নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা বৃদ্ধি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ৬:০৩:২৩ অপরাহ্ন
ফের তালিকা করছে এসএমপি \ সন্তানদের গতিবিধির প্রতি নজর রাখার পরামর্শ সমাজ বিজ্ঞানীর
আনাস হাবিব কলিন্স :
অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর নতুন কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা করছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি তাদের নজরদারিতে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশী টহলও বাড়ানো হয়েছে।
এসএমপি’র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) সুদ্বীপ দাস জানান, এসএমপি’র কমিশনার হিসেবে ইলিয়াছ শরীফ যোগদান করেই এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আলোকে নতুন করে কিশোর গ্যাংয়ের তালিকা করছেন বিভিন্ন বিটের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি পুলিশকেও কাজে লাগানো হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স বলেও জানান তিনি।
এলাকাভিত্তিক গড়ে ওঠা কিশোর গ্যাংয়ের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় নগরবাসী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নগরীর রিকাবীবাজার, শাহী ঈদগাহ, শিবগঞ্জ লাকড়িপাড়া মায়া টাওয়ার সংলগ্ন এলাকা, মনোয়ার সিএনজি পাম্পের সামনে, লামাবাজার, মির্জাজাঙ্গল, কুয়ারপার, ওসমানী মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, শামীমাবাদ, রিকাবীবাজার ও উপশহর এলাকা কিশোর গ্যাং সদস্যদের অন্যতম আস্তানা। ওই এলাকাগুলোতে কিশোর গ্যাংয়ের আড্ডা বসে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই থেকে শুরু করে সব ধরণের অপরাধের সাথে জড়াচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের হাতে বিভিন্নভাবে নাজেহাল হতে হচ্ছে প্রতিবাদকারীরা। গত বছর র্যাবের অভিযানে আলোচিত কিশোর গ্যাং ‘জিসান গ্রæপের‘ ২ সদস্য আটক হলে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত কিছুটা হ্রাস পায়। এখন ফের তাদের অপতৎপরতা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
পত্র-পত্রিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, গত ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ব্যস্ততম রিকাবীবাজার পয়েন্টে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যের হাতে ছুরিকাঘাতে আহত হন দুই ছাত্রলীগ কর্মী। গত ২৯ মার্চ চারাদিঘীরপাড়ে স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ৩১ মার্চ রাতে কোম্পানীগঞ্জে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে যুবক আহত হন। এ ঘটনায় একজনকে আটক করে পুলিশ। এছাড়া, গত ২৭ মার্চ চুনারুঘাটে স্বপন মিয়া নামে ১০ বছরের শিশুকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। এ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য আটক হয়।
সূত্র মতে, কিশোর গ্যাং সদস্যদের কেউ স্কুলের গন্ডি পেরিয়েছে। কেউ চালাচ্ছে টমটম অটোরিক্সা আবার কারো বাবার আছে অর্থ সম্পদ। টাকা হাতে থাকায় তারা গ্রæপ তৈরি করে দাপট দেখান। বিভিন্ন বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করে ছাত্রীদের উত্যক্ত করা, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক সেবন, ছিনতাই, তীর জুয়া, মারামারি এসব কাজ এখন কিশোর গ্যায়ের মূল নেশা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় উঠতি বয়সের কিশোরেরা সহিংসতাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা আইনের আওতায় এলেও আড়ালেই থেকে যান তাদের নেতৃত্ব দানকারীরা।
সূত্র জানায়, গত বছর এসএমপি’র ৬টি থানা এলাকায় বেপরোয়া এই কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা থামাতে একটি তালিকা তৈরী করা হয়। এ তালিকায় ২২০ জন তরুণের নাম ছিল। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। এবার ফের নতুন তালিকা করা হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, শুরুতেই কিশোর অপরাধীদের অপতৎপরতা রোধ করতে না পারলে এর খেসারত দিতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃংখলা বাহিনীর দ্রæত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা সিলেটের ডাককে জানান, রেঞ্জ পুলিশও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। ইতোমধ্যে সকল থানার অফিসার ইনচার্জদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিনা চৌধুরী বলেন, কিশোর অপরাধ নির্মূলে অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সন্তানেরা কোথায় যায় এবং অনলাইনে তারা কোন বিষয়ে যুক্ত হচ্ছে-সেটি নজরদারীতে রাখার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেন তিনি।