কুমারগাঁও-আম্বরখানা সোর্স লাইন সংযোজন
নগরীর ৭১ হাজার গ্রাহকের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎপ্রাপ্তি সহজতর হচ্ছে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ৫:৫৮:৫১ অপরাহ্ন
আনাস হাবিব কলিন্স:
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সিলেট-এর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর অন্তর্ভুক্ত এলাকায় মেরামত ও সংস্কার কাজের দরুণ সাট-ডাউনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে সিলেট মহানগরীর ৭১ হাজার গ্রাহকের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সহজতর হবে বলে জানিয়েছেন বিউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম। কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সাথে আম্বরখানা পর্যন্ত ‘সোর্স লাইন’ সংযোজন হওয়ায় গ্রাহকদের এ সুবিধা নিশ্চিত হবে জানান তিনি।
বিউবো বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল করিম জানান, ৭ কিলোমিটার ওই সোর্স লাইনের ২ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ৫ কিলোমিটার ওভার হেড লাইন। গত ৩১ মার্চ সোর্স লাইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে। তিনি আরো জানান, সোর্স লাইনটি চালু হওয়ায় আম্বরখানা ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্রের লোড সঞ্চালন ক্ষমতা এখন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন কারণে কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে আম্বরখা
না ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র লাইনে ফল্ট দেখা দিলে তখন দ্বিতীয় সোর্স লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখা যাবে। এতে গ্রাহকের দুর্ভোগ কমবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।
সূত্র মতে, বিউবো, সিলেট-এর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ আওতায় ৩৩/১১ আম্বরখানা উপকেন্দ্র এবং ৩৩/১১ শেখঘাট উপকেন্দ্রে দিনে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৪৬ মেগাওয়াট। বর্তমানে কুমারগাঁও গ্রীড উপকেন্দ্র থেকে যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সোর্স লাইন সংযোজন হওয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তি অনেকাংশে আরো হ্রাস পাবে।
বিউবো, সিলেট অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও সঞ্চালনে ‘সোর্স লাইন’ সংযোজন মাইলফলক হয়ে থাকবে। বিদ্যুতের উন্নয়নে আরো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিউবো, সিলেট এর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় ‘সোর্স লাইনে’র কাজটি অনেক আগেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে, এর আগে পরীক্ষামূলক ওই লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন চালু হলেও কিছুটা ত্রæটি ধরা পড়ে। অবশেষে গত ৩১ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে সোর্স লাইনটি চালু হয়। ৭ কিলোমিটার ওই লাইনের নগরীর সু্িবদবাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার ওভারহেড লাইন এবং সুবিদবাজার থেকে আম্বরখানা ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র পর্যন্ত ওই লাইনটি আন্ডারগ্রাউন্ড (মাটির নিচ দিয়ে) লাইন।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হাসান সিলেটের ডাককে জানান, সিলেটে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে ২০১৯ সালে শুরু হওয়া কাজের অংশ কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সাথে আম্বরখানা পর্যন্ত ‘সোর্স লাইন’ সংযোজন। প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীতে ৭ কি.মি ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন নির্মাণ করা হয় তখন। পরের বছরের জানুয়ারি মাসে এর সুফল পান নগরবাসী। প্রথম ধাপে হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জঞ্জালবিহীন বিদ্যুতের তার মুক্ত হয়ে দেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন উদ্বোধন হয়। তিনি আরও জানান, এ প্রকল্পের আওতায় আম্বরখানা উপকেন্দ্র থেকে চৌহাট্টা হয়ে শেখঘাট সার্কিট হাউজ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে ভূ-গর্ভস্থ লাইনে বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হয়েছে। সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরো কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, গাছপালা কর্তন ও জরুরি মেরামতসহ নানা ‘অজুহাতে’ সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রায় সপ্তাতেই সাট-ডাউন দিচ্ছেন। এতে রমজানেও দিনভর বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রাখায় গ্রাহকদের পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে মাইকিং ও পত্রপত্রিকার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও অধিকাংশ গ্রাহকের বিষয়টি নজরে না আসায় তাদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, একটু বাতাস কিংবা বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ বিভাগ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যায় না। আবার সংযোগ দিলেও কিছুক্ষণ পর পর ফের বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। শহরের চেয়ে গ্রামে এ সংকট প্রকট বলেও জানান তারা। এ অবস্থা হতে উত্তরণে দ্বিতীয় সোর্স লাইন সহায়ক ভ‚মিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।