রোজার শিক্ষা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ এপ্রিল ২০২৩, ৯:০৫:০০ অপরাহ্ন
লুৎফুর চৌধুরী
বছর ঘুরে এলো আনন্দের সোপান ও মুক্তির বার্তা নিয়ে অশেষ মহিমান্বিত মাস মাহে রমজান। যে মাসকে মহান আল্লাহ পাক নিজের সাথে সংযুক্ত করেছেন, যার ফজিলত অনেক বেশি। রমজান মাসে রোজার মাধ্যমে পথহারা মানুষকে সত্য সুন্দর পথে চলতে শেখায়, জীবনযাত্রার দিক পরিবর্তন ঘটে। সমগ্র মানবজাতির পথের দিশারী রমজান মাস। রোজাদারদের মহান আল্লাহ পাক নানাভাবে পুরস্কৃত করবেন। রমজান মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত করতে হবে, ভিক্ষুকের মতো ভিক্ষা চাইতে হবে আল্লাহর কাছে। প্রাণভরে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। সুখের সাগরে ডুবে থাকা রোজা নয়, সুবেহ সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার তৃপ্তি থেকে বিরত থেকে, ক্ষুধা তৃষ্ণা অভাব অনটন মানুষের জীবন দশা অনুভব করা রোজার বিধান।
পাড়া মহল্লায় গরীব দুঃখী মানুষের ঘরে ঘরে ইফতার সামগ্রী যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে হবে, দানখয়রাত জাকাত দান করতে হবে এতে কৃপণতা বখিলতা ঠিক হবে না। কারণ অনেকে দানখয়রাত করতে রাজি নন তার টাকা পয়সা ধন সম্পদ দানের মাধ্যমে কমে যাবে। আমরা মনে রাখতে হবে, দয়াময় প্রভু ফেরাউন ও নমরুদকে এমনভাবে সম্পদশালী ব্যক্তি করেছিলেন যার ফলে তারা নিজেরা প্রভু দাবি করেছিল সম্পদ বিতরণ না করায় বিপদগ্রস্ত হয়েছিল। এতে বোঝা যায়, ধনসম্পদ ঢাকা কড়ি মহান রবের পক্ষ থেকে।
মানুষের মন আত্মা পরীক্ষার জন্য, কথায় আছে আল্লাহ দেয় ধন দেখে মন কেড়ে নিতে কতক্ষণ। আমাদের কিছুসংখ্যক লোক আছেন নামাজ রোজা নফল ইবাদত নিয়মিত পালন করেন কিন্তু দানশীল নয়, দানখয়রাত জাকাত আদায় করতে চান না। এর বিশেষ কারণ, ধনসম্পদ টাকা কড়ি হাতছাড়া হয়ে যাবে শিগগিরই কমে যাবে। ‘ক্ষণস্থায়ী জীবন অনিশ্চিত ভ্রমণ’ এই জীবনে কে কতোকাল বাঁচবে কখনো বা মরবে কেউ বলতে পারবে না। ফেরাউন ও নমরুদ কি বেঁচে আছে? পৃথিবীতে মহান আল্লাহ এমনভাবে সম্পদশালী ব্যক্তি করেছিলেন যার ফলে তারা এতো কৃপণ হয়েছিল, এমনকি তারা নিজেরা প্রভু দাবি করেছিল। তারা ধনসম্পদ বিতরণ অস্বীকার করায় নিজেকে প্রভু দাবি করায় বিপদগ্রস্ত হয়েছিল।
ধনসম্পদ বিতরণ ও দানশীল হওয়া এ নয় যে, নিজের সুখের আশায় সাধারণ জনগণকে ঠকিয়ে, ধোঁকা দিয়ে, বোকা বানিয়ে পাপের ধনে ধনী হয়ে, আপনি একজন দানশীল হয়ে গেলেন, দেশে বিদেশে সমাজে চারিদিকে আপনার সুনাম ছড়িয়ে পড়লো, আপনে জানেন, আপনার অবৈধ পন্থায় সম্পদের ভান্ডার এর বিরাট অংশই হারাম, তবুও আপনি মনে মনে ভাবলেন আমি একজন সমাজের জনপ্রিয় সম্মানিত ব্যক্তি। আপনি কখনো তা নয়,আপনি একজন অসৎ চরিত্রের অধিকারী এবং বিষাক্ত সাপের মতো। আপনি পাপের ধন বিতরণ করে দোয়া চান।
এই সুন্দর পৃথিবীতে সৃষ্টি জগতের ¯্রষ্টা মানবজাতিকে বিবেক বুদ্ধি দিয়েই পাঠিয়েছেন। নিজের বিশ্বাসের ওপর সৎ উপার্জনের মাধ্যমে বেঁচে থাকা জীবনের সৌন্দর্য ও গৌরব। যারা ভালো অবস্থায় খারাপ অবস্থায় ধৈর্য ধরে, সমাজের জন্য অতি সুন্দর উত্তম সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থা হলো মাহে রমজান। রমজান মাসে হাসিমুখে দানখয়রাত করে, মহান রবের পক্ষ থেকে সত্যি সত্যিই তার সম্পদ বহু গুণ বাড়ে। এতে ঈমানী চেতনা ও দৃঢ়তা অর্জন করতে পারে। রমজান মাসে পরনিন্দা মিথ্যা অপবাদ ঝগড়াঝাটি সবধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবো, এতে আমাদের মানবিক গুণাবলী আত্মশুদ্ধি ও আত্ম রোধের চেতনা সামাজিক রীতিনীতি ফিরে আসবে চেহারা মুখমÐল উজ্জ্বল হবে, অনেক ছোট-বড় কঠিন রোগ-শোক বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি মিলবে। ভোগবিলাস লাভ লোভ হিংসা বিভেদ আপন স্বার্থ ত্যাগ স্বীকার করে সৎ শুভকর্ম দ্বারা দীনদুঃখী আত্মীয় পরিজনদের সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে আল্লাহকে খুশী করার জন্য। তাহলে আমাদের সবার জীবনে সামগ্রিক কল্যাণকর মুক্তির বার্তা ও মহান আল্লাহ পাক নানাভাবে পুরস্কৃত করবেন। যারা আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়ে গেছেন, চিরনিদ্রায় কবর ঘরে শায়িত আছেন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, সঠিক পথ প্রদর্শনের মিনতি জানাই।
লেখক : কবি।