইমু ও টুইটারে। অতটা তাৎক্ষণিক সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া না গেলেও আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রশ্ন করার এ প্রবণতাকে স্বাগত জানাই, উৎসাহিত করি। এ জন্য যে মহান আল্লাহ কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা না জানলে জ্ঞানী লোকদের জিজ্ঞেস করো।’ একটি প্রশ্ন প্রায়ই লোকজন জিজ্ঞেস করেন যে, রোযা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত দেয়া বা নেয়া জায়েয কি না? এর উত্তরে এ সময়ের বিখ্যাত ফকীহ ভারতের খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী তাঁর ‘জাদীদ ফিকহী মাসাইল’ এ লিখেছেন, ‘পরীক্ষার উদ্দেশ্যে কোন প্যাথলজিক্যাল টেস্ট অথবা রক্ত দানের উদ্দেশ্যে কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে শরীর থেকে রক্ত বের করলে রোযা ভাঙবে না। কিন্তু এতে শারীরিক দুর্বলতার আশঙ্কা থাকলে মাকরূহ হবে। তাই দিনে রক্ত না দিয়ে রাতে দেয়া উত্তম। রোগ-ব্যাধির কারণে কারো রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হলে এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত গ্রহণ করলে রোযা ভাঙবে না। আগের যুগে বাতের ব্যথা উপশমে বা অন্য কারণে মানুষ সিঙ্গা লাগাতো। রোযা অবস্থায় তা জায়েয আছে। তবে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে রোযা অবস্থায় সিঙ্গা লাগানো মাকরূহ। একারণেই ফকীহগণ বলেছেন- সন্ধ্যার পর সিঙ্গা লাগানো উত্তম। (ফাতওয়াই আলমগীরী/১)
রোযা অবস্থায় অক্সিজেন নেয়া যায় কি না? এমন প্রশ্নও করেন অনেকে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন দেয়া হয়ে থাকে। রোযার সময় এ ধরনের অক্সিজেন নেয়া যাবে যদি না এর মধ্যে কোন ধরনের ওষুধ থাকে। তাতে রোযা ভাঙবে কী না এসব মাসাঈল হক্কানী বিজ্ঞ আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে আমল করা আমাদের কর্তব্য।