বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়লো ৫ হাজার দোকান
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ৬:০৬:১৮ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৫ হাজার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। পরে ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিট প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। আগুন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সাহায্যকারী দলও যোগ দেয়। আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়েছে হেলিকপ্টারও।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, উৎসুক জনতার ভিড় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া, পানির স্বল্পতা ও বাতাসের কারণেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বিলম্ব হয়েছে। আগুন লাগার কারণ এখনো জানা না গেলেও ওই এলাকার আদর্শ মার্কেট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। পরে দ্রুতগতিতে পাশের মার্কেটগুলোর চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আদর্শ মার্কেট বঙ্গবাজারের আওতাধীন ৪টি মার্কেটের মধ্যে একটি।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের একটি সূত্র এ তথ্য জানায়।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার ভোর ৬টা ১০ মিনিটে ৯৯৯ থেকে তাদের কাছে কল যায়। তাদের জানানো হয় বঙ্গবাজারের আদর্শ মার্কেটে আগুন লেগেছে। পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র আরও জানায়, প্রথমে ফায়ার সার্ভিস পৌঁছালে মার্কেটে প্রবেশ করতে বাধা ছিল। মার্কেটের চারদিকে যে তালাগুলো লাগানো ছিল সেগুলো ভাঙতে অসুবিধা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের। কারণ তালাগুলো ভেতরে ছিল।
এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের ১১টি গাড়ি এবং অধিদপ্তরের ভেতরে প্রবেশ করে ইআরসিসি ভবন ও রিসিপশন ভবন ভাঙচুর করে এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মারধর করে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। বাইরে থেকেও উচ্ছৃঙ্খল লোকজন অধিদপ্তরের ভেতরে বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। অগ্নিনির্বাপণের সময়ও অনেক কর্মী মারধরের শিকার হন। পরে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যগণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
# অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত ১৭
বঙ্গবাজার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, দোকান মালিক ও কর্মচারীসহ ১৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের শেখ হাসিনা বার্ন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।
# ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয় ৪ বছর আগে
আগুনের উৎস সম্পর্কে তদন্তের আগে কিছু জানানো যাবে না বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মো. মাইন উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল এই ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়েছিলাম। ১০ বার নোটিশ দিয়েছি, করণীয় যা যা করেছি। তারপরও ব্যবসা চলছিল।’
এ বিষয়ে অন্য সংস্থার গাফিলতি থাকলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি। আগুন নির্বাপণের পর পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।
# আগুনে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি
বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে ভযাবহ অগ্নিকাণ্ডে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বলেন, এখানে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। টিনশেড মার্কেটের সব দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে রাজধানীর অন্যতম জনপ্রিয় পোশাকের এই বাজারে প্রায় আড়াই হাজার দোকান ছিল। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দোকানদাররা অনেক টাকার মালামাল তুলেছিলেন। সেখানে শাড়ি, শার্ট, প্যান্ট, সালোয়ার কামিজসহ সব ধরনের পোশাক বিক্রি হয়।
হেলাল উদ্দিন বলেন, বিক্রেতারা ঈদ উপলক্ষে কয়েক’শ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, গতকাল সকালে যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার কোটি টাকারও বেশি হবে।
তবে, বঙ্গবাজারের দোকান মালিকদের কাছ থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।
# ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জানান, তদন্ত কমিটির বাকি চার সদস্য হলেন, ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দিনমনি শর্মা, সিদ্দিক বাজার ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম, ওয়ারহাউজ ইন্সপেক্টর অধীর চন্দ্র এবং ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-১ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. বজলুর রশিদ।
তদন্ত কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ৭ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।