স্মরণ
প্রকৌশলী ফখরুদ্দীন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:২২:০০ অপরাহ্ন

জাবেদ আহমদ :
সিলেট নগরীর খারপাড়ার অনেক পুরনো বাসিন্দা ও প্রবীণ মুরব্বি, আরজদ আলী জামে মসজিদের সেক্রেটারি প্রকৌশলী ফখরুদ্দীন না ফেরার দেশে চলে গেলেন। ৩১ মার্চ ২০২৩ (৮ রমজান) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ইবনে সিনা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ৩০ মার্চ ২০২৩ রাতে তিনি এশার নামাজ ও ৮ রমজানের তারাবির নামাজ আরজদ আলী জামে মসজিদে জামাতে আদায় করেন। বাসায় ফিরে বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করলে নিজ গাড়িতে করে হাসপাতালে রওয়ানা দেন। হাসপাতালে পৌঁছার আগেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা দ্রুত লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যান। ৩১ মার্চ তারাবির নামাজের পর ইমাম মাওলানা আব্দুল হালিমের কাঁপা গলায় মসজিদের মাইকে মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে মরদেহ বাসায় আসলে শোকাতর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। লাশের সাথে ছিলেন মরহুমের জামাতা প্রফেসর ড. আবু নাসের জাফর উল্লাহ। অপেক্ষারত স্বজন এলাকাবাসী তাঁকে একনজর দেখতে ভিড় করেন। রাতেই দেখতে আসেন সিসিক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ ও এস, এম শওকত আমীন তৌহিদ, সিলেট রেল ক্রিসেন্ট সোসাইটির সেক্রেটারি আব্দুর রহমান জামিল, সিলেট জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ প্রমুখ। ১ এপ্রিল বাদ ফজর সকাল ৫.১০ মিনিটে তাঁর হাতে গড়া আরজদ আলী জামে মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে লাশবাহি গাড়ি বড়লেখার পথে রওয়ানা দেয়। বড়লেখায় বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। ইউকে থেকে এসে তাঁর পুত্র জানাজা ও দাফনে শরীক হন। আরজদ আলী জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার গোলজার আহমদ, সদস্য মোঃ আনসার উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম বড়লেখায় গিয়ে দাফনে শরীক হন।
আশির্ধ্বো বয়সেও তিনি আরজদ আলী জামে মসজিদের কাজে, খারপাড়ার সড়ক প্রশস্তকরণসহ সকল সামাজিক কাজে এলাকার তরুণ যুবক মুরব্বিদের সাথে সামনের সারিতে থাকতেন। খারপাড়ার প্রবেশদ্বারে নান্দনিক গেইট, মুর্দার গোসলখানা নির্মাণে প্রকৌশলী মো. ফখরুদ্দীন ছিলেন সকলের সাথে। খারপাড়ার আরজদ আলী জামে মসজিদের জায়গা রেজিষ্ট্রেশন হয় ২০১২ সালে। ২০১৩ সালে মসজিদের প্রথম টিনসেড ভবনটি নির্মিত হয়েছিল। ৩ সদস্যের প্রথম কমিটিতে ছিলেন মো. নুরুল ইসলাম বাচ্চু- মোতওয়াল্লী, মো. মখলিছুর রহমান- সেক্রেটারি ও প্রকৌশলী মো. তফজ্জুল আলী- ক্যাশিয়ার। ২০১৬ সালে মসজিদের পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি হন প্রকৌশলী মো. ফখরুদ্দীন। রমজান মাসের প্রাক্কালে দায়িত্ব নিয়েই টিনসেড মসজিদে এসি লাগানোর ব্যবস্থা করেন। রমজান মাসের পরই টিনসেড মসজিদের স্থলে ৫তলা ভিত্তি বিশিষ্ট মসজিদ পুনঃ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তাঁর বেয়াই প্রকৌশলী আলী সাহেবকে দিয়ে বিনামূল্যে নকশা করান। সেক্রেটারি ও তাঁর সদস্যদের দৃঢ় প্রত্যয় দেখে মসজিদের মোতওয়াল্লী মো. নুরুল ইসলাম বাচ্চু মসজিদ পুনঃ নির্মাণের অনুমোদন দেন। ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর মোতওয়াল্লী মো. নুরুল ইসলাম বাচ্চু মৃত্যুবরণ করলে নতুন মোতওয়াল্লী হন মসজিদের ভূমিদাতা পরিবারের জামাতা মো. শাহীন আহমদ। ৯ সদস্যের মসজিদ কমিটিতে ছিলেন প্রকৌশলী মো. ফখরুদ্দীন- সেক্রেটারি, আহমদ কায়সার মাসুম- ক্যাশিয়ার, মো. মখলিছুর রহমান, মো. আব্দুল হক, মো. সাইফুল ইসলাম খান, শহীদ আহমদ শিব্বির, মো. আলেক খান ও জাবেদ আহমদ। প্রবাসে থাকা আব্দুল আহাদ চৌধুরী, মো. গোলজার আহমদসহ কয়েকজনকে অনারারি সদস্য করা হয়। নতুন মোতওয়াল্লী শাহীন আহমদ মসজিদের পুনঃ নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করতে সর্বাত্মক সমর্থন সহযোগিতা করেন। মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ অনুষ্ঠিত হয়। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত কর্মকর্তা জাবেদ সিরাজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ খারপাড়ায় নির্মিত মুর্দার গোসলখানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে মসজিদের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেন আল হারামাইন গ্রুপের পরিচালক কাজী ফজলুর রহমান ও বিশিষ্ট যুব সংগঠক এস, এম, শওকত আমীন তৌহিদ (বর্তমান কাউন্সিলর)। ১৮ মার্চ ২০১৭ প্রধান অতিথি হিসেবে মসজিদের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর দিনার খাঁন হাসু (বর্তমানে সাবেক), বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, সিলেট এর সেক্রেটারি আব্দুর রহমান জামিল ও হোটেল সুপ্রিম এর সত্বাধিকারী ফয়েজ উদ্দিন লোদী। মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি প্রকৌশলী ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় মাত্র চার মাসেই ৫তলা ভিত্তির নিচতলার পুনঃ নির্মাণ কাজ শেষ করা সম্ভব হয়। রমজানের আগের দিন ২৭ মে ২০১৭ বাদ আসর নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে পুনঃ নির্মাণ করা মসজিদের উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এরপর টানা কাজ চলে মসজিদের দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ১০ লক্ষ টাকার এবং মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর মাধ্যমে এলজিইডি থেকে ১৫ লক্ষ টাকার মসজিদের কাজ হয়। এসব বরাদ্দ প্রাপ্তিতে প্রকৌশলী ফখরুদ্দীন সবসময় তৎপর ছিলেন। তাঁর আহবানে দেশে বিদেশে অবস্থানরত খারপাড়ার বাসিন্দারা, ভাড়ায় বসবাসরতরা মুক্ত হস্তে নিয়মিত দান করতে থাকেন মসজিদ পুনঃ নির্মাণের কাজে। নান্দনিক আরজদ আলী জামে মসজিদ প্রকৌশলী মোঃ ফখরুদ্দীন কে স্মরণীয় করে রাখবে এলাকাবাসীর কাছে, আর ভালো কাজের উত্তম বদলা নিশ্চয়ই মহান আল্লাহপাক তাঁকে আখেরাতে দিবেন বা দিচ্ছেন।
তিনি পাড়ার সকল শুভ কাজে সবসময় সম্পৃক্ত থাকতেন। সিলেট জেলা পরিষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান, সাবেক গণপরিষদ সদস্য মরহুম মোঃ লুৎফুর রহমান তাঁর এমসি কলেজের সহপাঠী বন্ধু ছিলেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিবেশ মন্ত্রী জনাব মো. শাহাব উদ্দিন তাঁর চাচাতো ভাই। তাঁর ছেলে মেয়ে সবাই দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। বড় জামাতা প্রফেসর ড. আবু নাসের জাফর উল্লাহ সিলেট আল কবির ট্যাকনিকাল ইউনিভার্সিটির ভিসি।
লেখক : অতিরিক্ত পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।