রমযানুল মুবারক আস্সালাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ এপ্রিল ২০২৩, ৫:০০:৪৯ অপরাহ্ন
শাহ নজরুল ইসলাম
আজ সোমবার ১৮ রমযান, ১৪৪৪ হিজরী। রহমতের দশকের শেষ প্রান্তে আমরা উপনীত। মহান মাবূদ ও মালিক আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর দয়া ও অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য চেষ্টা তাদবীরে রত বিশ্বব্যাপী অসংখ্য নারী পুরুষ। তাদের তালিকায় আমার নাম আছে কি না সেটাই চিন্তার বিষয়। যে কারো অনুগ্রহ দয়া ও রহমত লাভের জন্য নিজের মাঝে উপযোগিতা লাগে। মহান আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভের জন্য ও নিজেকে এর উপযুক্ত করা প্রয়োজন। এজন্য নিজেকে আল্লাহর দরবারে সমর্পণ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, নিজ গুণাহ-খাতা ভুলচুকের নিঃশঙ্ক স্বীকারোক্তি ও লা-শরীক আল্লাহর নিরঙ্কুশ ইবাদতে মশগুল হওয়া প্রয়োজন।
সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী রা. বলেন, রাসূল সা. বলেছেন, রমযানূল মুবারকের প্রতি দিন ও রাতে মহান আল্লাহ জাহান্নাম থেকে অসংখ্য কয়দিকে মুক্তি দেন এবং প্রত্যেক মুসলমানের পক্ষ থেকে একটি করে দু’আ দিনে ও রাতে কবূল করেন। (আত-তারগীব) রোযাদারের দু’আ কবূল হওয়ার ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষত ইফতারের সময় দু’আ কবূল করা হয়। আমরা জানতে পারলাম যে মহান আল্লাহ এ মাসের দিনে ও রাতে আমাদের একটি করে প্রার্থনা কবূল করেন। আবেদন মঞ্জুর করেন। কিন্তু দু’আ যদি না করি তাহলে তো কবূলের প্রশ্নই আসে না। এ জন্য কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ প্রাপ্তির জন্য নিজেকে মেলে ধরা দরকার। ইফতার ও শেষ রাতে দু’আ, নামাযের পর ব্যক্তিগত দু’আ এছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে মাসনূন দু’আগুলোর প্রতি যতœবান হওয়া প্রয়োজন। একই সাথে আরবী দূ’আগুলোর অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করে মুনাজাতে হাত তুললে তা হৃদয় মনকে নাড়া দেয়, স্পর্শ করে অনেক বেশি। এ জন্য দু’আগুলোর অর্থ ও মর্ম জানার জন্য আমাদের চেষ্টা করা উচিত।
চিকিৎসাধীন রোগীদের পক্ষ থেকে অনেক প্রশ্ন আসে। আজ সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। এমন চিকিৎসা আছে যাতে রোযা ভঙ্গ হয় না। যেমন-মস্তিষ্ক অপারেশন করা। কানে ড্রপ, ঔষধ, তেল বা পানি ইত্যাদি ব্যবহার করা। কারণ কান থেকে গলা পর্যন্ত কোন কিছু যাওয়ার পথ নেই। আগের যুগে পথ আছে বলে ধারণা করা হত, তাই তখনকার উলামায়ে কিরাম রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বলেছেন। যে কোন ধরণের ইনজেকশন বা স্যালাইন পুশ করা। অবশ্য রোযার কষ্ট লাঘব করার জন্য ইনজেকশন বা স্যালাইন পুশ করা মাকরূহ। চোখে ঔষধ, সুরমা ও মলম ইত্যাদি ব্যবহার করা। যদিও গলায় ঔষধের স্বাদ অনুভূত হয় তথাপি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তাতে রোযা ভঙ্গ হবে না। নাকে বা মুখে অক্সিজেন নেয়া। এন্ডোসকপি করা। এতে চিকন একটি পাইপ মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে পাকস্থলি পর্যন্ত পৌঁছানো হয়। পাইপের মাথায় বাল্ব জাতীয় বস্তু থাকে। আর বাইরের প্রান্তে মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। সাধারণত এন্ডোসকপিতে নল বা বাল্বের সাথে কোন ঔষধ বা পানি ইত্যাদি কোন কিছু লাগানো