বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৬:২৩ অপরাহ্ন
উত্তম কথা বলে শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করো। -আল কুরআন
আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতি বছর আজকের এই দিনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। ১৯৪৬ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সমাজ পরিষদ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যবিষয়ে সম্মেলন ডাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় একই বছর জুন-জুলাই মাসে। ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাংগঠনিক আইন গৃহীত হয়। আর সেই বছর ৭ই এপ্রিল এই সংগঠন আইন কার্যকর হয়। এই দিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৫০ সাল থেকেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে সারা বিশ্বে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছরই দিবসটি পালিত হয় আমাদের দেশে নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের মূল লক্ষ হচ্ছে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, সেই লক্ষ অর্জনে এই দিবসটি পালন আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কতোটুকু ভূমিকা রাখতে পারছে সেটাই বড় প্রশ্ন। সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে জনগোষ্ঠীর বড় অংশ অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত করা।
মধ্যম আয়ের দেশ-এ উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। এই সাফল্যে উচ্ছ¡সিত সরকার। এই আনন্দ উচ্ছ¡াসের অংশীদার আমরাও। জাতির জন্য এই সংবাদ সত্যি গৌরবের। তবে আমাদের স্বাস্থ্যখাতসহ আরও কয়েকটি খাতে উন্নতির ছোঁয়া লাগেনি বললেও অত্যুক্তি হবে না। অথচ প্রতি বছর সরকার এই খাতে ব্যয় করছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বিদেশী সংস্থাও এই খাতে বরাদ্দ করছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোঁড়ায় পৌঁছুচ্ছেনা। বিশাল জনগোষ্ঠী পাচ্ছেনা সেবা। অবস্থাসম্পন্ন-বিত্তশালী কিছু লোকজন ছাড়া বলা যায় ৯০ ভাগ মানুষই কাংখিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা। উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র-হাসপাতালের অবস্থা করুণ। ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হলেও এগুলোতে গ্রামের মানুষ প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা, গ্রামাঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও ঝাড়ফুঁক কিংবা হাতুড়ে ডাক্তারের সেবা নিচ্ছে। তারা অভিজ্ঞ চিকিৎসক বা উন্নত সেবা পাচ্ছেনা বলেই বাধ্য হয়ে হাতুড়ে চিকিৎসকের আশ্রয় নিচ্ছে। সুতরাং আজকের এই বিশ্বস্বাস্থ্য দিবসের প্রাক্কালে এই কথাটি বলা অমূলক হবে না যে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মোটেই ভালো নয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে আমাদের দেশেও। জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞগণ। এর মধ্যে জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয়েরও আশঙ্কা রয়েছে। এই সবকিছুর মোকাবেলায় কি আমরা প্রস্তুত? আজকের এই বিশ্বস্বাস্থ্য দিবসে আমাদেরকে এই নিয়ে ভাবতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সাধারণ মানুষ সাংঘাতিকভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত মানুষের আর্থিক অবস্থাও। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আয়-উপার্জন বাড়ছে না। অথচ বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। ফলে দৈনন্দিন আহার জুটাতে হিমশিম খাচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। তারা বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা থেকেও। আর্থিক দুর্বলতার কারণে চিকিৎসার পেছনে অর্থ ব্যয় করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের পরিণতি হচ্ছে বিনা চিকিৎসায় রোগে শোকে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে সরকারি খাতে চিকিৎসাসেবার মান যেমন দিন দিন নিচের দিকে যাচ্ছে, তেমনি বেসরকারি খাতেও স্বাস্থ্যসেবার মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে নেই। বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করেও মানুষ সু-চিকিৎসা পাচ্ছে না। সেই সঙ্গে আছে ভুল চিকিৎসা। অপরদিকে বাড়ছে ওষুধ পত্রের দাম-চিকিৎসা ব্যয়। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তারা সরকারি চিকিৎসা সেবা তো পাচ্ছেই না, প্রাইভেট চিকিৎসকদের সান্নিধ্য পাওয়াও তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। কারণ অভিজ্ঞ চিকিৎসকগণ মফস্বল এলাকায় চেম্বার খুলতে চান না। এই প্রেক্ষাপটে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস এবং সরকারি-বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রে চিকিৎসা কার্যক্রম যাতে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে চলে আসে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আজকের বিশ্বস্বাস্থ্য দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।