শহরমুখী জনস্রোত
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ৩:১৯:০৫ অপরাহ্ন
নেতা কে? বিবেকই তো তোমার নেতা। তোমার কর্তব্যজ্ঞানই তোমার নেতা। -কাজী নজরুল ইসলাম
থামছেনা শহরমুখী জনস্রোত। এই স্রোত ঠেকাতে না পারলে ২০৩০ সালে শহরে বসবাস করবে ৮ কোটি ৪০ লাখ মানুষ। যা জনগোষ্ঠীর ৪৫ শতাংশ। তখন জনসংখ্যা হবে ১৮ কোটি ৪০ লাখ। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে এই তথ্য। গবেষণায় বলা হয়, দেশে দ্রæত নগরায়ন হলেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে ধারণ করার জন্য নগরগুলো প্রস্তুত নয়। আর গ্রামিণ এলাকা থেকে শহরমুখী অভিবাসনের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামি দিনগুলোতে দেশের শহরাঞ্চল বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
গ্রামের কর্মহীন ও দরিদ্র লোকেরা কাজের সন্ধানে ভীড় জমায় শহরে। এটা একটি অতি পরিচিত বিষয়। প্রতিদিনই মানুষ গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছে শহরে। শুধু কাজের সন্ধানেই নয়, গ্রামীণ ‘সেকেলে’ জীবনধারা থেকে বেরিয়ে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন নাগরিক শহুরে জীবনকে বেছে নিচ্ছে অনেক অবস্থা সম্পন্ন পরিবার। দিনে দিনে গ্রামে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়তে থাকলেও থামেনি গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার প্রবণতা। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা তথা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য্য সুবিধা হাতের মুঠোয় পাওয়ার জন্যই ছুটছে মানুষ গ্রামের পৈত্রিক ভিটেমাটি ছেড়ে শহরে। আর শহরমুখী গ্রামীণ জনস্রোত বেড়ে যাওয়ায় শহর এলাকায় জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ছোট ছোট শহরগুলোতেও এখন গ্রামের মানুষের অভিবাসন হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী ছোট শহরগুলোর জীবন মানের তেমন উন্নয়ন ঘটেনি, অনেক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, প্রতি বছরই মানুষের শহরমুখী প্রবণতা বাড়ছে। তাদের মতে, প্রতি বছর হাজারে কমপক্ষে ৩০ জন শহরে পাড়ি জমাচ্ছেন। পাশাপাশি শহরের সঙ্গে গ্রামের মানুষের যোগাযোগও বাড়ছে প্রতিনিয়ত। গবেষকরা বলছেন, গ্রাম ছেড়ে শহরে যাবার প্রবণতা ছিলো মানুষের মধ্যে অতীতেও। তবে একেক সময় একেক কারণে এই প্রবণতা বাড়ছে। অতীতে কেবল জীবিকার সন্ধানে শহরে যেতো মানুষ, বর্তমানে মানুষ উন্নত জীবনযাপনসহ আরও অনেক কারণে শহরমুখী হচ্ছে। করোনা মহামারির ধাক্কায় শহরের অনেকেই কাজ ও চাকরি হারিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন গ্রামে। কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে না পেরে তারা আবার ফিরেছেন শহরে।
ছায়া সুনিবিড় সবুজ গ্রাম জনপদই বাংলাদেশ, নদী-হাওর-বিল, মেঠোপথ, দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মানে রাখালের বাঁশির সুর আর পাখির গানে উন্মাতাল সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা। কিন্তু চিরায়ত বাংলার এই দৃশ্য এখন পাল্টে যাচ্ছে। সময়ের দাবী পূরণ করতে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট গ্রামকে সাজানো হচ্ছে নতুন রূপে; তার ওপর ছড়ানো হচ্ছে বর্ণিল পলেস্তারা। গ্রামে সব ধরণের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু তারপরেও মানুষ গ্রাম ছাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে গ্রামীণ সব ধরণের উন্নয়ন-অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। ভাবতে হবে এ নিয়ে।