অপুষ্টির শিকার নারীরা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩৫:১৬ অপরাহ্ন
চরিত্র গঠনের কাজ শিশুকাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত চলতে থাকে। – রুজভেল্ট
অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভুগছে বিশ্বের একশ’ কোটির বেশি নারী। আর এটি তাদের স্বাস্থ্যসহ জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনছে। অপর্যাপ্ত পুষ্টির কারণে নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি তাদের মেধার দুর্বল বিকাশ এবং গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতাসহ নানান ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় থেকে জরুরি পদক্ষেপ না নেয়া হলে আগামী প্রজন্মকে এর পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিশ্বের সঙ্কট-কবলিত দেশগুলোতে মায়েদের অপুষ্টি ২৫ শতাংশ বেড়েছে, যা নারী ও নবজাতকদের ঝুঁকিতে ফেলছে। দেখা গেছে, খর্বাকৃতির দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের অর্ধেকই গর্ভাবস্থায় অথবা ছয় মাস বয়সের আগেই এই অবস্থার শিকার হচ্ছে। ইউনিসেফ বলেছে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট লাখ লাখ মা ও তাদের সন্তানকে ক্ষুধা ও মারাত্মক অপুষ্টির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পুষ্টির অভাবে কিশোরী ও নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচেছ। পাশাপাশি তাদের মেধার দুর্বল বিকাশ এবং গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতাসহ নানান ঝুকির সম্মুখীন হওয়ার আশংকা বাড়ছে। এই অপর্যাপ্ত পুষ্টি তাদের শিশুদেরও সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, স্বাভাবিক বৃদ্ধি, লেখাপড়া ও ভবিষ্যতে কর্ম ও উপার্জন ক্ষমতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে কিশোরী ও নারীদের মাঝে পুষ্টি সংকটের মাত্রা বেশি। এছাড়া, জাতিসংঘ বলেছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি দুই মিনিটে একজন মা’কে প্রাণ দিতে হচ্ছে। মাতৃমৃত্যু ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পরেও সন্তান জন্ম দেয়ার ঝুঁকি কমছে না। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও নারীদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। এখানে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী এক কোটি ৭০ লাখ নারী অপুষ্টির শিকার। এদের একটি অংশ অপুষ্ট, ওজন প্রয়োজনের তুলনায় কম। অন্য অংশটি স্থূল, ওজন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।
অপুষ্টিকে একটা নীরব দুর্ভিক্ষ বলে অভহিত করছেন বিশেষজ্ঞগণ। তারা বলেন, অপুষ্টি হলো দক্ষিণ এশিয়ার দুর্দিন। কিছুতেই সে পিছু ছাড়ছে না। নীরব দুর্ভিক্ষ নীরবে এবং অনেকটা নিভৃতে মানুষ মারে। নারীসহ শিশুদের অপুষ্টি নিরসনে জরুরি হচ্ছে দারিদ্র্য নিরসন। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা কমছে। এ ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে ভাবতে হবে সরকারকে।