হারিয়ে যাচ্ছে বনভূমি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ৫:১৩:২০ অপরাহ্ন
যারা বুদ্ধি ও যুক্তিতে নয়, গলাবাজি করে জিততে চায়, তারা বর্বর। -আবুল ফজল
বনভ‚মি হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি বনভূমি বিলুপ্ত হচ্ছে মানুষের আগ্রাসি থাবায়। সরকারের সংরক্ষিত বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে, বেদখল হচ্ছে। বনভূমির জমিতে তৈরি হচ্ছে রাস্তাঘাটসহ নানা ধরনের স্থাপনা। সরকারের শত চেষ্টার পরও বনভূমি বা বনাঞ্চলের পরিমাণ বাড়ানো যাচ্ছে না; বরং দিন দিন কমে আসছে বন-জঙ্গল। সারা দেশে সরকারি হিসেবে ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার সাতশ’ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি ৩৩ লাখ ১১ হাজার একর। এই সংরক্ষিত বনভূমির প্রায় দেড় লাখ একর বেদখল হয়ে রয়েছে।
দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বনাঞ্চল। সরকারি বনাঞ্চল ছাড়াও রয়েছে ব্যক্তি মালিকানায় বনাঞ্চল। বনাঞ্চল কেউ তৈরি করেনি; এগুলো গড়ে ওঠেছে প্রাকৃতিকভাবে। অতীতে গ্রামাঞ্চলে চোখে পড়তো বিস্তীর্ণ সবুজ বনাঞ্চল। শহর ছাড়িয়ে একটু বের হলেই ছিলো সবুজের হাতছানি। কিন্তু এখন নগর সভ্যতা খেয়ে ফেলছে আমাদের মনোরম সবুজ বন-বনানি। জীবনের প্রয়োজনে মানুষ বন-জঙ্গল ধ্বংস করে সেখানে গড়ে তুলছে আবাসন কিংবা কৃষিজমি। দেখা গেছে, দেশের আটশ’ ২০ একরের বেশি সংরক্ষিত বনের জমিতেই গড়ে ওঠেছে অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা। এছাড়া, ১৪ হাজার একরের বেশি সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে হাট-বাজার-রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়েছে। আর ঘরবাড়ি তৈরি ও কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করা হয়েছে এক লাখ ২৪ হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি। সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক ব্যাপার হলো, বিভিন্ন সময়ে সিএস রেকর্ডভূক্ত বনভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। অনেক বনভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়েছে। এছাড়া, বনভূমির মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ বিশেষ করে সড়ক নির্মাণের ফলে সড়কের দুই পাশে জবরদখলের প্রবণতা বেড়েছে। বিজ্ঞানিদের অভিমত হচ্ছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের আয়তনের ২৫ শতাংশ জমিতে গাছপালা থাকা জরুরি। কিন্তু আমাদের দেশে তার অর্ধেক জমিতেই নেই বৃক্ষসম্পদ। যা-ও আছে তা উজাড় হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বর্তমানে দেশে বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ মোট ভূমির ২২ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং বনাচ্ছাদন ১৪ শতাংশ। ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের বৃক্ষাচ্ছাদন ২৫ শতাংশে এবং বনাচ্ছাদনের পরিমাণ মোট ভূমির ১৬ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বৃক্ষসম্পদ রক্ষায় সাধারণ মানুষ যেমন সচেতন নয়, তেমনি সরকারও। অনেক সময় সরকারি বনভূমির রক্ষকরাই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে। এই প্রবণতা রোধে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে সরকারকে।