রমযানুল মুবারক আস্সালাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ৪:৪৮:০৮ অপরাহ্ন

শাহ নজরুল ইসলাম
আজ রোববার ১৭ রমযান, ১৪৪৪ হিজরি। রমযানের শেষ দশকে রাসূলুল্লাহ যেমন পরিশ্রম করতেন অন্য দশকে এমন পরিশ্রম করতেন না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লাম এর অনুসরণে আমাদের আকাবির ও আসলাফ এমনিতর মেহনত করেছেন। এর বহু নযীর আছে। আমাদেরও কর্তব্য হচ্ছে রমযানের গুরুত্ব তাৎপর্য অনুধাবন করে ইবাদতে মাশগুল থাকা। কোনভাবেই সময় নষ্ট করা ঠিক হবে না।
আজ বদর দিবস। আজ থেকে ১৪৪২ হিজরি বছর পূর্বে এই দিনে মহানবী সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালল্লাম এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের ৩১৩ জনের একটি মুসলিম দল বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। অপর পক্ষে সহ¯্রাধিক যোদ্ধা ও বিপুল অস্ত্র সম্ভারসহ মক্কার কুরাইশরা উপস্থিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে দীর্ঘ মুনাজাতের পর সেনা নায়করূপে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে আদেশ করলেন সাবধান কেউ আগে আক্রমণ করবে না। প্রতিপক্ষ আক্রমণ করলে প্রথমে তীর নিক্ষেপ করে প্রতিহত করবে। এখন তরবারী বের করবে না। সাবধান আমি নির্দেশ না দিলে আক্রমণ করবে না।
কুরাইশরাই আগে তীর নিক্ষেপ করল। নবীজী তখন সিজদারত । দু’আ শেষে মাথা তুলে বন্ধু আবু বকর (রা.) কে বললেন, সুসংবাদ আবু বকর শুকরিয়া আদায় কর। ইনশাআল্লাহ! আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত । বীর হামযা, ওমর ফারুক ও আলী (রা.) তখন নেতার আদেশ শুনবার অপেক্ষায়। নবীজী অগ্রসর হলেন। জিহাদের ফযীলত বর্ণনা করলেন এবং সকলকে প্রস্তুত হতে বললেন। যুদ্ধ বেধে গেল, বীর হামযা আলী কুরাইশদের বিরুদ্ধে সম্মুখিন হলেন। তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। কুরাইশ দলপতি উৎবা ইসলামের প্রধান শত্রু উমাইয়া ইবনে খালাফ ও আবু জেহেল নিহত হলো। যুদ্ধ শেষে ফলাফল দাঁড়াল যে, ৭০ জন কুরাইশ সৈন্য নিহত হলো। অপর ৭০ জন বন্দি হলো। ১৪ কুরাইশ নেতা যারা নবীজিকে হত্যা করার সংকল্প করেছিল তাদের এগার জন বদর যুদ্ধে মারা গেল। মুসলমানদের মধ্যে ১৪ জন সাহাবী শাহাদত বরণ করেন। যুদ্ধের ময়দানেও মহানবী সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনন্য আদর্শ স্থাপন করেন। তখনকার সময় যুদ্ধবন্দীদের হয় হত্যা করা হত নতুবা চিরদিনের জন্য বংশ পরম্পরায় দাস হিসেবে রেখে দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসব রীতিনীতি ভঙ্গ করে ঘোষণা করেন, ‘তোমরা বন্দিদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।’ আবু আযীয নামে এক বন্দী পরবর্তীতে বলেন, ‘মুহাম্মদ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশে মুসলমানরা আমাদের সাথে খুব ভালো ব্যবহার করেছিল। তারা আমাদের পেট ভরে খেতে দিতেন অথচ তারা কম খেতেন।’ স্যার উলিয়াম মুরের মত খ্রিস্টান লেখক লিখেছেন, ‘মুহাম্মদের আমলে মদীনাবাসীগণ এবং মুহাজিরগণ বন্দিদের সাথে বিশেষ ব্যবহার করেছিলেন। একজন বন্দি নিজেই বলেছেন,‘আল্লাহ মদীনাবাসীদের মঙ্গল করুন,‘তারা আমাদেরকে উটে ও ঘোড়ায় সওয়ার করে দিতেন আর নিজেরা পায়ে হেঁটে যেতেন। তারা আমাদেরকে ময়দার রুটি করে দিতেন আর নিজেরা খেজুর খেতেন।’
এ ছিল বদর যুদ্ধ বন্দিদের সাথে সদ্ব্যবহারের আংশিক বর্ণনা। আজকের পৃথিবীর শক্তিমানদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবন থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। আজ ইঙ্গ-মার্কিন চক্র মানবতার বিরুদ্ধে যে ঘৃণ্য অপরাধ সংঘটিত করে চলেছে, গণতন্ত্রের নামে, জনগণকে উদ্ধার করার নামে একটার পর একটা মুসলিম দেশ জাতি ও সভ্যতা ধ্বংস করছে। আবু গারিব ও আর কিউবার গুয়ান্তানামোর মতো জানা অজানা জঘন্যতম নির্যাতন সেলে যে অমানবিক নিপীড়ন অবর্ণনীয় নির্যাতন এবং মানবাধিকার লংঘন এর নজির তৈরি করেছে, তারা মুহাম্মদ সাল্লাাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শের কাছে বড়ই কাঙ্গাল। পৃথিবীর জারজ রাষ্ট্র ইসরাইলকে দিয়ে যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে এরও এক দিন শেষ হবে ইনশাআল্লাহ। পৃথিবী তাদের করুণ পরিণতিও দেখতে পারবে। কোন জালিমই মহান আল্লাহর পাকড়াও থেকে ছাড় পাবে না। আমাদের আফসোস মুসলিম উম্মাহর নেতৃবৃন্দের উপর যে আজো তারা উম্মাহর স্বার্থ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। তাদের গোলামী মানসিকতা শেষ পর্যন্ত পুরো উম্মতকে চরম ভোগান্তির শিকারে পরিণত করেছে।
আজকের এই দিনে মহান মাবুদের দরবারে বিশ্বের মজলুম মানুষের মুক্তি চাই। মজলুমানের নাজাত চাই। জালিমদের হেদায়ত চাই। হে আল্লাহ! মানবতার মুক্তি দিন।