টেস্টনির্ভর চিকিৎসা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৩০:৪৪ অপরাহ্ন
কথায় যদি নিজের নির্বুদ্ধিতা প্রকাশ পায়, তবে চুপ করে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। –চার্লস কিংসলে
আমাদের চিকিৎসা কি ‘পরীক্ষা নিরীক্ষা নির্ভর’ হয়ে গেছে? আগের দিনে কেবল রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকগণ রোগনির্ণয় করতে পারতেন। কিন্তু এখন চিকিৎসকগণ যন্ত্র ছাড়া কিছুই বলতে পারেন না। তাই বিশেষজ্ঞগণের বক্তব্য হচ্ছে আমাদের বর্তমান ডাক্তারদের চিকিৎসা বড় বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছে। আর এতে হিতে বিপরীত হয়ে যাচ্ছে; অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসাই বেড়ে চলেছে। কেন এমন মনে হয়? এই প্রশ্নটি বড় হয়ে আসে সামনে।
সব মিলিয়ে অনেকটা যন্ত্র নির্ভর চিকিৎসার দিকেই ঝুঁকছে আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা। কারণ এখন চিকিৎসায় যন্ত্রের ব্যবহার বেশি। অনেকে বলেন বড় বড় যন্ত্র ছাড়া তো এখন বড় ডাক্তারও হওয়া যায় না। সাধারণত চিকিৎসা নিতে গেলে প্রায়ই চিকিৎসকেরা রোগিদের নানা শারীরিক পরীক্ষা (টেস্ট) করতে দেন। আমরা অনেক সময়ই বুঝি না কেন এসব পরীক্ষা করা হচ্ছে? রোগের চিকিৎসায় এটি কতটা কাজে লাগবে? গুরুত্ব না বুঝে অনেক রোগি হয়তো ঠিকভাবে সব পরীক্ষা করেন না। অথচ আগের দিনে কেবল রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখেই চিকিৎসকদের রোগনির্ণয় করতে হতো। এখন নানা ধরণের পরীক্ষা ছাড়া সহজে ও নিখুঁতভাবে রোগনির্ণয় করা যায় না। আর রোগিদের অভিযোগ হচ্ছে, প্রায় সময়ই কারণে অকারণে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে রোগিদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়। তাছাড়া, প্যাথলজি থেকে কমিশন পাওয়ার লোভে অনেক সময় রোগিকে টেস্টের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা, এমন অভিযোগও রয়েছে। এক্ষেত্রে একটা বিষয় জরুরি যে, রোগিদের সঙ্গে অনেক ডাক্তারেরই ব্যবহারিক অ্যাপ্রোচ ভালো নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি যে রোগটা ধরতেই পারছেন না তা বলেন না, তার মতো করে তিনি ওষুধ বদলান আর টেস্টের পর টেস্ট চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে রোগিও চলে যায় অন্য ডাক্তারের কাছে।
ইতোপূর্বে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়বহুল টেস্ট দিয়ে রোগিদের হয়রানি না করতে চিকিৎসকদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছেন, চিকিৎসা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও সেবার মনোভাব নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করুন। অনুরূপ আহŸান জানান প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীও বিভিন্ন সময়। কিন্তু কে শুনে কার কথা। এই বিষয়ে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে, চিকিৎসকদের মানসিকতার পরিবর্তন। অর্থের ধান্দা নয়, সেবার মানসিকতা অর্জন করতে হবে।