বায়ুদূষণে মৃত্যু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ২:৪১:০৭ অপরাহ্ন
প্রয়োজনের সময় একতা, দুঃসময়ের জন্য স্বাধীনতা আর সব সময়ের জন্য পরোপকার। -রিচার্ড বক্সটার
বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর ২০ শতাংশের জন্য দায়ি বায়ুদূষণ। বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঞ্চলে ব্যয়সাশ্রয়ি উদ্যোগের মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ এবং সমন্বিত নীতি সহায়তা। দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুদূষণ এবং স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে স¤প্রতি রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়।
বায়ুদূষণ শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপি একটি আলোচিত বিষয়। তবে বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এর মাত্রা ভয়াবহ আকারে বাড়ছে। জানা গেছে,বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত ১০টি শহরের ৯টির অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়। এর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং দরিদ্র অঞ্চলে কিছু সূ² কণা, যেমন কাঁচ এবং ছোট ধূলিকণার ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। কিছুদিন পূর্বে পরিচালিত একটি গবেষণায় বলা হয়-বায়ুমান সূচকে বিশ্বব্যাপি সর্বাধিক দূষণের মাত্রায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। গবেষকদের মতে, বায়ু দূষণের প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ বৃদ্ধিসহ দেশে বছরে প্রায় দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। সুতরাং বায়ু দূষণ বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ ভারত ও নেপালের সীমান্ত দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে বাংলাদেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত জুড়ে দক্ষিণ এশিয়া থেকে দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। বিশেষ করে শীতকালে উত্তর ও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে এদেশে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। বায়ু ছাড়া মানুষসহ কোন প্রাণি বাঁচেনা। আবার দূষিত বায়ু মানুষের প্রাণও কেড়ে নেয়। অর্থাৎ দূষিত বায়ু থেকে মানবদেহে সৃষ্ট নানা রোগ মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। বায়ু দূষণের বিভিন্ন ধরণের কারণ চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে নির্মাণ কার্যক্রমে প্লাস্টিক বর্জ্য পোড়ানো, শিল্প প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইটভাটা, জীবাশ্ম জ্বালানী দহন, সড়ক পরিবহণ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন সংক্রান্ত কর্মযজ্ঞের কারণে বায়ু দূষিত হয়। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ আরও কিছু কারণ রয়েছে বায়ু দূষণের। এর মধ্যে রয়েছে- রান্নার চুলা থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া, সিগারেট থেকে নিঃসৃত ধোঁয়া, নর্দমা নিষ্কাষণ ইত্যাদি। পাশাপাশি মওসুম পরিবর্তন ও বাতাসের আন্তঃসীমান্ত গতিশীলতা বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। শীতকালে বাতাসে দূষিত বায়ু কণার পরিমাণ বেশি থাকে। এই সময়ে বাতাসে দূষিত কণা প্রতি কিলোমিটারে দুইশ’ থেকে পাঁচশ’ কিলোমিটার প্রবাহিত হতে পারে। বায়ু দূষণে নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এর মধ্যে রয়েছে বিকলাঙ্গতা, শ্বাসযন্ত্রের দুর্বলতাজনিত সমস্যা, স্ট্রোক, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি। ডায়াবেটিস, নিউমোনিয়ার মতো ছোঁয়াছে রোগের কারণও বায়ুদূষণ।
আসল কথা হলো, আমাদের দেশ অসচেতনতার জন্যই বায়ু দূষণের মাত্রা বেড়ে চলেছে। মানুষ অহরহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে; এর পরিণাম নিয়ে তারা ভাবছে না। এই সংক্রান্ত আইনেরও কোন তোয়াক্কা করছে না তারা। সরকারও আইন প্রয়োগের কোন গরজ দেখাচ্ছে না। এটাই সবচেয়ে দুঃখজনক। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বায়ুর সঙ্গে দূষিত কণা দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে অন্য দেশেও বিস্তার করতে পারে। তাই শক্তিশালী জাতীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি, বায়ুদূষণ রোধে আন্তঃসীমান্ত উদ্যোগও নিতে হবে।