হয় না। কিন্তু কোন মেডিসিন লাগানো হলে বা পাইপের ভিতর দিয়ে পানি ছিটানো হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। শরীরে রক্ত দেয়া বা শরীর থেকে রক্ত নেয়া। এনজিওগ্রাম করা। হার্টের রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়ার দিকে কেটে বিশেষ একটি ধমনীর ভিতর দিয়ে যা হার্ট পর্যন্ত পৌঁছে ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করাকে এনজিওগ্রাম বলে। ইনসুলিন নেয়া। পুরুষাঙ্গের ভিতরে বা যোনিদ্বারে কোন ঔষধ ব্যবহার করা। সিষ্টোসকপি করা অর্থাৎ পেশাবের রাস্তায় ক্যাথেটার লাগানো। কপার-টি ব্যবহার করা। ল্যাপারোস্কোপি-বায়োপসি করা হলে। মূলত এতে পেট ছিদ্র করে সিক জাতীয় একটি মেশিন ঢুকিয়ে পেটের ভিতরের কোন অংশ, গোশত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য বের করে আনা হয়। উল্লেখ্য যে সিকের মধ্যে কোন ঔষধ লাগানো থাকলে আর তা গলা থেকে মলদ্বার পর্যন্ত নাড়িভুড়ির যে কোন জায়গায় পৌঁছলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
সিরোদকার অপারেশন করা। অর্থাৎ অকাল গর্ভপাত রোধে জরায়ুর মুখের চতুর্দিক সেলাই করা।
আবার কিছু চিকিৎসায় আছে যাতে রোযা ভেঙ্গে যায়। যেমন-নাকে ড্রপ ব্যবহার করা। যে কোন ধরণের ঔষধ মুখ দিয়ে গিলে ফেলা। সালবুটামল, ইনহেলার ব্যবহার করা। শ্বাস কষ্ট দূর করার জন্য ঔষুধটি মুখের ভিতরে স্প্রে করা হয়। যা নিচের দিকে প্রবেশ করে। হ্যাঁ, যদি মুখে ইনহেলার স্প্রে করার পর না গিলে থুথু দিয়ে তা বাইরে ফেলে দেয়া হয় তবে রোযা ভঙ্গ হবে না। কোন কোন চিকিৎসক বলেন, সাহরিতে ইনহেলার নেয়ার পর সাধারণত ইফতার পর্যন্ত ইনহেলার নেয়ার প্রয়োজন হয় না। অবশ্য যদি কারো শ্বাসকষ্ট এমন মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, ইনহেলার ছাড়া ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না, তবে সে ইনহেলার ব্যবহার করবে এবং পরবর্তীতে ঐ রোযা কাযা করে নিবে। পরে কাযা সম্ভব না হলে ফিদিয়া দিবে। নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করা। এটা এ্যারোসল জাতীয় একটা ঔষধ যা হার্টের রোগীদের জিহবার নিচে দুই/এক ফোটা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখা হয়। যার কিছু অংশ গলায় চলে যাওয়ারসমূহ সম্ভাবনা থাকে। অবশ্য কেউ যদি ঔষধটি ব্যবহারের পর না গিলে থুথু দিয়ে ফেলে দেয় তাহলে তার রোযা ভঙ্গ হবে না। এম.আর করা অর্থাৎ গর্ভধারণের পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে বিশেষ এক ধরণের সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে জীবিত কিংবা মৃত ভ্রুণ বের করে নিয়ে আসা। এর মাধ্যমে ঋতু¯্রাব বন্ধ থাকার পর তা চালু হয়ে যায়। ডি এন্ড সি করা অর্থাৎ গর্ভ ধারণের আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্যে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে জীবিত বা মৃত বাচ্চা বের করে নিয়ে আসা। সাপজিটরি-ভোল্টালিন ব্যবহার করা, এটা মলদ্বারে ব্যবহারের একটি ঔষধ। ডুশ নেয়া। (মুফতী দেলাওয়ার হোসাইন, ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা থেকে সংক্ষেপিত)
এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে বলি, যারা ধূমপান ও তামাক ব্যবহার করেন তাদের এ বদ অভ্যাস থেকে নিঃস্কৃতির সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে রমযান মাস।