ঈদের আগে ও পরে ৯ দিন চলবে ‘স্পেশাল’ সার্ভিস
সিলেট-চাঁদপুর রুটে আন্ত:নগর ট্রেন চালু প্রক্রিয়াধীন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ এপ্রিল ২০২৩, ৩:১৩:৪৩ অপরাহ্ন
এনামুল হক রেনু:
সিলেট- চাঁদপুর রুটে আন্ত:নগর ট্রেন চালু এখন আর স্বপ্ন নয়। এ রুটের যাত্রীদের দীর্ঘ প্রত্যাশার অবসান ঘটতে যাচ্ছে শিগগিরই। আর এটি বাস্তবায়নে ৯ দিন ‘ঈদ স্পেশাল ট্রেন’ পরীক্ষামূলকভাবে চলবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে কর্মরত চাঁদপুর ও বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে এ রুটে নতুন এক জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর রুটটিতে নতুন একটি ট্রেনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও মতামত তৈরি করছে রেলওয়ে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা নতুন রেক দিয়ে ট্রেনটি চলতি বছরের মধ্যে চালু করা হতে পারে। আর এ প্রক্রিয়া চূড়ান্তের লক্ষ্যেই এবার ঈদকে কেন্দ্র করে এ রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ‘স্পেশাল ট্রেন’ চালু হচ্ছে। ঈদের আগে ৪ দিন এবং পরে ৫ দিন এ রুটে ১ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। এটি হবে ১০ কোচের। ঈদযাত্রার সব টিকেটই করতে হচ্ছে অনলাইনে।
ব্রিটিশ আমলে তৎকালীন আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের অধীনে সিলেট-চাঁদপুর রুটে একটি ট্রেন চলাচল করত। ‘মেঘনা’ নামের ওই ট্রেনটি দিয়ে আসাম থেকে চা ও অন্যান্য পণ্য যেত চাঁদপুরে। সেখান থেকে পণ্যগুলো নৌপথে কলকাতা বন্দর হয়ে পৌঁছত ব্রিটেনে। ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর কালের পরিক্রমায় রেলের ওই রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ‘মেঘনা’ নামটি ঠিক রেখে ট্রেনটি চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দেয়া হয়। তাছাড়াও ২০০০ সালে চাঁদপুর থেকে লাকসামগামী একটি কমিউটার ট্রেনে সিলেটগামী যাত্রীদের জন্য বেশ কয়েকটি বগি সংযুক্ত ছিল। লাকসাম জংশনে পৌঁছার পর এসব কোচ জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে লিংক করা হতো। এতে করে অনেক আরামে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ঝামেলা ছাড়াই সিলেটে ভ্রমণ করতে পারতেন যাত্রীরা।
২০০০ সালে ২০ সেপ্টেম্বর মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে চাঁদপুর বড় রেল স্টেশনের বেশ কিছু অংশও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে বিলীন হওয়া স্থানটি বালু দিয়ে ভরাট করা হলেও লাকসাম হয়ে সিলেটে ট্রেন চলাচল পুনরায় চালু করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (মাঠ প্রশাসন সংযোগ অধিশাখা) উপ-সচিব মো. শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে একটি চিঠি দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন সাপেক্ষে দেয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘সিলেট বিভাগীয় শহরে কুমিল্লা জেলার প্রায় ৫০ হাজার ও চাঁদপুর জেলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত। সিলেট অঞ্চলের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও চাঁদপুর-কুমিল্লার অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। সিলেট থেকে কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় প্রতিদিন মোট ৩০টি বাস চলাচল করে। এ বাসগুলোর সেবার মান খুবই নিম্ন। সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলরত দুটি আন্তঃনগর ট্রেনে বৃহত্তর কুমিল্লার অধিবাসীদের জন্য স্বল্পসংখ্যক সিট বরাদ্দ রয়েছে, যা সিলেট বিভাগে বসবাসরত জনসংখ্যার তুলনায় খুবই কম। লক্ষ¥ীপুর জেলার অধিকাংশ মানুষ চাঁদপুর হয়ে সিলেট যাতায়াত করে। চাঁদপুর থেকে সিলেটে রেল চলাচল শুরু হলে বৃহত্তর কুমিল্লাসহ নোয়াখালী, লক্ষ¥ীপুর, বরিশাল, শরীয়তপুর, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলার মানুষ এ পথে সিলেট যাতায়াত করবে।’
চাঁদপুর রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার সোয়াইবুল সিকদারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, চাঁদপুর ও সিলেটের মধ্যে নির্বিঘেœ যাতায়াতের জন্য আন্ত:নগর ট্রেন চালু করা খুবই প্রয়োজন। আগের তুলনায় সিলেটগামী যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এটা এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের অনুরোধে চাঁদপুর-সিলেট রুটে স্পেশাল ট্রেন চলবে। ইতিমধ্যে এর আদেশ কপির চিঠি আমরা হাতে পেয়েছি। আশা করছি এরমধ্য দিয়ে চাঁদপুর রেলওয়ের আরো একটি শুভ সূচনা হতে যাচ্ছে।
সিলেটস্থ চাঁদপুর জেলা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিনয় চন্দ্র রায় বলেন, চাঁদপুর ও সিলেট রুটে আন্ত:নগর ট্রেন সার্ভিস চালু আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলের শত শত মানুষ চাঁদপুর থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহ পরান (রহ.)’র পবিত্র মাজার জিয়ারত করতে আসেন। এছাড়াও সিলেটের মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়া শিক্ষার্থী এবং সরকারি-বেসরকারি অনেক চাকুরিজীবীও রয়েছেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সিলেটে আসেন। কিন্তু সড়কপথে ভাঙাচোড়া এই রুটে চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় দিন দিন ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
তিনি জানান, স্পেশাল ট্রেন চালু করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে হয়ত আমরা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছি। এবার ঈদে ঘরমুখো এবং ঈদপরবর্তী কর্মমুখী মানুষের ঢলের চাপ অনেকটাই কম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
সিলেট রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, সিলেট ও চাঁদপুরের মধ্যে নির্বিঘেœ যাতায়াতের জন্য আন্ত:নগর ট্রেন চালু করা খুবই প্রয়োজন। কবে নাগাদ রুটটি পুরোপুরি চালু হবে নির্দেশনা না পেলে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছিনা। তবে, স্পেশাল ট্রেন চালু হওয়ায় আমরা আশাবাদী।